eaibanglai
Homeএই বাংলায়মৃত ব্যক্তির জমি একাধিকবার একাধিক জনকে বিক্র, নজরে জমি দালাল চক্র

মৃত ব্যক্তির জমি একাধিকবার একাধিক জনকে বিক্র, নজরে জমি দালাল চক্র

সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ- মৃত ব্যক্তির জমি একাধিকবার একাধিক জনকে বিক্রির নজিরবিহীন ঘটনা সামনে এল আসানসোলের সালানপুর ব্লকে। তদন্তে নেমে ধোঁয়াশায় পুলিশ।

যে ব্যক্তির ১৯৮৪ সালের ১২ অক্টোবর মৃত্যু হয়েছে বলা হচ্ছে, সেই ব্যক্তিই ২০১১ সালের ২৪ মে এবং ৩১ অক্টোবর তার প্রায় ৪৬ বিঘা জমি অন্যকে বিক্রি করছেন, বিক্রির দস্তাবেজে সই করছেন এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এলো সালানপুর ব্লকে। ওই জমির বর্তমান মূল্য প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। অভিযোগ উঠেছে একই জমি একাধিকবার একাধিক জনের মধ্যে বিক্রি করা হয়েছে। তবে অভিযোগ পাওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলির মনে হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তিটির নাম করে অন্য ব্যক্তিকে সামনে এনে জমি বিক্রির দালালচক্র এই কাজ হাসিল করেছে। যদিও পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিক পুরো বিষয়টি নিয়ে একেবারে ধোঁয়াশার মধ্যে পড়েছেন। ‌ তদন্ত করতে গিয়ে এর আগাগোড়া কোন কিছুরই আপাতত হদিশ মিলছে না বলে জানা যাচ্ছে।

ঘটনা সালানপুর ব্লকের আমঝরিয়া মৌজায় জে এল নম্বর ৩৪, খতিয়ান নম্বর ৩০৩, আরএস এন্ড এলআর প্লট নম্বর ২৩৯ অন্তর্ভুক্ত ১৫.২৮ একর বা প্রায় ৪৬ বিঘা জমিকে কেন্দ্র করে। এই জমিটি হরিশাডি গ্রাম থেকে জেমারি বাসুদেবপুরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় বাঁদিকে। রেজিস্ট্রি ডিড অনুযায়ী ঝাড়খণ্ডের দেওঘর মধুপুর এলাকার বাসিন্দা হরিবল্লভ ভাদুড়ি ২০১১ সালের ২৪ মে আসানসোলের বাসিন্দা নাদিম ইকবাল এবং আমির সিদ্দিকিকে এই জমি ১৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন। নাদিমের বাড়ি আসানসোল দক্ষিণ থানার ১১, ডক্টর এমএন সাহা রোড এবং ইকবালের বাড়ি ৭০, ডক্টর এমএন সাহা রোড অঞ্চলে। প্রথম দফায় এই বিক্রির পর ওই একই জমি আবার দুটি আলাদা আলাদা ডিডের মাধ্যমে পুরো জমিটিকে আধা আধি ভাগ করে তিনজন তিনজন করে মোট ছজনকে বিক্রি করা হয় । অর্ধেক জমির মধ্যে ৭.৪৬ একর জমি রেজিস্ট্রি করা হয় রূপনারায়ণপুরের উজ্জ্বল কুমার সেন, জেমারির তপন সেন এবং জেমারির শেখ ইশতেহারের নামে। অন্য অর্ধেক অংশ ৭.৪৬ একর জমি রেজিস্ট্রি করা হয় সালানপুর থানা এলাকার কল্যাণেশ্বরী অঞ্চলের বাসিন্দা সিন্টু মন্ডল, দীনেশ মন্ডল এবং বিকাশ দত্তের নামে। এই ছয় জনকেও জমি বিক্রি করেন হরিবল্লভ ভাদুড়িই। কিন্তু জমি কেনার পর সেই জমির দখল নিতে গিয়ে এই ছয় ব্যক্তি জানতে পারেন ওই জমি আগেই অন্যকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ওই ঘটনার প্রায় ১৪ বছর পর চলতি ২০২৫-এ এই জমির ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। ১৪ বছর পর ওই জমির আসল মালিক বলে নিজেকে দাবি করে এক ব্যক্তি সালানপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ‌ চলতি মাসের ১ তারিখ সালানপুর থানায় (কেস নাম্বার ১৯৮ / ২৫, তারিখ ১.১২.২০২৫) উক্ত ৮ জন ক্রেতার বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ঠকিয়ে বিপুল এই সম্পত্তি বিক্রি করা হয়েছে। যদিও এই এফ আই আর-এর পরিপ্রেক্ষিতে জমির ক্রেতারা বলছেন যে তারা নিজেরাই বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়েছেন, তারা জমির মালিকানা তো পানইনি, উল্টে তাদের বহু অর্থ জলে গেছে।

সালানপুর থানায় এই জমি নিয়ে ১ ডিসেম্বর অভিযোগ জানিয়েছেন আসানসোলের ডক্টর এম এন সাহা রোড অঞ্চলের বাসিন্দা হরিশ শর্মা। তিনি জানান, আমঝরিয়া মৌজার ওই প্রায় ৪৬ বিঘা জমির বৈধ দাবিদার হলেন হরিবল্লভ ভাদুড়ির পুত্রবধূ গার্গী ভাদুড়ি। গার্গী ওই জমির জন্য হরিশ শর্মা এবং তার সহযোগী অনন্ত আর্যর নামে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়েছেন। গার্গীর শ্বশুর এবং স্বামীর অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে। তার ফলে পুত্রবধূ হিসেবে তিনি এই জমির আইনত উত্তরাধিকারী। তার শ্বশুর হরিবল্লভের মৃত্যু হয়েছে ১৯৮৪ সালের ১২ অক্টোবর , অথচ তারই নাম করে ২০১১ সালে এই জমি বিক্রি করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং দুর্নীতিপূর্ণ বলে অভিযোগ জানানো হয়েছে।

কিন্তু কিভাবে জানা গেল যে এই জমি আগেই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে? হরিশ এবং অনন্ত আর্যর নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়ার পরেই তারা সালানপুর বি এল এল আর ও অফিসে ওই জমির জন্য খাজনা জমা করতে গিয়ে জানতে পারেন জমিটি অন্যের নামে রেজিস্ট্রি করা আছে। এরপরই তারা খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন এবং থানায় এফ আই আর দায়ের করেন।

এ প্রসঙ্গে সালানপুর বি এল এল আরও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে বিষয়টি নিয়ে তাদের বিশেষ কিছু করার ছিল না। যা হওয়ার তা উপর থেকেই হয়েছে। তবে, এবার এফ আই আরের নথিসহ তাদের কাছে কোন আবেদন এলে পরবর্তী ক্ষেত্রে মিউটেশনের কাজ তারা আটকে দিতে পারেন। অন্যদিকে অভিযোগের তদন্তভার পড়েছে সালানপুর থানার অন্তর্গত রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ির যে আধিকারিকের হাতে তিনি জানান, তদন্ত চলছে তবে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে সময়ে লাগবে বলে তার ধারণা।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments