eaibanglai
Homeএই বাংলায়পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে বন্ধুকে খুন! দুই ভাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ঘোষণা

পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে বন্ধুকে খুন! দুই ভাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ঘোষণা

সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ- পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে বন্ধুকে খুন! দুই ভাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ঘোষণা আসানসোল জেলা আদালতে। সাজাপ্রাপ্ত দুই ভাইয়ের নাম রাহুল আকুড়িয়া ও মহঃ ইয়াকুব ওরফে সুশীল। দুজনের বাড়ি আসানসোল উত্তর থানার কাল্লা ইসিএল কোয়ার্টারে।

খুন হওয়া যুবকের নাম হর্ষবর্ধন চৌহান ওরফে বিট্টু (২৩)। তার বাড়ি আসানসোল উত্তর থানার কাল্লা এলাকায়। হর্ষবর্ধন বছর খানেকের বড় হলেও সাজাপ্রাপ্ত দুই ভাইয়ের বন্ধু ছিলো। জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর বিকেলে দুই ভাই রাহুল আকুড়িয়া ও মহঃ ইয়াকুবে সঙ্গে নিজের মোটরবাইক করে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায হর্ষবর্ধন। এদিকে ছেলে বাড়ি না ফেরায় হর্ষবর্ধনের বাবা নরেন্দ্রনাথ চৌহান খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু ছেলের কোন হদিশ না পেয়ে আসানসোল উত্তর থানায় একটি মিসিং ডায়েরি করেন। তিনদিন পরে ২০ অক্টোবর ঘাঘরবুড়ি মন্দির কর্তৃপক্ষ আসানসোল দক্ষিণ থানায় ফোন করে জানায়, নুনিয়া নদী থেকে পচা গন্ধ বেরোচ্ছে। তাদের মনে হয় কোন মৃতদেহ নদীতে পড়ে আছে। এরপর পুলিশ গিয়ে নদী থেকে এক যুবকের পচাগলা দেহ উদ্ধার করে। পরে নিখোঁজ হর্ষবর্ধনের বাবা ও পরিবারের সদস্যরা দেহ শনাক্ত করেন। ২১ অক্টোবর আসানসোল জেলা হাসপাতালে মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়। রিপোর্টে জানা যায়, যুবককে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করে পরে তার গলায় জুতোর ফিতে ফাঁস দিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ এবং দীর্ঘ তল্লাশির পরে ২৪ অক্টোবর রাহুল আকুড়িয়া ও মহঃ ইয়াকুবে খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করে। তদন্ত চলাকালীন মামলার আইও বা তদন্তকারী অফিসারের কাছে খুনের কথা স্বীকার করে নেয় দুই ভাই।

তারা জানানয়, ১৭ অক্টোবর বিকেলে তিনজনে মিলে বাইকে করে বেরিয়ে প্রথমে কাল্লা রোডের একটি শ্মশানে গিয়ে মদ খায় তারা। এরপর সেখান থেকে তারা ঘাঘরবুড়ি মন্দিরে যায়। সেখানে একটি দোকান থেকে সিগারেট কেনে। তারপর তিনজনে মিলে মন্দির লাগোয়া নুনিয়া নদীর পাশে বসে গল্পগুজব করছিল। সেই সময় হর্ষবর্ধন মহঃ ইয়াকুব ওরফে সুশীলের স্ত্রীকে নিয়ে কুমন্তব্য করে। শুনে সে রেগে সুশীল হাতের সামনে থাকা পাথর দিয়ে হর্ষবর্ধনের মাথায় আঘাত করে। তাতে হর্ষবর্ধন রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে। এরপরে রাহুলও পাথর দিয়ে তার মাথার মারে। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তারা তার গলায় জুতোর ফিতে দিয়ে ফাঁস দেয়। দেহ নদীতে ফেলার আগে তারা হর্ষবর্ধনের পকেট থেকে মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন ও ট্যাব বার করে নেয়। সেই মানিব্যাগে হর্ষবর্ধনের দুটি এটিএম কার্ডও ছিলো। এরপর দেহ নদীতে ফেলে তারা হর্ষবর্ধনের মোটরবাইক নিয়ে সোজা কাজোড়ায় দিদিমার বাড়িতে চলে যায়। সেখানে দুই ভাই ভিজে যাওয়া জামাকাপড় বদলে নেয়। পাশাপাশি
হর্ষবর্ধনের মোটরবাইকের নম্বর প্লেট খুলে,সেখানে লুকিয়ে রাখে। এরপর নম্বর প্লেট বিহীন বাইক নিয়ে চলে যায় হিরাপুর থানার বার্নপুরের রাঙ্গাপাড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়ি। সেখানে হর্ষবর্ধনের বাইকটি তারা লুকিয়ে রাখে। একইভাবে দুই ভাই হর্ষবর্ধনের ট্যাব, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ রেখে দেয়।

দুইভাইকে রিমান্ডে নিয়ে জেরার পর মামলার তদন্তকারী অফিসার বাইক সহ সমস্ত জিনিস উদ্ধার করে। তদন্তের সময় মন্দির সংলগ্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে খুনের দিন অনেকেই তিনজনকে আসতে দেখেছিল কিন্তু যাওয়ার সময় দুজনকে দেখেছিল। পুরো তদন্ত ও জেরায় পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, স্ত্রীকে নিয়ে কুমন্তব্য করায় রাগে দুই ভাই এই ঘটনা ঘটায়।

এই মামলায় তদন্তকারী অফিসার, চিকিৎসক সহ মোট ২৫ জন সাক্ষ্য দান করেন। সব সওয়াল-জবাব শেষে অবশেষে বৃহস্পতিবার বিচারক দুই ভাইকে এই খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশও দেওয়া হয়। গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ছোট ভাই মহঃ ইয়াকুব ওরফে সুশীল আসানসোল জেলে ছিলো। তবে শারীরিক সমস্যা হওয়ায় বড় ভাই রাহুল আকুড়িয়া ৭/৮ মাস আগে জামিন পান।

এই মামলার সরকারি আইনজীবী ছিলেন চিত্তরঞ্জন দে ও আইও বা তদন্তকারী অফিসার হিসেবে ছিলেন আসানসোল দক্ষিণ থানার এসআই গৌতম কর্মকার।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments