নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ– কল-করাখানায় ঘেরা শিল্পনরগী দুর্গাপুরে বায়ু দূষণের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। বারংবার শহরের কলকারখানাগুলির বিরুদ্ধে বাতাষে বিষ ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। কিন্তু গত মঙ্গলবারের শহরের বাতাসের গুণমান সূচক দেখে আঁতকে উঠছে শহরবাসী। যা দিল্লির দূষণকেও টেক্কা দিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য দূষণের জেরে বায়ুর গুণগত মাণ অত্যন্ত খারাপ থাকায় রাজধানীতে বন্ধ রয়েছে স্কুল কলেজ। অন লাইনে চলেছে ক্লাস ও অফিসের কাজ। দূষণ নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ।
বাতাসের গুণমান সূচক ০-৫০ হলে তা ভাল। ৫১-১০০ সন্তোষজনক। সূচক ১০১-২০০ হলে তা মাঝারি মানের। সূচক ২০১-৩০০ হলে খারাপ এবং ৩০১-৪০০ হলে খুব খারাপ । গত মঙ্গলবার শহরের বাতাসের গুণমান সূচক ছিল ৩৭৭ থেকে ৩৮২। ওই দিন দিল্লির বাতাসের গুণমান সূচক ছিল ২৯৫ থেকে ৩৭৭এর মধ্যে। যা জেনে আঁতকে উঠে শহরবাসী। যদিও গত দুদিনে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নত হয়েছে, এদিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বাতাসের গুণমান সূচক ৩০০ অনেক নিচে রয়েছে বলে জানান দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওএসডি (অফিসার অফ স্পেশালঃ ডিউটি) সুব্রত ঘোষ।
অন্যদিকে শহরের বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা শুরু হয়েছে প্রশাসনে। শুক্রবার রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওএসডির উপস্থিতিতে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের আধিকারিক, দুর্গাপুর নগর নিগমের আধিকারিক, মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিক ও বিভিন্ন কারখানার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। ডিপিএল সহ একাধিক কারখানার বিরুদ্ধে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছিল। জানা গেছে এদিনের বৈঠকে ডিপিএল সহ আসানসোল ও দুর্গাপুরের একাধিক কারখানাকে সতর্ক করা হয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে।
বৈঠক শেষে ওএসডি সুব্রত ঘোষ এদিন বলেন, “ভবিষ্যতে, ডিপিএলের ছাই কারখানা থেকে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকা না দেওয়া হলে কড়া ব্যাবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ফাইন করা হবে। প্রত্যেক কারখানাকে ওয়াটার স্প্রিংলার ব্যবহার করে কারখানার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রাস্তায় রাস্তায় জল দিতে হবে। সমস্ত কারখানাকে সবসময়ই ইউএসপি চালাতে হবে। কারখানাগুলোর গতিবিধি নজরে রাখতে দুর্গাপুর মহকুমা প্রশাসন, আসানসোল দুর্গাপুরে উন্নয়ন পর্ষদ, দুর্গাপুর নগর নিগম সহ সমস্ত কারখানাকে সঙ্গে নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করা হয়েছে। কারখানাগুলিকে জিপিএস ক্যামেরা ব্যবহার করে রাস্তায় রাস্তায় জল দেওয়ার প্রতিদিনের ছবি গ্রুপে পাঠাতে হবে। গ্রুপের আধিকারিকরা অভিযোগ পেলেই অভিযান চালাবেন। ভবিষ্যতে যাতে বাতাসের গুণমান সূচক নিয়ন্ত্রণে থাকে সেদিকেও আমাদের তৎপরতা থাকবে।”
তবে শুধু কলকারখানা নয়, শহরের দুষণের জন্য পার্শ্ববর্তী জেলা ঝাড়খণ্ডের পরিবেশকেও দায়ী করেছেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ওএসডি সুব্রত ঘোষ। তিনি জানান, শীতকালে উত্তুরে হাওয়ার সঙ্গে ঝাড়খণ্ডের দূষণ বাংলায় ঢোকে। আইআইটি দিল্লির সমীক্ষায় উঠে এসেছে বিষয়টি। তাই এই দূষণকে রুখতে ঝাড়খণ্ড বাংলা সীমান্তে তিনটি স্তরে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পরিবেশ দপ্তর মিলে এই গাছ লাগাবে। এই গাছের সারি আগামীদিনে শহরবাসীকে দূষণের হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।