eaibanglai
Homeএই বাংলায়হাজার বছর ধরে দুর্গাপুজো করে চলেছে মঙ্গলকোটের 'শী' পরিবার

হাজার বছর ধরে দুর্গাপুজো করে চলেছে মঙ্গলকোটের ‘শী’ পরিবার

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোটঃ- ঠিক কতবছর আগে থেকে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল সেই বিষয়ে প্রামাণ্য তথ্য না থাকায় পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। অধিকাংশ সময় পারিবারিক দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে অথবা লোকমমুখে শোনা তথ্যের উপর নির্ভর করতে হয়। মঙ্গলকোটের চাণক গ্রামের ‘শী’ পরিবারের দাবি তাদের দুর্গাপুজো সহস্র বছরের প্রাচীন। তাদের বর্তমান বংশধরদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে, বর্তমান সেবাইতরা গত দশ পুরুষের বেশি সময় ধরে এই দুর্গাপুজোর আয়োজন করে চলেছেন। প্রয়াত বিমলাপদ শী -এর লেখা গ্রন্থ থেকে মোটামুটি এই তথ্য পাওয়া যায়।

জানা যাচ্ছে, ব্রাহ্মণ কন্যা মানদাময়ী দেব্যা কোনো এক গ্রাম থেকে চাণক গ্রামে আসেন। সেই সময় চাণক গ্রাম জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। তাঁর হাত ধরে চাণক গ্রামে তান্ত্রিক মতে শুরু হয় প্রাচীন জাগ্রতা দেবী ক্ষ্যাপা কালী মাতার পুজো। আর্থিক কারণে তিনি নাকি মায়ের মূর্তির সামনে চারপ্রহর হাত জোড় করে থাকতেন এবং ওটাই ছিল তাঁর পুজোর পদ্ধতি। প্রবীণদের কাছে শোনা যায় প্রাচীনকালে বহু জায়গায় এভাবেই মায়ের পুজো করা হতো। উনার হাত ধরে প্রায় একইসঙ্গে দুর্গাপুজো শুরু হয়। দেহত্যাগের পূর্বে তিনি ‘শী’ পরিবারের হাতে দুর্গাপুজোর দায়িত্ব দিয়ে যান এবং দু’প্রহর, ১২-৩ এবং ৩-৬ পুজো করার পরামর্শ দেন। এখনো সেই রীতি মেনে চলা হচ্ছে এবং পুজোর সময় মানদাময়ী দেব্যার নামে সংকল্প করা হয়। ‘শী’ পরিবারের সদস্যরা তাঁকে ‘গুরুমা’-র আসনে বসান।

তারপর কালের নিয়মে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে জয়ন্ত কুমার শী, বিজয় শী, নীলকণ্ঠ শী, শান্তিময় শী ও সৌরভ শী – এই ৫ ঘর ‘শী’ পরিবার ব্যয়বহুল দুর্গাপুজো এবং ক্ষ্যাপা কালীমাতার পুজো পরিচালনা করে আসছেন। অলৌকিক কারণে কালীমায়ের মন্দির ভেঙে যাওয়ার জন্য নতুন করে মন্দির গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে । এরজন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সেই অর্থ বহন করার মত আর্থিক সামর্থ্য ‘শী’ পরিবারের নাই। আর্থিক সাহায্যের জন্য তারা সবার কাছে আবেদন জানাচ্ছেন। পুজো পরিচালনার জন্য নিয়ম মেনে তারা ১৫ জন সদস্যের ‘ট্রাস্টি বোর্ড’ও গড়ে তুলেছেন এবং সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু কোনো অজানা কারণে এবছর তারা সেই অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের আশা পরের বছর হয়তো তারা সরকারি অনুদান পাবেন।

জয়ন্ত বাবু বললেন – আমরা বহু কষ্ট করে এই পুজোর আয়োজন করে চলেছি। সরকারি অনুদান পেলে আমাদের পক্ষে পুজোর আয়োজন করা কিছুটা সহজ হবে। আশাকরি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমাদের আবেদন সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবেন।

রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন পুজো চাণকের ‘শী’ পরিবার পরিচালিত দুর্গাপুজো। পাশেই গড়ে উঠছে দর্শনীয় কালীমাতার মন্দির। এমনিতেই আশেপাশে এলাকার বাসিন্দাদের এই ক্ষ্যাপা কালীমায়ের প্রতি একটা আলাদা ভক্তি আছে। এখন দর্শনীয় মন্দির গড়ে উঠলে হয়তো তখন সেখানে তারাপীঠের মত ভক্তদের ভিড় বাড়বে।চলার পথে ভক্তরা মায়ের দর্শন করতে পারেন। সবমিলিয়ে এলাকার আর্থিক উন্নতি ঘটতে পারে। সহৃদয় মানুষরা ক্ষ্যাপা কালীমায়ের মন্দির গড়ে তোলার জন্য কি আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেননা? অপেক্ষায় আছেন ‘শী’ পরিবার ও এলাকার বাসিন্দারা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments