সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ– গত সপ্তাহেই বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের কারণে পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টি হয়। তার ফলে মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া শুরু করে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। সেই জলে প্লাবিত হয় দমোদরের নিম্ন অববাহিকা। পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি, হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। পরে জল ছাড়া কমালেও আবারও বৃষ্টি হওয়ায় জল ছাড়া অব্যাহত রেখেছে ডিভিসি।
প্রসঙ্গতঃ, ডিভিআরআরসি থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ দপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও ডিভিসি বা দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ দপ্তরের প্রধান সচিবের পদত্যাগ করার কথা রবিবার জানানো হয়েছিলো। তারপরে পরপর দুদিন সোমবার ও মঙ্গলবার মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ অনেকটাই কমিয়েছিলো ডিভিআরআরসি। কিন্তু বুধবার মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ১ হাজার কিউসেক জল বেশি ছাড়া হয়েছে বলে জানাল ডিভিআরআরসি বা দামোদর ভ্যালি রিজার্ভার রেগুলেশন কমিটি। দুটি জলাধার থেকে এদিন সবমিলিয়ে ২৬ হাজার ৫০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। মাইথন থেকে ১৬ হাজার ৫০০ ও পাঞ্চেত থেকে ১০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ডিভিআরআরসির সদস্য সচিব শশী রাকেশ জানান, এই মুহুর্তে মাইথনে ৪৮৩ ও পাঞ্চেতে ৪১৩ ফুটে জলস্তর রয়েছে।
দামোদর বরাকর উপত্যকা ও তেনুঘাট এলাকায় গত মঙ্গলবার তেমন বৃষ্টি না হলেও বুধবার দুপুর পর্যন্ত পাঞ্চেত এলাকায় বৃষ্টি হয় ১০ মিলিমিটারের মতো । যদিও বৃহস্পতিবার এইসব এলাকায় ভারী বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। হাওয়া অফিস জানিয়েছে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের উপরের তৈরি হওয়া নিম্নচাপটি অন্ধ্রপ্রদেশ এবং দক্ষিণ ওড়িশা উপকূল ধরে ক্রমশ পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে। এর ফলে বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও পশ্চিম বর্ধমানে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এদিকে বৃষ্টিপাত বেশি হলে, দুই জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কি হবে, তা পরে আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলে, ডিভিআরআরসি সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে জল ছাড়া নিয়ে রাজ্য-কেন্দ্র তরজার মধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। সংস্থার প্রত্যেক কর্মীকে এক দিনের বেতন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। ডিভিসির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার রাজেশ কুমার এই মর্মে একটি বার্তা প্রকাশ করে জানান, ডিভিসির যে কর্মীরা আয়করের আওতায় রয়েছেন, তাঁদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন থেকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে এক দিনের বেতন কাটা যাবে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দানের সিদ্ধান্তটি কর্মীদের ঐচ্ছিক পদক্ষেপ বলেও জানানো হয়েছে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ কর্মীদের উদ্দেশে ওই বার্তায় উল্লেখ করেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের একাধিক অঞ্চল বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রচুর মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ন্যূনতম প্রয়োজনের জিনিসটুকু তাঁদের কাছে নেই। এই কঠিন সময়ে, তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া আমাদের সমবেত দায়িত্ব।”