সংবাদদাতা,বাঁকুড়া:– স্বজনহীন এক বৃদ্ধার সৎকারের ব্যবস্থা করে নজির গড়ল বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী ব্লকের রাধামোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নিত্যানন্দপুর মিনি মার্কেটের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। শুধু সৎকার বললে ভুল হবে বৃদ্ধার ছেলে হয়ে মুখাগ্নি থেকে শুরু হিন্দু রীতি নীতি মেনে সমস্ত সংস্কার পালন করলেন স্থানীয়রা। এমনকি মৃত্যুর আগে শেষ সময়েও বৃদ্ধার দেখভালের দায়িত্বও তুলে নিয়েছিলেন তাঁরা।
অদ্ভূদ বিষয় হল যার জন্য এতো আয়াজন তাঁর নামই জানেন না, এলাকার কেউ। এলাকায় সকলের কাছে ‘মাসি’ নামেই পরিচিত ছিলেন বৃদ্ধা। তবে বৃদ্ধার বাড়ি কোথায়, তাঁর বংশ পরিচয়, আত্মীয় পরিজনের বিষয়ে কিছুই জানা নেই স্থানীয় কারো। জানা গেল বছর ২৫ আগে হঠাৎ এই বাজারে এসে হাজির হয়েছিলেন বৃদ্ধা। তার পর বাজার এলাকাতেই থেকে যান। বিভিন্ন দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। থাকতেন একাই। তবে ক্রমে ভালোবাসায় আপন করে নেন বাজারের সকলকে। জানা গেল সবার খোঁজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি বাজার এলাকাটি যাতে পরিস্কার পরিছন্ন থাকে সে বিষয়ে সব সময় সজাগ থাকতেন বৃদ্ধা। বাজারের আপামর ব্যবসায়ীরাও মায়ের চোখেই দেখতেন তাঁকে। অপরদিকে মায়ের মতোই পুরো বাজারকে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে যেন আগলে রেখেছিলেন নাম না জানা অচেনা ওই বৃদ্ধা।
সম্প্রতি বদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়লে বাজার কমিটির লোকজনই তাঁর দেখভালের দায়িত্ব তুলে নেন। অবশেষে মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। আর নাম না জানা স্বজনহীন এই বৃদ্ধার মৃত্যুতে যেন শোকের ছায়া নামে বাজার এলাকায়। বাজারের ব্যবসায়ী সন্তানরাই তাঁর সৎকারের সিদ্ধান্ত নেন। এদিন রীতিমো ব্যান্ড পার্টি এনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে দামোদরের ঘাটে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় সবার প্রিয় ‘মাসি’র। যার কেউ নেই সেই একাকিনীকেই চোখের জলে বিদায় জানাল এলাকার শতাধিক মানুষ।