eaibanglai
Homeএই বাংলায়মা দুর্গার প্রতিমার সামনে গান গাইলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য

মা দুর্গার প্রতিমার সামনে গান গাইলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য

মা দুর্গার প্রতিমার সামনে গান গাইতে গাইতে বিভোর হয়ে গেলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য। চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। “মায়ের পূজক বললেন, তুমি ধন্য। তুমি সত্যিই মায়ের ছেলে।”

শিবানী ভট্টাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায়ঃ- সে অনেকদিন আগের কথা। আমি তখন অনেকটাই ছোট। আমাদের বালি বারেন্দ্র পাড়ার বাড়ি তখন চাঁদের হাট। স্বর্ণযুগের কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী, গীতিকার, সুরকারদের উপস্থিতিতে বাড়ি সরগরম। তখন অবশ্য সেসব বুঝতাম না। এখন বুঝি।

আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন আমার বাবা সুরকার প্রফুল্ল ভট্টাচার্য পুরোপুরি ব্যস্ত থাকতেন বিভিন্ন গানের সুর করা নিয়ে। আর মেজ কাকা স্বর্ণ কণ্ঠশিল্পী ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য তখন খ্যাতির পূর্ণ বিন্দুতে। সবাই বলতেন, ধনাদা ( আমার মেজো কাকা ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের ডাকনাম) হচ্ছেন বাঙলা গানের সংগীত সম্রাট। আর ছোট কাকা? তখন ওই বয়সেই বাংলা শ্যামা সঙ্গীতের ধারায় জীবন্ত কিংবদন্তি। তাঁকে ছাড়া শ্যামা সংগীত – কেউ ভাবতেই পারতেন না। আজও তো আমার ছোট কাকা পান্নালাল ভট্টাচার্যের গান ছাড়া দেবীর আরাধনা – বাঙালির মাতৃ সাধনা সম্পূর্ণ হয় না।

আমাদের পরিবারে সাধনার ধারা বরাবরই ছিল। এক সময় সন্ন্যাস নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন আমার ঠাকুর দাদা সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। আর আমাদের এই বংশের পুরুষোত্তম যাঁকে বলি – সেই “The Levitating Saint ” ভাদুড়ী মহাশয় অর্থাৎ মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ এবং তাঁর ভাইপো ধ্যানপ্রকাশ ব্রহ্মচারী মহারাজের সাধন সিদ্ধির কথা তো সবাই জানেন।

আমি ছোট বেলা থেকেই দেখেছি আমার বাবা, মেজ কাকা কিংবা ছোট কাকা মাতৃ সাধনা ছাড়া যেন আর কিছু বুঝতেন না। যতো ব্যস্ততাই থাকুক মায়ের পুজো না করে তাঁরা জল পর্যন্ত স্পর্শ করতেন না।

মাতৃ সাধনার ধারা ছোট কাকার কাছে যে সর্বস্ব হয়ে উঠেছিল – তা তাঁর শেষ জীবনে যেন আরও বেশি প্রকট হয়ে উঠেছিল। ছোট কাকার জীবনের শেষ পর্বটা তো শ্মশান কেন্দ্রিক। তিনি পাগলের মতো শ্মশানে শ্মশানে ঘুরতেন মাকে দেখার জন্য। অথচ মা বসেছিলেন তাঁর মনের মন্দিরে অচলা হয়ে – তাঁর ভাব এবং তাঁর গানই তার প্রমাণ।

আমি যে সময়টার কথা বলছি তখনও ছোট কাকার বিয়ে হয়নি। কিন্তু সেই অল্প বয়সেও ছোট কাকার মধ্যে মায়ের গান গান ঘিরে একটা অন্যরকম ব্যাপার ছিল। গানের জন্য রেওয়াজের ব্যাপার ছিল না। ছোট কাকা ছিলেন আক্ষরিক অর্থেই সহজাত শিল্পী প্রতিভার অধিকারী। তাই রেওয়াজ করার দরকার পড়তো না। কিন্তু এক এক সময় গান গাইতে বসলে ছোট কাকার সময়ের জ্ঞান কেন, কোনও জ্ঞানই থাকতো না। দুচোখ বেয়ে শুধু জল পড়তো। কিন্তু ফুটবল খেলা আর মাছ ধরার ব্যাপার থাকলে ছোট কাকা অন্য মানুষ। আর সেটাকে সামনে রেখেই অনেকে ছোট কাকাকে কার্যত পাকড়াও করে নিয়ে চলে যেতেন। উদ্দেশ্য অবশ্যই ছিল ছোট কাকার গান শোনা।

তো একবার এমনটাই হলো। অষ্টমী অথবা নবমী ছিল। আমাদের বাড়ির কাছের বারোয়ারি তলা পুজো মণ্ডপ থেকে ছোট কাকা চলে গেলেন যতো দূর মনে পড়ছে হাওড়ার কোনও এক জায়গায়। ছোট কাকা যেতে রাজি হয়েছিলেন একটিমাত্র কারণেই গান তো ছিলই সঙ্গে ছিল মাছ ধরার ব্যাপার। যদিও এই সময় মাছ খাওয়ার ব্যাপার ছিল না ( মায়ের প্রসাদ হলে আলাদা বিষয় )। তবু মাছ ধরার টানটা তো ছিলই। যাইহোক সেখানে ছোট কাকা গেলেন এবং মা দুর্গার সামনে গান গাইতে গাইতে অজ্ঞানের মতো হয়ে গেলেন। তারপর অবশ্য যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সবাই অবাক হয়ে দেখলেন কিংবদন্তি পান্নালাল ভট্টাচার্যের চেহারাটা যেন বদলে গিয়েছে। সারা শরীর দিয়ে বেরোচ্ছে এক আশ্চর্য আভা। কোনও সাধারণ মানুষের দেহ দিয়ে এমন আভা বের হয় না।

ছোট কাকার এই অবস্থা দেখে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেলেন। মায়ের পূজক বললেন, তুমি ধন্য। তুমি সত্যিই মায়ের ছেলে।

তিনি যে মায়ের ছেলে সত্যিই ছিলেন তার প্রমাণ আজও দিচ্ছে সময়। মায়ের গান ঘিরে এমন আকুতির প্রকাশ যে সত্যিই অলৌকিক!

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments