eaibanglai
Homeএই বাংলায়সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে মেতে উঠল অণ্ডালের খান্দরা উচ্চ বিদ্যালয়

সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে মেতে উঠল অণ্ডালের খান্দরা উচ্চ বিদ্যালয়

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, অণ্ডাল, পশ্চিম বর্ধমান -: আশেপাশে থাকলেও অণ্ডালের খান্দরায় ছিলনা কোনো বিদ্যালয়। সেটা নিয়ে সবার মনের মধ্যে আক্ষেপ থেকে গিয়েছিল। সেই আক্ষেপ দূর করতে এগিয়ে আসেন এলাকার বিশিষ্ট স্বপ্নদর্শী প্রয়াত অমলেন্দু বক্সী, ছোটবড় সবার ‘শংকর’দা। পাশে পেয়ে যান আরও কয়েকজন শিক্ষাব্রতী মানুষকে। সবার মিলিত প্রচেষ্টায় ১৯৭৫ সালের ২৪ শে জানুয়ারী পথ চলা শুরু হয় খান্দরা জুনিয়র হাইস্কুলের। প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন অমিতা ব্যানার্জ্জী, এলাকাবাসীর স্নেহের মামণি। সেদিন উৎসবে মেতে উঠেছিল সমগ্র খান্দরাবাসী। অকালে নেমে এসেছিল বসন্ত।

১৯৮১ সালে বিদ্যালয়টি পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্বীকৃতি লাভ করে ও বিদ্যালয়টির নাম হয় ‘খান্দরা উচ্চ বিদ্যালয়’। ১৯৮৬ সালে এটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ২০০২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিণত হয়। ২০০৭ সালে চালু হয় বৃত্তিমূলক শাখা।

বর্তমানে সাধারণ বিভাগ ও বৃত্তিমূলক শাখা মিলে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে বারশ জন। সাধারণ বিভাগে শিক্ষক শিক্ষিকা আছেন ২৩ জন। সংখ্যাটা প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও বিদ্যালয়ের সম্মান আরও উঁচুতে তুলে ধরার জন্য প্রত্যেকেই তাদের সেরাটা দিয়ে থাকেন। এমন কি একমাত্র অশিক্ষক কর্মীও দায়িত্ব পালনে পেছিয়ে থাকেন না। সবমিলিয়ে বিদ্যালয়ের মধ্যে ‘ফিল গুড’ পরিবেশ দেখা যায়।

দেখতে দেখতে সেই বিদ্যালয় পৌঁছে গেল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ বর্ষে। বর্ষটিকে স্মরণীয় করে তুলতে প্রাক্তনীদের পাশাপাশি এগিয়ে আসেন শুভানুধ্যায়ীরা। সীমিত সাধ্যের মধ্যেই ৩ রা ও ৪ ঠা সেপ্টেম্বর এই দু’দিন ব্যাপী একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন এলাকার বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। পতাকা উত্তোলন ও প্রভাত ফেরির পর প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের সভাপতি মহারাজ স্বামী সোমাত্মানন্দ জী। তিনিই ছিলেন প্রধান অতিথি।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করে বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। উপস্থিত থাকার জন্য স্বাগত ভাষণে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রত্যেক অতিথির কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় এবং যথাযোগ্য মর্যাদা সহকারে অতিথিদের বরণ করা হয়। পরে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শংকর বক্সীর আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করা হয়। অতিথিদের হাত ধরে বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী ‘স্মরণিকা’ প্রকাশিত হয়। এছাড়াও সরস্বতী বন্দনা ও বিদ্যালয়ের ‘থিম-সং’ পরিবেশনের পাশাপাশি বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী করা হয়। প: ব: বিজ্ঞানমঞ্চ পরিবেশিত বিশেষ অনুষ্ঠান ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ -এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে থাকা বিভিন্ন কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করা হয়। উখরা ‘তাসের দেশ’ শিল্পচর্চা কেন্দ্র

পরিবেশিত রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’, অণ্ডালের শ্রীরামপুর রত্নাকর নাট্যগোষ্ঠীর রবীন্দ্র গীতিনাট্য ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ এবং নৃত্যনাট্য ‘মাতৃরূপেণ উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানে প্রাক্তনীদের পাশাপাশি সঙ্গীত, নৃত্য ও কবিতা পরিবেশন করে বর্তমান প্রজন্ম। প্রবীণরা এই দিনটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন।

সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উপলক্ষ্যে খুব সুন্দরভাবে সেজে উঠেছিল বিদ্যালয় চত্ত্বর। কিন্তু প্রায় একদশক আগে শেষবারের মত বিদ্যালয়ে রঙ করা হয়। আর্থিক কারণে আর রঙ করা সম্ভব হয়নি। উপস্থিত প্রত্যেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজের বক্তব্যে এই রঙ করার বিষয়টি তুলে ধরেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী সরকার এবং করজোড়ে আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করেন। তার আবেগঘন আবেদন সবার হৃদয় স্পর্শ করে। এখন দেখার বিদ্যালয়ের রঙ করার জন্য আর্থিক সাহায্যের হাত কেউ কেউ বাড়িয়ে দেন কিনা!

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments