সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী)ঃ- ভক্তদের সাথে সব সময় লীলা করে থাকেন জগতের নাথ জগন্নাথ। জগন্নাথের বন্ধু মহন্তির প্রতি জগন্নাথ দেব কীভাবে কৃপা করেছেন তার কাহিনী আজকে আপনাদের বলবো। জগন্নাথ দেবের ভক্ত মহান্তি পুরীতে বসবাস শুরু করবার আগে কটকের একটি গ্রামে থাকতেন এবং তিনি জগন্নাথ দেবের নিত্য সেবা করতেন। জগন্নাথ দেবকে ভোগ নিবেদন না করে তিনি ভোগ গ্রহণ করতেন না, একবার তার গ্রামে প্রচন্ড দুর্ভিক্ষ হয় এই কারণে তিনি পুরীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পুরী পৌঁছতে তার অনেক রাত হয়ে যায় আর তিনি ক্ষুধা তৃষ্ণায় ক্লান্ত হয়ে মন্দিরের উল্টো দিকে আশ্রয় নেন।
কিছুক্ষন পর একজন ব্যাক্তি তাকে হঠাৎ একটি বড় থালায় করে খাবার দিয়ে যায়, ক্লান্ত মহান্তি লোকটির পরিচয় না জেনেই খাদ্য খেতে শুরু করেন এবং কিছুক্ষণ পর দেখেন লোকটি কখন চলে গিয়েছেন। মহান্তি খাওয়ার থালাটি নিজের কাছে রেখেই সে রাতে ঘুমিয়ে পরেন। অন্যদিকে পরদিন সকালে পুরীর মন্দিরে হইচই শুরু হয়ে যায় কারণ জগন্নাথ দেবের একটি সোনার ভোগ থালার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। পুরীর রাজার সিপাহিরা এই থালাটির তল্লাশি শুরু করলে বন্ধু মহান্তির কাছ থেকে তারা থালাটি পান। যদিও কেউই বুঝতে পারেন না যে, মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে থালাটি চুরি করা সম্ভব?
কিন্তু তবুও দেবতার সোনার থালা চুরি করার অপরাধে রাজার বিচারে মহান্তির কারাদন্ড হয়। যেদিন মহান্তির বিচার হয় সেইদিন রাতেই পুরীর রাজা জগন্নাথদেবের কাছ থেকে স্বপ্নাদেশ পান। জগন্নাথ দেব স্বপ্নে রাজাকে দর্শন দিয়ে বলেন যে, মহান্তি নির্দোষ, জগন্নাথদেব নিজেই থালায় করে ভোগ নিয়ে অভুক্ত মহান্তিকে খেতে দিয়েছেন এরপর বন্ধু মহান্তি কারাগার থেকে ছাড়া পান।
আর পুরীর রাজা তাকে মন্দিরের দক্ষিণ দরজার কাছেই একটি আশ্রয়স্থল নির্মাণ করে দেন,নিজের পুরো জীবন জুড়ে মহান্তি ওখানেই বাস করতেন,ওখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন- এই ঘটনার পর থেকে আজও পুরীতে কেউ অভুক্ত থাকে না। মন্দির কমিটির প্রসাদ যে কোনো অভুক্ত লোককে বিনা দামে দেওয়া হয়। তাই তো জগন্নাথদেব ভক্তের ভগবান!