সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- শ্রীমা ছিলেন ত্যাগের মূর্তি, অনেক কষ্ট সহ্য করেও তিনি অটল থেকেছেন, কোনও বাধাতেই তাঁর মুখের হাসি ম্লান হয় নি। তীর্থযাত্রার মাঝামাঝি সময়ে একবার শ্রীমা রামচন্দ্রের এক মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেলেন, মা তখন ভাবলেন, যে যাওয়ার সে তো চলে গেলই, কিন্তু এই শোকের সময় ভক্ত রামবাবুর পাশে কারও দাঁড়ানো দরকার, ওদের দেখাশোনার জন্য লাটুকে যেতে বলতেই লাটু বোচকা নিয়ে চলে গেল কলকাতা। লাটুর মাতৃ আজ্ঞা পালন দেখে যোগিন মাকে শ্রীমা বললেন, ঠিকই বলেছ যোগেন, ঠাকুর যা বলতেন -ছেলে নয়, এরা সত্যি এক একটি রত্ন। যোগীন মা আর সহ্য করতে পারলেন না, বলে ফেললেন, অথচ দ্যাখো মা, তোমার নিজের পরিবারের যে ছেলে, এখন সেই কিনা…
এতদূর বলে থেমে গেলেন যোগীন মা, শ্রী মা কিছু জানেন না আর বলা ঠিক হবে না বুঝেই থামলেন তিনি। শ্রীমা কিন্তু বিষয়টা লক্ষ্য করলেন। একটু অবাক হয়ে শ্রী মা জিজ্ঞেস করলেন, কার কথা বলছ যোগেন? কী হয়েছে? যোগীন মা আমতা আমতা করে বললেন, তোমার ভাসুরের ছেলে রামলালের কথা বলছিলুম… মানে তুমি কিছু শোনো নি বোধহয়।
শ্রীমাঃ না তো! কী হয়েছে? কী করেছে রামলাল? যোগীনমা মায়ের চুল বাধঁতে বাধঁতেই সংকোচের সঙ্গে বললেন, শোনো কথা মা। রানীমা-র নাতি ত্রৈলোক্য বিশ্বাস তোমায় মাসে মাসে সাতটি করে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে গিয়েছেন জানি।
মা সারদা বললেন, হ্যাঁ তাঁর সময় থেকেই ও ব্যবস্থা চালু আছে।
শুনলুম মা, দীনু খাজাঞ্চি আর রামলাল নাকি সেটা বন্ধ করার চেষ্টা করছে।
একের পর এক দুঃসংবাদ। ঠাকুর নেই, শ্রী মায়ের আছে বলতে ওই সামান্য মাসহারা, তাও বন্ধ হবে কুটিল চক্রান্তে! শ্রী মা স্তব্ধ হলেন। একটু পরে শুধু বললেন, যা করার করুক। আর টাকা…ওমন সোনার মানুষ চলে গেল… রইলেন।
ওদিকে টাকা বন্ধের খবরে হতাশায় ভেঙে পড়েছে নরেন। চিন্তায় উদ্বেগে দীর্ণ সে, আবার এই মুহূর্তে তারও হাত পা বাঁধা। মঠ আর সংঘকে বাঁচানোর জন্য টাকার চেষ্টায় ছুটে বেড়াচ্ছে সে। শ্রীমায়ের সামান্য কটি টাকা বন্ধ না করার জন্য সে বারবার অনুরোধ করলেও কেউ তার কথা শোনে নি। মা কিন্তু হতাশ হন নি, সিদ্ধান্তে অনড় থেকে শ্বশুরের ভিটেতেই ফিরে এসেছেন। এমনও দিন গেছে মায়ের যে ফ্যান ভাতে নুন কেনার পয়সা টুকু হয় নি! মা আলুনি ভাত খেয়েছেন পরম তৃপ্তি সহকারে। আসলে শ্রী মায়ের জীবনী আমাদের বুঝিয়ে দেয় যারা আমাদের আপন, তাদের থেকেই আমরা বারবার কষ্ট পাবো, এই কষ্ট ই যে পরম সত্য, এই কষ্টই বুঝিয়ে দেবে পরম ঈশ্বর ছাড়া তোমার আর কেউ নেই , বাকি সব মায়া।





