রামকৃষ্ণ চ্যাটার্জ্জী, আসানসোল -: ২৫ দিনের একটি শিশু কন্যার প্রাণঘাতী কনজেনিটাল ডায়াফ্র্যাগমাটিক হার্নিয়া অর্থাৎ সিডিএইচ – এর অস্ত্রোপচার হলো আসানসোলের বেসরকারি হেলথওয়ার্ল্ড হাসপাতালে। একদল দক্ষ শিশু বিশেষজ্ঞ এই জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। জানা যাচ্ছে অস্ত্রোপচারের পর শিশুটি সুস্থ আছে এবং তাকে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা আছে।
শিশুটির গুরুতর শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দ্যাখা দিলে তার অভিভাবকরা তাকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করে। একঝলকে শিশুটিকে দেখেই হাসপাতালের অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞরা পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে তার চেস্ট এক্স-রে, সোনোগ্রাফি সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন যে শিশুটি বিরল সিডিএইচে আক্রান্ত। এরফলে তার যকৃত বুকে উঠে এসে ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডে চাপ সৃষ্টি করছিল। যারজন্য শিশুটি শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিল।
শিশুটির শারীরিক অবস্থা বুঝে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। জটিল এই অস্ত্রোপচারের জন্য দক্ষ শিশু বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়। উচ্চ প্রশিক্ষিত অ্যানেস্থেসিয়া টিমের উপস্থিতিতে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে শিশুটির সফলভাবে অস্ত্রোপচার করা হয়। হাসপাতালের নিওনাটোলজি টিম শিশুটির প্রতি তীক্ষ্ম নজর রাখতে শুরু করে। ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা শিশুটির অবস্থার উন্নতি হতে থাকে এবং সে আপাতত স্থিতিশীল আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশাবাদী শীঘ্রই সে সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ হয়ে উঠবে। মা-বাবা ফিরে পাবেন তাদের আদরের সন্তানকে। এর আগেও বিভিন্ন জটিল রোগের ক্ষেত্রে এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং স্থানীয়দের আশ্বস্ত করেছে।
প্রসঙ্গত, সিডিএইচ হলো একটি জন্মগত ত্রুটি। ভ্রূণের বিকাশের সময় এটা ঘটে। পেটের গহ্বরকে বুকের গহ্বর থেকে আলাদা করে রাখা ডায়াফ্রাম সুগঠিত না হওয়ার জন্য পেটের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন পাকস্থলী, অন্ত্র, যকৃত, পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয়, প্লীহা ইত্যাদি ভ্রূণের মধ্যে চলে আসে এবং হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসে চাপ সৃষ্টি করে। আক্রান্ত শিশু ছোট ও অনুন্নত ফুসফুস নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগতে থাকে। সাধারণত একলক্ষ শিশুর মধ্যে চল্লিশ জন শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে জন্মলাভ করে। গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে এই রোগ সনাক্ত করা হয়।
হেলথওয়ার্ল্ড হাসপাতালের সিএমডি ডা. অরুণাংশু গাঙ্গুলি বললেন, এই অস্ত্রোপচারটি ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। আমাদের হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞরা সবার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন এবং শিশুটিকে সুস্থ করে তুলেছেন। তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন এই হাসপাতাল শিশুদের এই ধরনের জটিল রোগের পরিষেবা দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এই সফল অস্ত্রোপচারের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককে তিনি সাধুবাদ জানান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আশাবাদী, এই ধরনের বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য অন্যত্র যেতে হবেনা।
একান্ত আলাপচারিতায় বীরভূমের রামপুরহাট হাসপাতালের বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুতনু চ্যাটার্জ্জী বললেন, সিডিএইচ একটি বিরল রোগ। যেভাবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা শিশুটিকে সুস্থ করে তুলেছেন তাতে কোনো প্রশংসা যথেষ্ট নয়। এই সফল চিকিৎসার জন্য এই রোগে আক্রান্ত শিশুর অভিভাবকরা অনেকটা নিশ্চিত হবেন।