জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গলসীঃ- প্রায় দু’বছর পর করোনার আতঙ্ক ও বিধিনিষেধকে দূরে সরিয়ে রেখে পালিত হলো বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। চারপাশে বাঁধনছাড়া উচ্ছ্বাস। বৃষ্টি আনন্দের পথে কিছুটা বাধা সৃষ্টি করলেও তার মাঝেও প্রায় ৩০০ বছরে ধরে নিজেদের অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখল পূর্ব বর্ধমানের গলসীর সাটিনন্দী গ্রামের পাঁজা পরিবার। জমিদার পরিবার হলেও পূর্বপুরুষদের সৃষ্ট ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছেন বংশের উত্তর পুরুষরা। অতীত ঐতিহ্যের প্রকৃত ধারক ও বাহক হিসেবে তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। গ্রামবাসীদের মতে – দিন বদলায়, পরিবারের সদস্য বদলায় কিন্তু পাঁজা পরিবারের অতীত ঐতিহ্য একই থেকে যায়।
যাইহোক প্রায় ৩০০ বছর আগে গ্রামের বনেদি পরিবার পাঁজাদের হাত ধরে রীতি মেনে শুরু হয় দুর্গাপুজো। গ্রামের মধ্যে বয়ে যায় খুশির উৎসাহ। পাঁজা পরিবারের সৌজন্যে উৎসব হয়ে ওঠে সবার। কালের নিয়মে স্বাভাবিক ভাবেই আগের জাঁকজমক অনেকটা কমলেও উদ্দীপনা কিন্তু এখনো বজায় আছে। কর্মসূত্রে রাজ্যের ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, এমনকি বিদেশে, ছড়িয়ে থাকা পরিবারের সদস্যরা পুজোর সময় হাজির হয় নিজ গ্রামে। অতীতের মত নবীন-প্রবীণের মিলিত সমাবেশ আজও দ্যাখা যায় এই দুর্গোৎসবে। পাশাপাশি দ্যাখা যায় জমিদার ও তাদের কর্মচারীদের। পুজোর সময় থাকেনা কোনো ভেদাভেদ। সবাই ফিরে যায় অতীতে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সত্যিই এএক বিরল দৃশ্য।
খাতায় কলমে পুজোটা পাঁজা বাড়ির হলেও কখন যে সেটা গোটা গ্রামের প্রতিটি পরিবারের হয়ে উঠেছে কেউ জানেনা। তাইতো আজও পুজোর সময় সবাইকেই বিনা সংকোচে আনন্দে মেতে উঠতে, পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করতে দ্যাখা যায়
পাঁজা পরিবারের অন্যতম সদস্য জয়দীপ পাঁজা বললেন- পুজোটা আমাদের কাছে নিছক একটা পুজো নয়, পরিবারের মিলনোৎসব। কর্মসূত্রে আমাদের পরিবারের অনেক সদস্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকেন। কিন্তু এই পুজোর সময় সবাই মায়ের টানে এবং পরিবারের সঙ্গে একটু আনন্দ পেতে এসে উপস্থিত হন এই গ্রামে। বছরের এই একবারই আমরা সবার সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাই।
পরিবারের আর এক সদস্য শান্তনু পাঁজা বললেন- পেশাগত কারণে আমি বর্ধমান শহরে থাকি। বছরের বিভিন্ন সময় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যাই। কিন্তু পুজোর সময় মন গ্রামের জন্য ছটফট করে। সবার সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাই। সত্যিই সে এক আলাদা আনন্দ।