নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ লোকসভা ভোট অতীত, ফলাফল ঘোষণার পরও কেটে গেছে প্রায় ২৪ ঘণ্টা। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২০১৯ লোকসভা ভোটে জয়লাভ করে ফের দিল্লির মসনদে আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে দেখা যাবে নরেন্দ্র মোদীকেই। তবে আর যাই হোক এই লোকসভা নির্বাচন ছাপিয়ে গিয়েছে দেশের গত বেশ কিছু লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলকেও। যার প্রভাব আমরা দেখেছি ছত্রিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের পাশপাশি আমেঠীর মতো কংগ্রেসের দুর্গও নিজেদের দখলে নিয়েছে বিজেপি। তবে সমস্ত ফলাফলকে ছাপিয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটের ফলাফল। যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্ভেদ্য দূর্গে গেরুয়া শিবির শুধু দাঁতই ফোটালো না ৪২ আসনের মধ্যে ১৮টি আসন দখল করে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস শিবিরে থরহরি কম্পন ধরিয়ে দিয়ে গেল ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন। আর নির্বাচনের সেই ফলাফল প্রকাশের মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শাসক দলের অন্দরে শুরু হয়ে গেল গোষ্ঠী কোন্দল আর অন্তর্ঘাত তত্ব। প্রথমে আসা যাক, দুর্গাপুর-বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের হয়ে লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মমতাজ সংঘমিতা। আর এই কেন্দ্রে সকলকে অবাক করে দিয়ে মমতাজ সংঘমিতাকে ২ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে জয়লাভ করেছে বিজেপি প্রার্থী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। আর এখানেই অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী! নিজের কেন্দ্রে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এহেন আর কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন তিনি। তাহলে কী পঞ্চায়েত ভোটের মতো লোকসভা ভোটে আসানসোলের হেভিওয়েট নেতাদের দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতা ও কাউন্সিলারদের ওপর ছড়ি ঘোরানোর অভিযোগই সত্যি প্রমাণিত হল? মমতাজ সংঘমিতার অন্তর্ঘাত তত্ব অন্তত সেইদিকেই ইঙ্গিত করছে। কারণ লোকসভা ভোটের প্রাক্কালেই আসানসোলের একাধিক নেতৃত্ব এবং তৃণমূল অবজারভার অরূপ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দলীয় কাউন্সিলারদের ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছিল। বুথভিত্তিক জয় না পেলে কাউন্সিলার পদও কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। তারই প্রতিফলন কি ভোটের এই ফলাফল? প্রশ্ন ক্রমেই জোরালো হচ্ছে বৃহস্পতিবারের পর থেকে। উল্টো দিকে আসানসোল কেন্দ্রেও একই ঘটনা সামনে এসেছে। সেখানে বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র কাছে লক্ষাধিক ভোটে গোহারান হেরে আসানসোল কেন্দ্রের সাংসদ হওয়ার আশা হাতছাড়া করেছেন তৃণমূল তারকা প্রার্থী মুনমুন সেন। আর আসানসোলে এই হারের অন্যতম কারণ হিসেবে দলীয় কোন্দলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন আসানসোলের তৃণমূল হেভিওয়েট নেতৃত্ব। যেখানে ভি শিবদাসন দাশু সাফ জানিয়েছেন দলীয় ব্যর্থতা এই হারের অন্যতম কারণ। দলের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। অতএব তার বক্তব্য থেকেই জলের মত পরিষ্কার যে দলীয় বিবাদ ঠিক কোন জায়গায় রয়েছে। অন্যদিকে, লোকসভা ভোটে আসানসোল কেন্দ্রে এহেন ভরাডুবির দায় নিয়েই পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন আসানসোলের মেয়র তথা বিধায়ক জীতেন্দ্র তিওয়ারি। সূত্রের খবর অনুযায়ী ইতিমধ্যেই নিজের ইস্তফাপত্র মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পাঠিয়েও দিয়েছেন তিনি। একই অবস্থা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বিষ্ণুপুরের মতো কেন্দ্রগুলিতেও। তাহলে লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর এবার কী তাহলে পদত্যাগ আর ছাটাইয়ের পালা? যদিও বিধানসভা ভোটের আগে দলের রণকৌশল কি হবে তা নিয়ে এখনও নবান্ন বা মুখ্যমন্ত্রীর তরফে কোনও নির্দেশিকা আসেনি। আপাতত সেই অপেক্ষাতেই রাজ্যবাসী।