নিজস্ব সংবাদদাতা, জামুরিয়াঃ- মা ও মেয়েদেরকে ফুটবল খেলার প্রতি উৎসাহ বাড়াতে অভিনব উদ্যোগ রাস্তার মাস্টারের ‘মহিলা’ ফুটবল দলের কথা হয়ত অনেকেই শুনেছেন কিন্তু ‘মায়েদের’ ফুটবল দলের কথা কি আপনি কখনো শুনেছেন? ফুটবল সম্রাট পেলেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও বাদনা উৎসব উপলক্ষে এক অভিনব ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা রাস্তার মাস্টার দীপ নারায়ান নায়ক। এই প্রতিযোগিতাকে অভিনব বলার কারণ এখানে শুধুমাত্র পুরুষ ও মহিলা ফুটবল দল নয় বিবাহিত পুরুষ ও বিবাহিত মহিলাদের দল গঠন করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে মেয়েদের ফুটবল টিম ও মায়েদের ফুটবল টিম এর মুখ্য উদ্দেশ্য একটাই মায়েদের খেলতে দেখে তাদের মেয়েদের ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তোলা।
আজ জামুরিয়া ব্লকের অন্তর্গত আলিনগর আদিবাসী গ্রামের ফুটবল ময়দানে এমনই এক অভিনব ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলো।আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম বর্ধমান সভাধিপতি মাননীয়া সুভদ্রা বাউরি মহাশয়া, পূর্বতন সভাধিপতি বিশ্বনাথ বাউরী মহাশয়, বিশিষ্ট সমাজসেবী সিদ্ধার্থ রানা মহাশয়, শ্যামলা পঞ্চায়েত প্রধান কাজলি মণ্ডল মহাশয়া,সমাজসেবী ভীম সেন তাপস মন্ডল, দিব্যেন্দু মন্ডল প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সম্বন্ধে মাননীয়া মাননীয়া সভাধিপতি মাননীয় সুভদ্রা বাউরি মহাশয়াকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি রাস্তার মাস্টারের ভূয়শী প্রশংসা করে বলেন, এইরকম একটি মায়েদের ফুটবল টুর্নামেন্টের থাকতে পেরে বেশ আনন্দিত বোধ করছি। এই জাতীয় উদ্যোগ আগামী দিনে মহিলা ফুটবলকে অনেক আগে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী। আজকের খেলার একজন খেলোয়াড় তথা মা চাঁদনী মাঝিকে তার অনুভূতি সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ছোট থেকে ফুটবল খেলতে ভালোবাসি কিন্তু আমার বিবাহ হওয়ার পর আমার ফুটবল খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ‘রাস্তার মাস্টার’ এর উদ্যোগে আমি আবার ফুটবল খেলছি। আমার গ্রামের বোন-মেয়েদেরকে ফুটবল খেলা শেখাচ্ছি। স্যার আমাদের ফুটবল সহ খেলার যাবতীয় সামগ্রী প্রদান করে ট্রেনিং দেওয়াচ্ছেন। আরেক খেলোয়াড় তথা মা টুম্পা বাউরী বলেন,আমি দিনমজুরের কাজ করি, আমার একটি ১৩ বছরের মেয়ে আছে। রাস্তার মাস্টারের উৎসাহে এখন আমিও খেলছি। আমার মেয়ে আগে খেলত নাই খেলতে বললে লজ্জা পেত, আমাকে খেলতে দেখে এখন খেলছে, এখন সে টিমের ক্যাপটেন।
আজকের অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা রাস্তার মাস্টার দীপ নারায়ান নায়ককে আজকের প্রতিযোগিতা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,এই কর্মসূচির মুখ্য উদ্দেশ্য দুটি। প্রথমটিঃ শুধুমাত্র বিবাহ হয়ে যাওয়ার কারণে ও অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে যে সমস্ত দক্ষতা সম্পন্ন প্রতিভাবান মেয়েরা খেলা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, তাদের পাশে দাঁড়ানো। দ্বিতীয়টিঃ মেয়েরা মায়েদেরকে অনুকরণ করতে ভালোবাসে, এটি শিশুদের একটি সহজাত ধর্ম। আমি তাদেরই সহজাত ধর্মকে তাদের ফুটবল খেলার প্রতি উৎসাহ বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করেছি। এই কাজে আমি যথেষ্ট সফল হয়েছি। তার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাবো আমার সকল মায়েদেরকে, যারা তাদের বয়সকে বার্ধক্য নয় জার্সির একটি সংখ্যা হিসেবে দেখিয়ে জগতের সামনে নতুন দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এর আগে ‘রাস্তার মাস্টার’ মেয়েদের মাধ্যমে তাদের নিরক্ষর মায়েদেরকে সাক্ষরতার অভিযান কর্মসূচি করেছেন এবার মায়েদের মাধ্যমে মেয়েদের খেলার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর অভিযান কর্মসূচি করলেন।