সংবাদদাতা, বর্ধমানঃ- সরকারি প্রকল্প সাহায্যের লোভ দেখিয়ে এক দম্পতি কে বোকা বানিয়ে সদ্যোজাত শিশু কন্যা কে চুরির অভিযোগ এক মহিলার ওপর। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমানের অনাময় হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সন্দীপ এবং তার স্ত্রী রিমা মালিক বর্ধমানের রায়নার সিপটা উত্তরপাড়ার এলাকার বাসিন্দা। এদিন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি শিশু কন্যার জন্ম দেন রিমা মালিক। এরপর রিমা মালিক কে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে একটি গাড়ির ব্যবস্থা করা হয় রিমা মালিক কে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সন্দীপ বাবু জানান, তৎক্ষনাৎ রিয়া বন্দোপাধ্যায় নামে এক মহিলা রিমা দেবীর কাছে যায়। এরপর ওই অপরিচিত মহিলা সন্দীপ এবং রিমা মালিক কে জানায়, কন্যা সন্তানের জন্ম হলে সরকারের পক্ষ থেকে ৭ হাজার টাকা দেওয়া হয়। রিয়া দেবী ওই দম্পতির কাছে জানতে চান তারা কি হাসপাতাল থেকে ওই টাকাটা পেয়েছে। উত্তরে রিমা মালিক জানান আমরা তো কোনো টাকা পাইনি। এরপর ওই অপরিচিত মহিলা দম্পতিকে বলেন টাকা পেতে গেলে অনাময় হাসপাতালে যেতে হবে।
সরকারী সুবিধার কথা ভেবে ওই মহিলার কথা বিশ্বাস করে সরল মনে অনাময় হাসপাতালে যেতে রাজি হন সন্দীপ বাবু এবং রিমা দেবী। এরপর ওই দম্পতি একটি টোটো ভাড়া করে হাসপাতালের দিকে রওনা হন। হাসপাতালে পৌঁছে ওই মহিলা রিমা দেবীর কাছ থেকে সদ্যোজাত শিশু কন্যা কে কোলে নিয়ে রিমা দেবী কে এক জায়গায় বসতে বলেন। এবং ওই মহিলা সন্দীপ বাবু কে অন্য জায়গায় অপেক্ষা করতে বলেন। বেশ কিচুক্ষন সময় গড়িয়ে গেলে রিমা দেবী চিন্তায় সন্দীপ বাবু কে ফোন করেন। সন্দীপ বাবু জানান ওই মহিলা তার কাছে যায়নি।
এরপরই ওই দম্পতির কাছে গোটা ব্যাপারটি স্পষ্ট হয়। ইতিমধ্যেই অনাময় হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন তারা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্ব প্রাপ্ত অমিতাভ সাহা বলেন, তারা সি সি টিভি ফুটেজ চেক করে দেখেছেন এক মহিলা শিশু কন্যা কে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাটি পুলিশকেও জানানো হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সি সি টিভি ফুটেজের তথ্যটি পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ঘটনার জোরদার তদন্ত শুরু হয়েছে। এই ঘটনার কয়েক ঘন্টা মধ্যে কাঁকসা টোল প্লাজা থেকে সদ্যোজাত শিশু সহ আটক করা হয় এক মহিলাকে কাঁকসা থানার পুলিশের পক্ষ থেকে । পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ওই মহিলার বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের রায়নায়। বর্তমানে তিনি বেনাচিতি এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন গত ১৫ তারিখ দুর্গাপুরের বিধান নগরে ভর্তি হন সেখান থেকে তাকে বর্তমান মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। ১৭ তারিখ বর্ধমান থেকে ছাড়া পেয়ে রায়নায় বাপের বাড়িতে চলে যান। সেখানে যাবার পর পেটে ব্যথা উঠলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরনোর পর রাস্তাতেই সন্তান প্রসব করেন।
এরপর তাঁকে বর্ধমানের অনাময় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকে দেখে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয় বলে পুলিশকে জানিয়েছে ভদ্রমহিলা। অপরদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ওই মহিলা গতকাল সন্ধ্যে নাগাদ বর্তমানে তেলিপুকুর এলাকা থেকে বাসে চড়ে দুর্গাপুর আসছিলেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কাঁকসার টোল প্লাজার কাছে তাকে আটক করে পুলিশ। জানাগেছে মহিলার নাম মধুমিতা রায়। অপরদিকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়েছে তাতে ওই মহিলার নাম লেখা রয়েছে পিংকি ব্যানার্জি বৈরাগ্য। ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে কাঁকসা থানার পুলিশ।