স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুরঃ গৃহস্থের বাড়িতে ঢুকে গহনা ঝকঝকে করে দেওয়ার নামে সোনা রূপোর গহনা সাফাই করার একটি কেপমারি গ্যাং শহর দুর্গাপুরের পাড়ায় পাড়ায় হানা দিচ্ছে। ঐ গ্যাং ইতিমধ্যেই দু লক্ষ টাকার সোনার গহনা হাতিয়ে নিয়েছে ইস্পাত নগরীর বাসিন্দা এক অবসরপ্রাপ্ত মিশ্র ইস্পাত কর্মীর বাড়ি থেকে। এত ঘটনার পরও আশ্চর্যজনক ভাবে নির্বিকার শহরের পুলিশ কমিশনারেট। একটি সূত্র জানিয়েছে, পরপর হানাদারির ঘটনা ঘটেছে অথচ এতশত সিসিটিভি তে মোড়া আধুনিক দুর্গাপুর শহরের ‘স্মার্ট’ পুলিশ এখনো থৈ খুঁজে পেলনা এই কেপমারের দলটির।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ছয় সাত জন অবাঙালি যুবকের ঐ দলটি শুক্রবার শহরের তিনটি জায়গায় হানা দেয়। এর মধ্যে ইস্পাত নগরীর এ-জোন এলাকার সেকেন্ডারি রোড এলাকার বাসিন্দা অরূপ চৌধুরীর বাড়ি থেকেই দু লক্ষ টাকার সোনার গহনা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। তারপর থেকেই তারা বেপাত্তা। শনিবার নতুন করে অবশ্য তাদের কীর্তিকলাপের কোনো ঘটনার কথা জানা যায়নি।
অরূপ চৌধুরী জানান, “তিন জনের দলটির একজন মোটর সাইকেলে বসেছিল আর দুজন ‘গায়ে পড়ে উপকার’ করার কায়দায় প্রায় জোর করেই ঘরে ঢুকে পড়ল। এসেই বলল – ওরা একটি বিশেষ একটি কেমিক্যাল ডাস্ট এনেছে, যা দিয়ে ঘর গেরস্থালির থালা, বাসন পরিস্কার করে নাকি একেবারে ঝকঝকে করে দেওয়া যায়। একটা বাটি দিলাম, সত্যিই দারুন চকমকে করে দিল।” তিনি বলেন, “এরপরই ওরা বলল – পুরোনো গয়না থাকলে আনুন, একেবারে নতুন করে দেব। প্রথমে আমার হাতের আংটি টা, পরে আরো দুটো সোনার আংটি, আর আমার মেয়ের সোনার হার সবই ঝকঝকে করানোর লোভে একে একে তুলে দিলাম ওদের হাতে। ওরা একটি একটি করে নিচ্ছে আর পরিস্কার করে কাগজের প্যাকেট করে ক্লিপ লাগিয়ে একপাশে রাখছে। এরপর চলে যাওয়ার সময় আমার হাতে ওরা ঐ প্যাকেটগুলো দিয়ে চলে গেল। ওরা চলে যেতেই খুলে দেখি সব প্যাকেটগুলোই বিলকুল খালি। তখনই বুঝতে পারি ওরা কেপমারি গ্যাং। সকলেই হিন্দিতে কথা বলছিল। ওদের একজনের কপালে লম্বা তিলক ছিল।”
চৌধুরী ও তার পরিবারের হুঁশ ফেরার আগেই কেপমারের দলটি পগারপার। দিনেদুপুরে সবকিছু এভাবে লুঠ হয়ে যাওয়ার পর পরিবারটি দুর্গাপুর থানায় সবকিছু জানিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশের দাবি, তদন্ত শুরু করা হয়েছে, কিন্তু লুঠেরাদের কোনো সন্ধান মেলেনি।
চৌধুরী পরিবারে কেপমারের দলটি হানা দেয় বেলা সাড়ে তিনটা নাগাদ। বেলা ১০ টায়, ঐ দলেরই চারজন স্থানীয় বিধাননগর লাগোয়া ফার্টিলাইজার কলোনির ৪০০ মোড়ের একটি ঘরে হানা দিয়ে ব্যর্থ হয়, বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এরপরই, ঐ একই দল হানা দেয় শহরের সিটিসেন্টারের নন্ কোম্পানি পাড়ার আলাউদ্দিন খান বীথির একটি বাড়িতে। ঠিক বেলা সাড়ে ১২ টায়। গৃহকর্তা সঞ্জয় রায় বলেন, “ওরা বাসনপত্র পরিস্কার করার কেমিক্যাল ডাস্ট বিক্রি করার নামে আসে। বলে একটা ফ্রী স্যাম্পল দিচ্ছে, নেওয়ার জন্য দরজা খুলতে হবে। আমরা নিতে চাইনি। ওরা বারবার দরজা খোলার জন্য আব্দার করছিল।” তিনি বলেন, “একতলায় আমার দিদি হঠাত্ দরজা খুলতেই দুজন হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে আর ওদেরই একজন কিন্তু তখন মোটর সাইকেলে বসেছিল। ওদের কপালে তিলক কাটা, কথা বলছিল হিন্দিতে।” সঞ্জয় বলেন, “একটা বাটি পরিস্কার করে ওরা দিদিকে কানের সোনার দুলটা খুলে দিতে বলে। সেটা শুনতে পেয়ে, তখনই আমাদের পাশের বাড়ির ভদ্রলোক কিছু একটা আন্দাজ করে চিৎকার করে দিদিকে নিষেধ করামাত্রই ওরা দৌড়ে পালায়।” ওরা চলন্ত মোটর সাইকেলে চেপে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়, বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
উল্লেখ্য, শহরের বেনাচিতি এবং মেইনগেট এলাকায় এবছরের গোড়ার দিকে একই কায়দায় দুটি বাড়িতে গহনা লুঠের ঘটনার কথা জানা যায়।