সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- একবার একজন ভক্ত প্রশ্ন করেন, “ধর্ম বিষয়ে আমি আগ্রহী কিন্তু ভোগের ইচ্ছাও আছে আমার মনে। এতে কি সমস্যা হবে?”
এর উত্তরে স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ বলেন,“ ভোগ করো যত ইচ্ছে। প্রচুর ভোগ, প্রাণভরে করো। বিভিন্নভাবে করে যাও। অনেকে শুধু দৈহিক স্তরে (অন্নময় কোষ)-ই ভোগ করে, পশুপাখির মতো, আহার-নিদ্রা-মৈথুনে আবদ্ধ। তুমি আরও এগিয়ে যাও ভোগের ক্ষেত্রে। প্রাণময় কোষে উপভোগ করো, সতেজ সজীব শক্তি, টগবগে প্রাণশক্তি (energy), অফুরন্ত কর্ম ও উৎসাহ। এবার আরও বেশি ভোগের জন্য যাও মানসিক স্তরে (মনোময় কোষ)। কবি-গায়কের মতো উপভোগ করো সৌন্দর্য, প্রেম, আনন্দ। মনের আবেগ তোমায় দেবে এটা। আর চিন্তার সাহায্যে আনন্দ উপভোগ করো বিজ্ঞানী বা দার্শনিকের মতো। কিন্তু এখানেই থেমে যেও না। যাও বিজ্ঞানময় কোষে আরও বেশি উপভোগের জন্য। জপ-ধ্যান এর ঠিকানা দেবে তোমায়, নিয়ে যাবে ওই আনন্দধামে। আপাতত ১০-১২ মিনিটের জন্য পরীক্ষা করে দেখতে পারো একটা ছোট বিষয়। অভ্যাস করে দেখো। ভোগে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে, শক্তি খরচ হয়। এটা সবচেয়ে বেশি হয় অন্নময় কোষে বা দৈহিক স্তরে। যতই উপরে যাবে তত বেশি আনন্দ পাবে, শক্তির অপচয়ও কম হবে। তাই তোমায় বলছি, ভোগ করো, প্রচুর ভোগ। কিন্তু জেনে নাও কিভাবে বেশি উপভোগ করতে পারবে, প্রচুর আনন্দ পাবে। এই আনন্দই তোমাকে রক্ষা করবে প্রতিকূল অবস্থায়। জীবনে এমন পরিবেশ প্রায়ই আসে। নিজেকে ইচ্ছামতো আনন্দভাবে নিয়ে যেতে পারলে তোমার জীবনটাই পাল্টে যাবে। তখন জলে নৌকো থাকবে, কিন্তু নৌকোয় জল জমবে না। কারোর সঙ্গে মতবিরোধ হলে তুমি দুঃখ পাবে না, বরং শান্তভাবে নিজস্ব বক্তব্য বলতে পারবে। কোনো ব্যর্থতা এলে ঘাবড়ে না গিয়ে নতুন উৎসাহে এগিয়ে যেতে পারবে। সম্প্রতি আমার জীবনে এমনই এক ঘটনা হলো। একটি গ্রুপ আমার বিভিন্ন লেখা নিয়ে ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে দিয়ে চলেছে। অনুমতি নেওয়া তো দূরের কথা, আমার নামও উল্লেখ করছে না ওই ভিডিওগুলিতে। এ-বিষয়ে যথাস্থানে আমরা অভিয্যোগ করেছি। কিন্তু এই নিয়ে মনে দুঃখ না এনে স্থির থাকতে পেরেছি। তুমিও এমন অপ্রীতিকর বা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মন শান্ত রাখতে পারবে। এজন্য বিজ্ঞানময় কোষে যাওয়ার অভ্যাস তোমাকে করতে হবে রোজ। ধর্ম তোমাকে শেখায় কিভাবে জীবনে ভোগ করতে হয়, জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে হয়। ভোগের ইচ্ছা হলে ভোগ করো, বিভিন্ন ক্ষেত্রে গিয়ে নানারকম ভোগ করো। জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করো।”







