eaibanglai
Homeএই বাংলায়এক দত্তর বেয়াড়া ছেলে মানুষ করে এবার গুনাগার দেবে কবি দত্তর এডিডিএ

এক দত্তর বেয়াড়া ছেলে মানুষ করে এবার গুনাগার দেবে কবি দত্তর এডিডিএ

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- এবার কি ঘরবাড়ি বিক্রি বাট্টায় সমস্যায় পড়া প্রোমোটারদের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে চলেছে এডিডিএ? নাকি শহরের জন্য এক নিয়ম আর এ শহরের দত্তবাবু হলে নিয়ম আরেক রকম? দুর্গাপুরকে ধীরে ধীরে ‘দত্তনগর ‘ করার লক্ষ্যে এক দত্ত আরেক দত্তর সমস্যায় পড়া একটি আবাসন প্রকল্পকে দত্তক নিয়ে রাজ্য সরকারি সংস্থার স্বার্থ রক্ষার চেয়ে তার ‘ভাই বন্ধুদের’ স্বার্থকেই বড় করে দেখতে গিয়ে আসলে সরকারেরই বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন সুকৌশলে – এই নিয়ে জোরদার চর্চা চলছে এখন দুর্গাপুর জুড়ে।

শহরের সিটি সেন্টার এর উল্টোদিকে জাতীয় সড়কের পাশে একটি আবাসন প্রকল্প ইদানিং দুর্গাপুরের প্রশাসনিক মহলে কৌতূহল এবং অস্বস্তির বিষয়। কিন্তু ঠিক কি ঘটেছে ওই প্রকল্পে ?

দুর্গাপুরের মোটরসাইকেল ব্যবসায়ী এক দত্ত পরিবারকে সিটিসেন্টারের পুকুর পাড়ে বনদপ্তরের জমি আবাসন ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ার জন্য বাম আমলে দিয়ে একবার বিতর্কে জড়িয়ে ছিল আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ। তারপর রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর ওই প্রকল্পটি ঘিরে বহু চাপান উতর এবং রাজনৈতিক বিতর্ক ছড়ায়। কারণ – রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর নতুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ধরেই নেয় সিপিএম ঘনিষ্ঠ ওই ব্যবসায়ী পরিবারকে স্বজনপোষণের লক্ষ্যেই সরকারি জমিটি পাইয়ে দিয়েছিল এডিডিএর তৎকালীন বাম বোর্ড। যা নিয়ে বিতর্ক বাঁধে। হয় আদালতে আইনি অভিযোগও। তারপর কোন এক জাদু বলে অভিযোগকারী হঠাৎই তুলেও নেন সেই অভিযোগ।

এই সময় আরেক জাদু বলে রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের সাথে নতুন করে গাঁটছড়া বাঁধে দুর্গাপুরের বেনাচিতির বিতর্কিত ওই দত্ত ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যেই জিটি রোডের বিপরীতে পলাশডিহা এলাকায় ওই পরিবারকেই মোটর গাড়ির শোরুমের জন্য বরাদ্দ করা জমি রুমাল থেকে বেড়াল হয়ে গেল কেউ কিছু ভালো করে বুঝে ওঠার আগেই। ওই জমিতে ‘দত্ত টাওয়ার’ নামে বড় বাজেটের একটি আবাসন প্রকল্প গড়ার কাজও শুরু হয়ে যায়। সেখানে ৯৬ টি ফ্লাট বাড়ির আবাসনটি এখন মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। অথচ সরকারের জমি ব্যবহার, উন্নয়ন, সংরক্ষণ, পরিকল্পনা মোতাবেক ওই জমিটি সংরক্ষিত ছিল শুধুমাত্র বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্যই।

কিন্তু, সেই বাম জামানা থেকেই দুর্গাপুরের দত্তদের জন্য নিয়ম আলাদা রকম। আগের মতোই এখনো চুপি চুপি ফাইল চালাচালি হয় আর দত্তদের পকেট গরম হয়। এটাই এখন এখানকার রেওয়াজ। এ পর্যন্ত ঘটনা ছিল একরকম।

এদিকে, ঘটনা দ্রুত বদলাতে শুরু করে অন্যভাবে। “স্রেফ ওই দত্ত পরিবারটিকে তোষণের জন্য এবার এডিডিএর প্রশাসনিক পদ আলো করে বসে থাকা আরেক দত্ত অতীতের সব নজির পাল্টে ফেলে সৃষ্টি করলেন আরেক নজির,” বললেন দুর্গাপুর চেম্বার অফ কমার্স এর এক বলিষ্ঠ সদস্য। তার কথায়, “একবার খোঁজ নিন সাম্প্রতিক বোর্ড মিটিংয়ে ওই দত্তদের বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতে কি কি করলো এডিডিএ।”

পলাশডিহার বিতর্কিত ওই আবাসন প্রকল্পে যারা যারা ফ্লাট কিনেছিলেন ব্যাংক ঋণের ব্যাপারে তাদের নাকি মর্ডগেজ সংক্রান্ত সমস্যার বারবার পড়তে হচ্ছিল। কারণ এডিডিএ জমি দিয়েছে দত্ত মোটরসকে, সেখানে আবাসনের আবাসিকরা ওই প্রকল্পের সাবলিজ পেয়েছেন দত্ত মোটরস থেকে। তাই একজন লিজ হোল্ডার আইনত কোন ব্যাংক ঋণের জন্য সাবলিশ হোল্ডারকে মর্ডগেজের অনুমোদন দিতে পারে কি ? – এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিনকে দিন। সমস্যায় পড়া ভুক্তভোগীরাই এই নিয়ে সরবও হতে শুরু করেন। অনেককেই আবার প্রভাবশালী প্রোমোটারের চাপে মুখে কুলুপ এঁটে কিল হজম করে বসে পড়েন।

এদিকে ওই ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি প্রকল্পটির প্রোমোটার দত্ত মোটরস নিজেও নাকি আলাদা রকম সমস্যায় পড়ে। কেমন সমস্যা? জানতে চাইলে এডিডিএর একটি পদস্থ সূত্রে জানা যায়, ওদের ওই প্রকল্পটিতে দুটি তলা সংরক্ষিত রয়েছে বাণিজ্যিক তল হিসেবে, যা ওই সংস্থা অন্য কোন কোম্পানিকে ভাড়া দিতে চায়। কিন্তু, তাতে আবার সমস্যাটা কিসের? ভাড়াতো সব প্রকল্পেই মালিকেরা দিচ্ছে সর্বত্র। “না। ওখানে যে বা যারা ভাড়া নিতে আসছেন তারা সাবলিজ হোল্ডার হওয়ার মর্ডগেজ পেতে নাকি সমস্যায় পড়ছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক আপত্তি তুলেছে। তাই এবার সরকারি সংস্থা এডিডিএ যদি প্রকল্পের দায় মাথা পেতে নিতে চায়, তাহলে ওই সমস্যাটা আর থাকবে না। দায় ঝেড়ে এক ধাক্কায় চাপমুক্ত হতে পারবে দত্ত মোটরস,” বলে দাবি ওই পদস্থ সূত্রটির।

সমস্যায় পড়া একটি হাউসিং প্রকল্পে এডিডিএ’র নতুন মনিবের বন্ধুদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিয়ম-কানুন বদলে সরকারি সংস্থা তাহলে এভাবে এক গলা জলে নেমে পড়ল ? এটা কি নিয়ম-নীতি বহির্ভূত নয় ? এটা কি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বাস ভরসা নিয়ে একটি সংস্থার বর্তমান প্রশাসকদের ছেলেখেলা করা নয় ? – এমন প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। সংস্থার মাথায় বিরাজমান চেয়ারম্যান কবি দত্ত ‘এই বাংলায় ডট কম’ কে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন – এসব প্রশ্নের কোন জবাব তিনি দিতে বাধ্য নন। সরকারি পদে আছেন তিনি। অসীম ক্ষমতার চূড়ায় বসে জবাব দেওয়ার না দেওয়ার দায়িত্ব তার। প্রশ্ন কিন্তু উঠবেই, কারণ দত্ত মোটরসের কর্ণধাররা কবি দত্তর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের লোকজন। চেম্বার অফ কমার্সের ঐ সূত্রটির দাবি, “কৌশল করে দত্ত মোটরসের চন্দন দত্তকে বণিক সভার শীর্ষ পদে বসিয়েছেন কবি। তাদের অবাধ মেলামেশা শহরের সর্বজন বিদিত।” এবার দেখা যাক পলাশডিহার ঐ দত্ত টাওয়ার্সের জন্য ঠিক কোন কোন বাড়তি সুবিধা হঠাতই মাথায় পেতে নিল এডিডিএ?

গত ১৮ ই মার্চ এডিডিএর ১৫৬ তম বোর্ড মিটিং এর নথিকৃত তথ্য মোতাবিক, বেনাচিতির দত্ত মোটর স্বেচ্ছায় বিতর্কিত ওই প্রকল্পটির যে যে দায়ভার এ ডি ডি এর ঘাড়ে চাপিয়ে দায় মুক্ত হল সেইগুলি এই রকম:

ক) এবার থেকে প্রকল্পটিতে কাউকে সরাসরি লিজ দেবে স্বয়ং এডিডিএ। দত্তরা নয়।

খ) ঋণ ও লিজ হোল্ডারের স্বত্তা হস্তান্তর করার অধিকার এডিডিএ’র ।

গ) লিজ হোল্ডারদের কাছে লেভি এবং খাজনা আদায় করবে এডিডিএ ।

ঘ) প্রকল্পের বিল্ডিং ও জমির দরুন উপভোক্তাদেরকে মর্ডগেজ দেওয়ার অধিকার এবার থেকে সরাসরি এডিডিএ’র ।

ঙ) এই প্রকল্পের সমস্ত ফ্লাট বাড়ি জমির অধিকার এবার থেকে এডিডিএ’র।

এমন শর্ত দেখলে তো কবি দত্তকে পিঠ চাপড়ে বাহবা দেওয়া উচিত সমগ্র শহরের, এবং সরকারি মহলের। কারণ, রাজ্য জয় করার মতনই কবি তো আস্ত একটা প্রকল্প দত্ত মোটরসের কব্জা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এসে জমা করলেন এডিডিএর ভান্ডারে। তাহলে কিসের এত বিতর্ক ?

বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু আসলে অন্য জায়গায়। কারণ সংশ্লিষ্ট ওই বোর্ড মিটিং এর ২ নম্বর শর্ত মোতাবেক – এবার থেকে প্রকল্পের ফ্ল্যাট বাড়ি বিক্রির জন্য ক্রেতা নির্ধারণ ও ফ্ল্যাট বিক্রয়ের টাকা নেওয়ার অধিকার সংরক্ষিত থাকছে কেবল দত্ত মোটরসের জন্যই। অর্থাৎ এডিডিডিএর ঘাড়ে বন্দুক চাপিয়ে মুনাফা সহ অর্থ রোজগার এবার থেকে বিনা ঝঞ্জাটে আরামসে করতে পারবে কেবল দত্ত মোটরসের মালিকেরা। আপত্তিটা উঠেছে ঠিক এখানেই। এ কেমন শর্ত? লোকের উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলে মানুষ করবে এডিডিএ, আর সুবোধ হয়ে যাওয়া সেই ছেলের বিয়ের বর পণ হজম করবে দত্ত মোটরস ?

“সাবাস! এই না হলে ব্যবসায়ী ?” – মন্তব্য কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর। তার মতে, “এটা নিয়ে আগাগোড়া তদন্ত হওয়া উচিত।” বিষয়টি নিয়ে বিতর্কিত দত্ত মোটরসের অন্যতম কর্ণধার চন্দন দত্ত বললেন, “এসব ব্যাপারে আমি কোন কথা বলবো না। দরকার হলে আমাদের ম্যানেজারের সাথে কথা বলুন।” সবাইতো ম্যানেজ হয়ে আছে, আবার আবার ম্যানেজার !

ওই কিসের যেন কি ? (চলবে)………..

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments