সংবাদদাতা,বাঁকুড়াঃ- বয়স বয়স সত্তর ঊর্ধ্ব। বয়সের ভারে শুকিয়ে গেছে হাতের চামড়া, তার সঙ্গে আঙুলের রেখা। তাই অঙুলের ছাপ নিতে ব্যার্থ যন্ত্র। তার জেরে দীর্ঘ কয়েক বছরচেষ্টা করেও আধার কার্ড পাননি বাঁকুড়ার ইন্দাস ব্লকের গোবিন্দপুর নয়নাগড় গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধা বিশাখা পাত্র। আধার ছাড়া অসহায় বৃদ্ধার জীবন এখন আঁধারময়।
বর্তমান সময়ে দেশের নাগরিক হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচিয় পত্র বা নথি হিসেবে বিবেচিত হয় আধার কার্ড। স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে রেশন, যে কোনো রকম সরকারি ভাতা, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট, আর্থিক লেনদেন সহ প্রায় সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ন কাজে আধার কার্ড একপ্রকার বাধ্য়তামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ নথিটি ছাড়া স্বাভাবিক জীবন যাপন প্রায় অসম্ভব একজন ভারতীয়র পক্ষে। এই পরিস্থিতিতে বৃদ্ধা বিশাখা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করেও একটি আধার কার্ড বানাতে পারেননি। তিনি বলছেন, “আমি সব জায়গায় গেছি—পঞ্চায়েত, ব্লক অফিস, আধার সেন্টার। কোথাও কিছু হয় না। আমার হাতের ছাপ নাকি মেশিনে ওঠে না।” এরপরই বৃদ্ধার গলায় শোনা যায় করুণ সুর, “আমার অপরাধটা কী? আমি তো শুধু বাঁচতে চাই।”
অসহায় বিশাখা দেবীর স্বামী বহুদিন আগেই মারা গেছেন। বহু বছর ধরে সন্তানরাও দূরে। জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে এখন একাকী বৃদ্ধা। রোজগারের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চরম সংকটের মধ্যে পড়েছেন। রেশন ও বিধবা ভাতা, বৃদ্ধ ভাতা কিছুই মেলে না। কারণ একটাই অধার কার্ড নেই। রেশন কার্ড থাকায় আগে তাও রেশন পেতন, পরবর্তীতে রেশন ও আধার কার্ড লিঙ্ক করা হয়। ফলে রেশন কার্ড থাকলেও এখন আর রেশন মেলে না।
তবে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য অনাহারে প্রাণ যাবে এক একাকি অসহায় বৃদ্ধার? মানবাধিকার, নাকি আধার ছাপ—কোনটা বড়? এই আধুনিকিকরণ, এই যান্ত্র চালিত সমাজে কি বেঁচে থাকার রসদ টুকু মিলবে না অসহায় এক বৃদ্ধার? তবে কি এই যন্ত্র শেষ পর্যন্ত গ্রাস করবে মানুষের বেঁচে থাাকার অধিকারকে? বিশাখা দেবীর এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে যন্ত্র ও মানবিকতার সংঘাত নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধা বিশাখা পাত্রর আর্তি প্রাশাসন তাঁকে একটু বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দিক।





