eaibanglai
Homeউত্তর বাংলাতৃণমূল ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং অশনি সংকেত

তৃণমূল ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং অশনি সংকেত

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতাঃ- ডানপন্থী দলগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য কি?- এটা যদি কোনো ক‍্যুইজের প্রশ্ন হয় তাহলে রাজনৈতিক সচেতন সবার উত্তর একটাই হবে – গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এদেশের সবচেয়ে পুরনো ডানপন্থী দল হলো কংগ্রেস। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করার প্রায় শুরু থেকেই কংগ্রেসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব লেগেই আছে। চরমপন্থী ও নরমপন্থী দ্বন্দ্ব দিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। সুভাষ বনাম গান্ধীজীর বিরোধ তো সর্বজনবিদিত। ইতিহাসের প্রশ্নপত্রের কম্পালসারি প্রশ্ন। তবে সেই বিরোধ ছিল আদর্শগত বিরোধ। দেশের স্বাধীনতার পথ কেমন হবে সেটা নিয়ে বিরোধ। মত যাইহোক না কেন সবার লক্ষ্য ছিল দেশের স্বাধীনতা। সেখানে ব্যক্তি স্বার্থ বা ক্ষমতা দখলের লড়াই ছিলনা। যদিও ইতিহাসবিদদের মধ্যে এটা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। আমাদের আলোচ্য বিষয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।

কিন্তু বর্তমান গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব পুরোপুরি ক্ষমতা দখলের লড়াই। কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া ডানপন্থী দলগুলোর প্রত্যেকে নিজেকে অন্যের থেকে বেশি জনপ্রিয় মনে করে। অথচ বাস্তবে নিজের পরিবারের সদস্যদের ভোট হয়তো সে পায়না। তার ক্ষমতার উৎস হলো বাহুবল, বন্দুকের নল ও অর্থ। তৃণমূল কংগ্রেসও তার ব্যতিক্রম নয়।

১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম দিকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছিলনা। বিপর্যয় শুরু হয় ২০১১ সালে ক্ষমতা লাভ করার পর থেকেই। এতদিন যারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সিপিএমের হার্মাদদের বিরুদ্ধে লড়াই করত ক্ষমতা লাভ করার পর এক শ্রেণির পদাধিকারীর মনোভাবটা পাল্টে গ্যালো। দলে নিজের পয়েন্ট বা গুরুত্ব বাড়ানোর তাগিদে ধীরে ধীরে দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধাদের সরিয়ে দিয়ে অন্য দল বিশেষ করে সিপিএম থেকে আসা কর্মীদের সামনে নিয়ে এলো। এরা বুঝতেই পারলনা বিপদের সময় প্রতিবেশীরা পাশে থাকে অন্য কেউ নয়। দলের মধ্যে সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শুরু এবং অনেকের মতে এর আমদানি মুকুল রায়ের হাত ধরে। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গ্যাছে স্বয়ং দলনেত্রী বলার পরেও পুরনোরা গুরুত্ব পাচ্ছেনা। এটা ঠিক পুরনোরা সরবে নতুনরা আসবে। তার জন্যেই তৃণমূলে একগুচ্ছ নতুন প্রতিভাকে দ্যাখা যাচ্ছে। গত বিধানসভা ভোটে তারা নিজেদের যোগ্যতাও প্রমাণ করেছে। তারজন্য পুরনোদের অবহেলা করার প্রয়োজন কোথায়?

সম্প্রতি তৃণমূলের সংগঠনের বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে। বহু ক্ষেত্রে ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি কার্যকর হয়েছে। প্রথমে অন্তত দশটি জেলার জেলা সভাপতি এবং পরে ধীরে ধীরে অনেক ব্লকের ব্লক সভাপতি পদের পরিবর্তন হয়েছে। বেশ কিছু জেলাকে সাংগঠনিক জেলা হিসাবে ভাঙা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর পূর্ব বর্ধমানের তিনটি ব্লককে বীরভূমের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর হয়তো হবে পঞ্চায়েত ও বুথ স্তরের পরিবর্তন।

ব্লক সভাপতি পরিবর্তনের পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও নিজের পচ্ছন্দ মত ব্লক সভাপতি হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়কের গোঁসা হয়েছে। কোথাও বা ব্লক সভাপতি পরিবর্তনের দাবিতে রাস্তা অবরোধ পর্যন্ত হয়েছে। কোথাও আবার বিধায়ক নতুন সভাপতির পরিবর্তে পুরনো সভাপতির সঙ্গে কাজ করতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। ফলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চোরাস্রোত সেই সব জায়গায় বয়ে চলেছে।

মনে হয় অঞ্চল সভাপতি পরিবর্তনের সময় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও ঘোরালো হবে। শোনা যায় বিভিন্ন এলাকার অঞ্চল সভাপতি মনোনয়নের সময় মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতার পরিবর্তে নিয়োগ কর্তার প্রতি আনুগত্য বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। ২০১৯ এর লোকসভা বা ২০২১ এর বিধানসভা ভোট পর্যালোচনা করলেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। এদের অধিকাংশ ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের অনেক পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছে ও এসেই পদ পেয়েছে এবং দলের পুরনো দিনের কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব‍্যবহার করেছে। এদের সামনে রেখে পঞ্চায়েত ভোট হলে বেশ কিছু পঞ্চায়েত নিশ্চিতরূপে তৃণমূলের হাতছাড়া হচ্ছে। এখন দ্যাখার পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব কিভাবে বিষয়টি সামাল দেয়।

নীচু তলার তৃণমূলের একশ্রেণীর নেতাদের আয়ের উৎস হলো ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি, উপভোক্তাদের কাছ থেকে আবাস যোজনা বাবদ কাটমানি আদায় করা ও অবৈধ বালি খাদান। দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্র সরকার অর্থ বন্ধ করে দেওয়ায় প্রায় ১৪ মাস ধরে ১০০ দিনের কাজের টাকা পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। যদিও জানা যাচ্ছে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর নাকি কেন্দ্র সরকার টাকা দিতে রাজি হয়েছে। যদি সত্যি হয় তাহলে এবার সরকার মনে হয় দুর্নীতিবাজ নেতাদের রাশ টেনে ধরবে। আবাস যোজনাতেও একই সমস্যা। কাজ করেও টাকা পাওয়া যাচ্ছেনা। সিবিআইয়ের চাপে আগের মত বালি লুঠ হচ্ছেনা। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য হয়তো ‘সুখের পায়রা’ অনেক তৃণমূল নেতা দায়িত্ব নিতে চাইবেনা। সবই অনুমান। বাকিটা সময় বলবে। তবে দুর্নীতির রাশ টানতে না পারলে কংগ্রেসের মত তৃণমূল কংগ্রেসের নামও এই রাজ্যে ইতিহাসের পাতায় উঠে যাবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments