নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ স্বাধীনতার পর থেকে পুরুলিয়া তথা মানভূমের চাষবাস নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। বেশ কয়েকটি সেচ প্রকল্প গড়ে উঠেছে। কিন্তু আজও পুরুলিয়ার চাষের মূল ভরসা বর্ষার জল। বাম জমানায় ক্ষুদ্র জলবিভাজিকা প্রকল্প, চেক ড্যাম গড়া হলেও সেগুলি অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলার জন্য কোন লাভ হয় নি। অববাহিকার তোয়াক্কা না করে নষ্ট হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে নতুন একটি প্রকল্প চালু করল, জল ধরো জল ভরো। একথা ঠিক যে, পুরুলিয়ার মতো মালভূমি জমিতে বর্ষার জল ধরে রাখতে পারলে সমস্যা হবে না। তৃণমূল সরকার প্রথম পাঁচ বছরে জেলার জোড় ও নালাগুলিতে বাঁধ দিয়ে প্রচুর জোড়বাঁধ তৈরীও করল। কিন্তু বহু চর্চিত সেই ঠিকাদার -নেতা আঁতাতে প্রথম বর্ষাতেই নিম্নমানের জোড়বাঁধগুলি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেলো। পুরুলিয়া সেই রুখাশুখা জেলাই থেকে গেলো। ষাটের দশকে কংগ্ৰেস সরকার পুরুলিয়ার বিভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে তেত্রিশটি ড্যাম তৈরি করেছিলেন। বাম সরকার বা তৃণমূল সরকার, কেউ সেই ড্যামগুলি সংস্কারের প্রয়োজন বোধ করে নি। ফলে সব কয়টি ড্যামের জলধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। গরমকালে কোনটিতে জল থাকে না। ফলে ড্যামগুলি থেকে যে ক্যানাল বেরিয়েছে, প্রয়োজনের সময় সেগুলিতে জল মেলে না। কোটি কোটি টাকা খরচ করেও পুরুলিয়ার সেচসেবিত জমি তাই মাত্র সাড়ে বারো শতাংশ। বাকি সাড়ে সাতাত্তোর ভাগ জমির ভরসা বৃষ্টি। ভালো বৃষ্টি হলে চাষ হয়, নয়তো মাথায় হাত দিয়ে কৃষককে ছুটতে হয় পূব খাটতে। অথচ যেহেতু পুরুলিয়ায় বন্যা হয় না, তাই এখানে একটু জলের ব্যবস্থা করে দিলেই চাষের সমস্যা থাকবে না। বান্দোয়ান, বরাবাজার, বাঘমুন্ডি, ঝালদা, বলরামপুরে কৃষকরা নিচু জমিতে দাঁড়িকুয়া খুঁড়ে বা জোড়ে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে গরমকালে সবজী উৎপাদন করেন। সেটাও বাড়তো সেচের পর্যাপ্ত জল পেলে। কিন্তু কোন সুপরিকল্পনা না থাকায় আজও পুরুলিয়ার জমিতে বাইদ, কানালি, বহাল, গোড়া বা টাঁড়, – এমন বিভাজন রয়েছে। পুরুলিয়ার কৃষকরা তাই উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন কৃষিকাজে। কারণ, প্রকৃতি সদয় না হলে চাষে পেট ভরে না। তবু এ জেলার পরিশ্রমী কৃষকরা ডালশষ্য, ভুট্টা, তৈলবীজ উৎপাদন করছেন। পাহাড়ি ঢালু জমিগুলিতে হচ্ছে অসময়ের ফুলকপি ও পেঁয়াজ। মানভুমে কৃষি দপ্তর এখন জোর দিয়েছে বাগানচাষের উপর। সাফল্যও এসেছে। একটু সেচের ব্যবস্থা হলেই সোনা ফলবে পুরুলিয়ার জমিতে। ঘুচবে এ জেলার চির খরার বদনামও।