সন্তোষ মণ্ডল, আসানসোলঃ- দুর্গোৎসব শুরু হয় তাঁদের দুয়োরের মাটি দিয়ে। অথচ পুজোয় তাঁরা ব্রাত্য। তাই বাড়ির কচিকাঁচা থেকে বড় সকলের মন ভারাক্রান্ত থাকত পুজোর কদিন। পুজোয় মাকে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিল না। কারণ ওরা যে সমাজের কাছে অস্পৃশ্য। ওরা মানে আসানসোলের লছিপুর, চবকা যৌনপল্লীর যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানেরা। কিন্তু গত কয়েক বছরে চিত্রটা বদলেছে। কারণ গত চার বছর ধরে যৌনপল্লীতেও শুরু হয়েছে পুজো। শুধু তাই না এবার থেকে সরকারি অনুদানও মিলছে এই পুজোতে। যৌন কর্মীদের এই পুজোয় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকেন চন্দনতলা,বটতলা, ঘাটাল সহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারাও। শুধু তাই নয় এই পুজোই হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীর নিদর্শন। এখানের পুজো শুধু হিন্দুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অংশ গ্রহণ করেন সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষজন। এই পুজো কমিটির সেক্রেটারি ও প্রেসিডেন্ট দুজনেই মুসলিম, বানেরা বিবি ও মর্জিনা বিবি।
এখানে বিশাল বাজেটের বড়সড় প্যান্ডেল বা আলোকসজ্জা না থাকলেও সাদামাটা এই পুজোয় থাকে প্রাণভরা নিষ্ঠা। এখানে নৈবিদ্যের ফল কাটা থেকে থেকে পুজোর নানান কাজে আশেপাশের গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে যৌন পল্লীর কবিতা, পায়েল, টুম্পা,লতা, রিতারাও সমান তালে হাত মেলান। পুজোর চার দিন ধরে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া থেকে ভোগ রাঁধা খাওয়া দাওয়া সবই চলে একসঙ্গে। পুজোর চারদিন আর পাঁচজন বাঙালির মতো চুটিয়ে আনন্দ করে ওরাও। পুজোকে কেন্দ্র করে যৌন পল্লীর কচিকাঁচা থেকে বৃদ্ধ সকলেই আনন্দে মেতে ওঠে।
সারা বছর যে গাঢ় অন্ধকারে ছেয়ে থাকে সমাজ থেকে ব্রাত্য এই পল্লী, মা দুর্গার আগমনে পুজোর চারদিন নিমেষে যেন সেই অন্ধকার উধাও হয়ে যায়। পল্লীবাসীর মনের মণিকোঠায় আনন্দের যে বাতি জ্বলে ওঠে সেই আলোই ঘুচিয়ে দেয় সমস্ত অন্ধকার।