নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ– দুর্গাপুরের বাসিন্দা এক ব্যক্তির মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বাবদ ঘাতক গাড়ির ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে আড়াই কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল দুর্গাপুরের লোক আদালত। এই নির্দেশ বলতে গেলে দেশে নজির বিহীন। যা লোক আদালতের ক্ষেত্রে দেশে সর্বকালীন রেকর্ড। আবার ঘাতক গাড়ির ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তরফে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত দেশে এই প্রথম এই পরিমাণ অর্থ (ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি) দুর্ঘটনায় নিহত কোন ব্যক্তির পরিবারকে প্রদান করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত ২০১২র ১৭ জানুয়ারি দুর্গাপুরের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আশীষ কুমার বড়ালের উড়িষ্যার ঢেঙ্কানল জেলার বালিমি থানার অন্তর্গত এলাকায় ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। আশীষবাবু উড়িষ্যার ভুষন স্টিল লিমিটেডে একজন প্রজেক্ট ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি অন্যদের সাথে কোম্পানির গাড়িতে করে ফিরছিলেন, পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তাদের গাড়ি। এরপরই ঘাতক গাড়ির ইন্সুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতি পূরনের মামলা দায়ের করেন আশীষবাবুর স্ত্রী সুশ্বেতা বড়াল ও নাবালিকা কন্যা প্রচেতা সহ মা শিখারানী বড়াল পিতা অনন্ত কুমার বড়াল।
এদিকে মামলা চলাকালীনই ভুষন স্টিল লিমিটেডের হাত বদল হয়। কোম্পানিটি অধিগ্রহন করে টাটা স্টিল লিমিটেড। যার ফলে মামলায় প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র অমিল হয়ে পড়ে। যদিও মামলা কারীদের নিযুক্ত আইনজীব আইয়ুব আনসারীর পারদর্শীতায় উক্ত প্রায়োজনিয় কাগজপত্র জোগাড় হয়। কিন্তু মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় আগের আশীষ বাবুর পিতা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত মে মাসে মারা যান। ওনার মাও লিভারের জটিল রোগে আক্রান্ত। এই অবস্থায় আইনজীব আইয়ুব আনসারী লোক আদালতের মাধ্যমে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির আবেদন জানান।
দীর্ঘ দিন ধরে জমে থাকা মামলার নিষ্পত্তির জন্য শনিবার দেশ জুড়ে বসেছিল লোক আদালত। সেই মতো দুর্গাপুর মহকুমা আদালতেও লোক আদালতের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে দুর্গাপুর মহকুমা বিচারক মোঃ রফিক আলমকে নিয়ে গঠিত জাতীয় লোক আদালতের বেঞ্চ, গাড়ি দুর্ঘটনায় এই নজির বিহীন (২.৫কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ) রায় দেন। যা আগামী একমাসের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে। অনাদায়ে ৬ শতাংশ হারে সুদ প্রদানের আদেশও দেন বিচারক। সুদ এড়ানোর লক্ষ্যে, আদেশের এক ঘণ্টার ভেতর নিহতের পরিবারকে তাদের প্রাপ্য মিটিয়ে দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত বীমা সংস্থায়।
এদিন মামলাকারীদের আইনজীব আইয়ুব আনসারী বলেন, “অর্থ কখনও কোনো ক্ষেত্রে মনুষের পরিপূরক হতে পারে না ঠিকই, তবে এই আর্থিক ক্ষতিপূরণ সহায়সম্বলহীন পরিবারের কিছুটা সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।”