নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ বর্তমান যুগ গতির যুগ। আর সেই গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে বর্তমান মনুষ্য সমাজও আজ ব্যস্ততার তুঙ্গে। কথায় আছে “মান” আর “হুঁশ” আছে বলেই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জীবের তকমা পেয়েছে মনুষ্য জাতি। কিন্তু কোথাও যেন আধুনিক এই সমাজ ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে তার এই মানবিকতা ও মনুষ্যত্ব। দিনের পর দিন সাধারণ মানুষের মধ্যে কমছে মানবিকতাবোধ। আজকের এই সমাজে মানবিক মুখ খুঁজে পাওয়া ক্রমেই দুষ্কর হয়ে পড়েছে। যার আরও এক ছবি উঠে এল পুরুলিয়ার ঝালদা ব্লকের ইচাগ গ্রামে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২২ বছর আগে জন্মভিটে ভেঙে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বছর ৬৫-র তরু মাহাতো নামে এক বৃদ্ধার। আর তারপর থেকে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে তারা ঠিকানা বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাত ! ভাবতেও অবাক লাগে দুদশকের বেশি সময় কেটে গেলেও ওই ওই অসহায় বৃদ্ধার করুন অবস্থার দিকে নজর যায় নি কোনও ব্যক্তি বা প্রশাসনের। অথচ শুনলে আশ্চর্য লাগবে ওই একই গ্রামেই থাকেন বাগমুন্ডি বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক নেপাল মাহাতো। কিন্তু দিনের পর দিন, বছরের পর বছর রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে রাস্তার ধারে অসহায়, অভুক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও কোনও রাজনৈতিক নেতা-নেতৃত্বদেরই নজরে পড়েনি ওই বৃদ্ধার চরম অসহায়তা। অথচ এই রাজনৈতিক দলের নেতারাই ভোটের সময় ভোট দেওয়ার জন্য বাড়ি বাড়ি থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের কোলে করে পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে যান। এই তো আমাদের সমাজ, এই আমাদের দায়বদ্ধতা। বৃদ্ধার নিজের বলতে কেউ নেই, দূরসম্পর্কের আত্মীয়রাও কাজের সূত্রে বাইরে থাকায় খোঁজ রাখে না বললেই চলে। এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বৃদ্ধার এহেন অবস্থা জানানোর পর প্রশাসনের কেউ যে তাকে দেখতে আসেন নি তেমনও না। অসহায় বৃদ্ধার সংগ্রামের ঘটনা জানার পর ঝালদা এলাকার তৎকালীন বিডিও, আই সি সহ একাধিক প্রশাসনিক আধিকারিক তরু দেবীর সঙ্গে দেখা করে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই, বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও না জুটেছে মাথা গোঁজার কোনও ঠাই, না মিটেছে দুবেলা পেট ভর্তি খাবার। কোনও দিন অভুক্ত আবার কোনওদিন কোনও সহৃদয় মানুষের দেওয়া খাবারে আধ পেটা হয়েই কাটাতে হয়েছে তরু দেবীকে। সম্প্রতি এক স্কুল শিক্ষক, নাম – জয়প্রকাশ কুইরি বৃদ্ধার এহেন অবস্থার খবর জনসমক্ষে তুলে ধরতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি তিনি। নিজের খরচে বৃষ্টি থেকে বৃদ্ধা তরু দেবী যাতে রক্ষা পান সেইজন্য ত্রিপল কিনে দেন। শুধু তাই নয়, পেশায় শিক্ষক জয়প্রকাশ কুইরি তার এক ছাত্রের সহায়তায় ওই বৃদ্ধার জন্য প্রত্যেক দিন খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য সরকারের নানান প্রকল্প যেমন- বিধবা ভাতা, গরীবের জন্য ঘর, অন্নদায় প্রকল্প সহ একাধিক যখন রয়েছে, তখন দীর্ঘ ২২ বছর ধরে এই বৃদ্ধাকে কেন এরকমভাবে অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকতে হল? একই গ্রামে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত পরপর তিনবারের বিধায়ক নেপাল মাহাতোর বাড়ি। কিন্তু, তাসত্বেও এই বৃদ্ধার অবস্থার দিকে নজর যায়নি বিধায়কেরও। সম্প্রতি সরকারী নানান প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে “দিদিকে বলো” প্রকল্প। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সমস্ত বিধায়কদের সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে তাদের অভাব-অভিযোগ শুনে তা নিষ্পত্তি করতে। কিন্তু তাই যদি হয়, তাহলে বিধায়ক নেপাল মাহাতো মহাশয় কি নিজের গ্রামকেই সরকারী প্রকল্প থেকে ব্রাত্য করে রেখেছেন? এই প্রশ্নই এখন লোকের মুখে মুখে। আর এই সমস্ত দেখে একটা উক্তিই মনে আসে, “সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ”।