নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- একই নম্বর প্লেটের দুটি পুলকার গাড়ি আটক হওয়ার পর থেকে খোঁজ-খবর শুরু হয়েছিল ওই গাড়ির বৈধ মালিকের। অবশেষে তিনদিন পরে দেখা মিলল সেই জাল নম্বর প্লেটের দুটি পুলকার চালানোর দায় অভিযুক্ত ব্যক্তি, সুশান্ত মন্ডল এর।
এদিন সকালে দুর্গাপুর পুলকার অ্যাসোসিয়েশন এর কর্মকর্তারা তাদের সদস্যদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন দুর্গাপুর ডি এ ভি মডেল স্কুলের সামনের বাসস্ট্যান্ডে। হঠাৎই একই নম্বরে দুটি পুলকার চালানোর দায়ে অভিযুক্ত সুশান্তকে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন উপস্থিত সকলে। অভিযুক্ত সুশান্ত মন্ডল দুর্গাপুর মায়াবাজার সংলগ্ন আশীষ নগরের বাসিন্দা। এদিন তিনি নিজে থেকেই স্কুলের সামনে এসেছিলেন পুলকার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার উদ্দেশ্যে।
সুশান্ত মন্ডল এদিন স্বীকার করেন তিনি জেনেশুনে তার একই নম্বরের দুটি পুলকার চালিয়ে ছিলেন। তিনি আরো জানান, টাকার অভাবে ডাবলু বি ৬৭- ৯৯৯২ নম্বরের গাড়িটির ইন্সিউরেন্স ও ট্যাক্স বহুদিন ফেল হয়েছিল। তার কাছে ওই ইন্সুরেন্স ও ট্যাক্স দেওয়ার মতন পর্যাপ্ত পরিমাণের টাকা না থাকার ফলে তিনি বাধ্য হয়ে এই কুকর্মটি করেছেন। তার এই কুকর্ম ও জালিয়াতির ফলে দুর্গাপুর পুলকার অ্যাসোসিয়েশন ও তার সদস্যরা সামাজিক ভাবে অপদস্ত হয়েছেন জেনে এদিন তিনি করজোড়ে ক্ষমাপ্রার্থী হন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দদের সামনে। এদিন সুশান্ত মন্ডল উন্মুক্ত কন্ঠে জানান, তার কৃতকর্মের জন্য তিনি পুলিশ প্রশাসনের দেওয়া সাজা মাথা পেতে নেবেন। কিন্তু তিনি আর্থিকভাবে দুর্বল বলেই, পরিবারের ভরণ পোষণ করার উদ্দেশ্যেই তিনি এই কুকর্ম ও জালিয়াতিটি করেছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি এও জানান, তার এই জালিয়াতির ফলে যার বা যাদের সম্মানে আঘাত হয়েছে তিনি তাদের সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আর তিনি কখনো করবেন না বলেও এদিন তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ হলেন পুলকার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সামনে।
অন্যদিকে দুর্গাপুর পুলকার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা টোটন দাস জানান, “দুর্গাপুরের সমস্ত স্কুলে চলা তাদের পুলকার গুলির সমস্ত রকম বৈধ কাগজপত্র বহন করেই চলাচল করে। কিন্তু বেশ কিছু এমন গাড়ি রয়েছে যেগুলি ব্যক্তিগত ভাবে বাচ্চা নিয়ে যাওয়া-আসা করে নিজেদের দায়িত্বে আর সেই সকল গাড়ি মালিকদের ব্যবহার ও তাদের জালিয়াতির জন্য সুনাম নষ্ট হচ্ছে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের।” এদিন তিনি দাবি করেন, অবিলম্বে সরকার ওই সমস্ত গাড়িগুলিকে বাজেয়াপ্ত করে আইন মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা করুক। এদিন তিনি আরো জানান, “দুর্গাপুর পুলকার অ্যাসোসিয়েশনের সমস্ত সদস্য প্রতিটি বাচ্চাকে নিজেদের সন্তান সমূহ ভালোবাসা ও সুরক্ষা দিয়ে প্রতিদিন বাড়ি থেকে স্কুল ও স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করেন এবং তা যথাসাধ্য চেষ্টা করেন সুরক্ষিত ভাবে করার। দুর্গাপুরে একই নম্বরের দুটি পুলকার চলাচলের ঘটনায় আমরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। আগামী দিনে আমরা আমাদের সদস্যদের অনুরোধ করেছি যাতে এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয় সব সময়। যদি এমন কোন গাড়ি বা গাড়ির চালক সম্বন্ধে কোন খবর আমরা পাই আমরা তৎক্ষণাৎ প্রশাসন ও পুলিশকে তা খবর দিয়ে জানিয়ে দেবো বলে সদস্যদের আগেই জানিয়ে দিয়েছি।”
অন্যদিকে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন দেখে যে অভিযুক্ত সুশান্ত মন্ডল এখনো উন্মুক্ত অবস্থায় রাস্তায় ঘোরাফেরা করছেন। অভিভাবকদের অভিযোগ হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও কি করে পুলিশ প্রশাসন এই জালিয়াত কে ছেড়ে দিয়ে রেখেছেন । ” আমরা আমাদের সন্তানদের সুরক্ষা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত রয়েছি। অবিলম্বে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে এই ধরনের আরো যে সমস্ত পুলকার অবৈধভাবে চলাচল করছে, তাদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য দুর্গাপুর মহকুমা শাসককে অনুরোধ জানাচ্ছি বলে জানান এক অভিভাবক।”
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে এই প্রথমবার একই নম্বরের দুটি পুলকার গাড়ি উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই নড়ে চড়ে বসেছে প্রশাসন ও পুলিশ। সুত্র মারফত জানা গেছে ইতিমধ্যেই দুর্গাপুর মহকুমা শাসকের দপ্তর থেকে পুলকার অ্যাসোসিয়েশন ও পুলিশকে পুলকার গুলির বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করে তার দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়েছে। এখন দেখার কখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয় এই সমস্ত জালিয়াত পুলকার গাড়িগুলির ওপর।