জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,দুর্গাপুরঃ- প্রতি বছরের মত এবছরও গত ১লা জানুয়ারি পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের গ্যামন ব্রিজ লাগোয়া মাঠে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী তথা দুর্গাপুরের শ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক মেলা কল্পতরু উৎসব। প্রথম দিনেই নেমেছে মানুষের ঢল। জানা যাচ্ছে এবছরও মেলা চলবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
কল্পতরু উৎসব হল হিন্দুদের একটি উৎসব। রামকৃষ্ণ মঠের সন্ন্যাসী ও মিশনের গৃহীদের হাত ধরে ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি এই উৎসব শুরু হয়। কথিত আছে এইদিন রামকৃষ্ণ পরমহংস কাশীপুর উদ্যানবাটিতে কল্পতরু হয়েছিলেন এবং নিজের শিষ্যদের, বিশেষ করে নাট্যাচার্য গিরিশ ঘোষের, কাছে নিজেকে ঈশ্বরের অবতার বলে ঘোষণা করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন গিরিশ ঘোষই নাকি তাঁকে ‘ঈশ্বরের অবতার’ বলেন। যাইহোক সেই থেকে এই দিনটির স্মরণে দক্ষিণেশ্বর, কাশীপুর উদ্যানবাটি, বেলুড় মঠ, দুর্গাপুর সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত হয় কল্পতরু উৎসব।
অন্যান্য বারের মতো এবারও কল্পতরু উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হলো কৃষি মেলা ও বই মেলা। সঙ্গে অন্যান্য সামগ্রীর দোকান তো আছেই। প্রতিদিন থাকছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
তবে অসংখ্য ভিড়ের মাঝে এবারের মেলায় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ‘বাংলার মুখ’ নামক স্টলটি। বাঙালির ভাবাবেগ ও জাতিসত্ত্বা জাগ্রত করার লক্ষ্যে প্রথম বারের জন্য এই স্টলটি শুরু করা হয়। এই স্টলের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুর্গাপুরের বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা বিখ্যাত চিকিৎসক ড.উদয়ন চৌধুরী সহ দুর্গাপুরের বিভিন্ন খ্যাতনামা সাহিত্যিক, শিক্ষক সহ বহু সুপরিচিত মুখ।
‘বাংলার মুখ’- এর অন্যতম উদ্যোক্তা সোমনাথ লাহা বললেন – গত কয়েক বছর ধরে দ্যাখা যাচ্ছে দুর্গাপুরের বুকে বাঙালিরা বাংলা বাদ দিয়ে নিজেদের মধ্যেও অন্য ভাষায় কথা বলছে। এ বড় লজ্জার! আমরা সমস্ত ভাষাকে সম্মান করি। কারণ ভাষা হলো ‘মা’। আমরা চাই হীনমন্যতায় না ভুগে, একান্ত প্রয়োজন না পড়লে, প্রত্যেক বাঙালি বাংলা ভাষায় কথা বলুক। শুধু তাই নয় সর্বভারতীয় বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বা ফর্মে বাংলা ভাষা রাখা বাধ্যতামূলক করা হোক। তিনি আরও বললেন – এই স্টলের মাধ্যমে তারা বাংলা ও বাঙালির মানকে দুর্গাপুরের বুকে আরও উচ্চতর মাপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সচেষ্ট হবেন এবং বাঙালির অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ‘বাংলার মুখ’ আরও সক্রিয় হবে। তিনি বাঙালিদের এই সংস্হার সদস্য হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। তবে একইসঙ্গে তিনি এটাও বললেন – বাঙালির অধিকার রক্ষায় এই সংস্হা কাজ করলেও কোনো সংকীর্ণ ভাবধারায় তারা বিশ্বাসী নন। কারণ আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা ভারতবাসী।