মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- রাষ্ট্রায়ত্ব ইস্পাত কারখানাগুলিতে পরপর দুর্ঘটনা এবং শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসেরই চাপে এবার রাজ্য সরকার নিয়োজিত ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টর। তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আই.এন. টি. টি. ইউ. সি.র পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক বললেন, “এই ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টর কোনো কোনো কারখানার সাথে কম্প্রোমাইজ করছেন কিনা তা এখন বলছি না। তবে, এটা সত্যি যে কারখানাগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন যে হয় না, তা বোঝাই যায়।” তিনি বলেন, “রাজ্যের শ্রমদপ্তর এখানকার কারখানাগুলিতে দুর্ঘটনায় ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরের কোনো গাফিলতি আছে কিনা খোঁজার জন্য ইতিমধ্যেই একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শীঘ্রই সেই তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করি।”
আসানসোল- দুর্গাপুরের কলকারখানাগুলিতে লাগাতার দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। ঘটছে শ্রমিক মৃত্যুও। শ্রমিকদের এই মৃত্যু মিছিল নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষের যেমন গাফিলতির নিদর্শন পাওয়া গেছে, তেমনই আবার কারখানাগুলির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরের শুধুমাত্র গাফিলতি বা গড়িমসি মনোভাবই নয়, অভিযোগ উঠছে তিনি বেশ কিছু কারখানার কর্তৃপক্ষের সাথে অন্য উপায়ে ‘মধুর সম্পর্ক’ বজায় রেখে চলেন। তিনি রাজ্য সরকারি আধিকারিক, অথচ থাকেন অভিযুক্ত দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার অতিথি নিবাসে। ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টর অনিমেষ প্রামানিক অবশ্য দাবি করেন, “আমি ভাড়া দিয়ে থাকি। ভাড়ার রশিদও আমার কাছে আছে।” তা হয়তো উনি জোগাড় করে নেন, তবে ডিএসপিরই বেশ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন বারে বারে তার এই ‘টেগর হাউসে’ বসবাস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কারখানার সিটু ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক সৌরভ দত্ত রবিবার বলেন,”ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরের কাজকর্ম আমাদের নজরে আছে। আমরা এটাও ভাবছি উনি পরপর শ্রমিক মৃত্যুর পরও কেমন রিপোর্ট দিচ্ছেন যে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ যাকে বলে দারুন নিশ্চিন্তেই রয়েছে। এসব তো এবার চুল চেরা বিশ্লেষণের সময় এসেছে।” কারখানার প্রধান শ্রমিক সংগঠন সিটু। সিটুর মনোভাবের যা আঁচ পাওয়া গেল, বোঝাই গেল বিতর্কিত প্রামানিককে নিয়ে সত্বর তারা আন্দোলনে যাবেন। এরই মাঝে প্রামানিকের চিন্তা বাড়িয়ে রাজ্যের শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা অভিজিৎ ঘটকও ইঙ্গিত দিয়েছেন ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরের সন্দেহজনক কাজকর্মের বিষয়ে। তিনি বলেন,”বেচারাম মান্না শ্রমমন্ত্রী থাকার সময় কয়েকবারই আমরা কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও নিয়মিত পরিদর্শন নিয়ে প্রশ্ন তুলে চিঠি দিয়েছি। আমরা এটাও মনে করি যে এইসব ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরদের আরো বেশি সক্রিয় হওয়া দরকার।”
আই.এন.টি.টি.ইউসি গত সপ্তাহেই ডি.এস.পি.তে বারবার শ্রমিক মৃত্যু নিয়ে একটি বড় ডেপুটেশন দেয়। ঘটক বলেন, “পরপর দুর্ঘটনার পরে পরেই ডিএসপি দুজন আধিকারিককে সাসপেন্ড করেছে। যা দিয়েই বোঝা যায় যে ডিএসপি তার ভুল কার্যতঃ মেনেই নিয়েছে।” ঘটক বিষয়টি নিয়ে দুর্গাপুর ইস্পাতের ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর বি.পি.সিংহের সাথে বৈঠকও করেন। তিনি বলেন, “আমরা বারবার বৈঠকে শ্রমিক নিরাপত্তার দাবি তুলেছি। রাজ্যের বর্তমান শ্রমমন্ত্রীও রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানাগুলির কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন।” গাফিলতের কথা ডি.এস.পি মানছে, ঘটক মানছেন, সিটুও মানছে। বিতর্কিত সেই প্রামানিক কি মানছেন ?