eaibanglai
Homeউত্তর বাংলাঅযথা আতঙ্ক নয়- ওদের বাঁচতে দিন

অযথা আতঙ্ক নয়- ওদের বাঁচতে দিন

অদিতি গাইনঃ- বর্ষাকাল শুরু হতে চলেছে। গ্রাম বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বের হতে থাকবে বিভিন্ন ধরনের সাপ। এদের কোনোটা বিষধর, কোনোটা নির্বিষ। সঙ্গে বাড়বে মানুষের আতঙ্ক। সেটা স্বাভাবিক। ‘সাপ’ শব্দটা মাত্র দু’টো বর্ণের হলেও না চেনার জন্য অযথা আতঙ্ক গ্রাস করে আতঙ্ক।

কয়েকদিন আগে সন্ধ্যেবেলায় হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে। রিসিভ করতেই জনৈক ব্যক্তির আতঙ্কিত কণ্ঠ ভেসে এল। মূল বক্তব্য হলো তার বাথরুমে নাকি চারটে চন্দ্রবোড়া সাপের বাচ্চা দেখা গেছে। বাড়িতে ছোট ছোট বাচ্চা আছে। আর ওদিকে সাপগুলি বাথরুমের যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছিল। আতঙ্কে তিনটি বাচ্চা সাপকে পিটিয়ে মেরে ফেললেও একটি সাপের বাচ্চাকে কোনো মতে বালতি চাপা দিয়ে রেখেছেন। ওনারা খুব আতঙ্কে আছেন। আমি যদি ওখানে তাড়াতাড়ি যাই খুব ভাল হয়।

নিজের পড়াশোনা থাকার জন্য সাধারণত সন্ধ্যার সময় আমি কোথাও যায়না। যেহেতু বাড়ির কাছাকাছি ঘটনা তাই স্নেক ক্যাচার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও সঙ্গে আমার ভাইকে নিয়ে তৎক্ষণাৎ ছুটলাম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাড়ির দিকে। চন্দ্রবোড়া সাপের কথা শুনে বাবাও পিছু পিছু এলেন।

সন্তর্পনে বালতি তুলে দেখি এতো lycodon aulicus ! ইংরেজিতে, Indian wolf snake বা common indian wolf snake বলে। বাংলাতে বলে ঘরচিতি সাপ। এছাড়াও গ্রামের লোকেরা একে ঘরমনি, চালবাউনি বা চাল চিতি নামেও চেনে !

এদের সাধারণত ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাওয়া যায়। লম্বায় দেড় থেকে দুই ফুট হয়। টিকটিকি, গিরগিটি, নেংটি ইঁদুর, গঙ্গাফড়িং ইত্যাদি ধরে খায়। তবে টিকটিকি খেতে এরা খুব ভালোবাসে। তাই চলে আসে গৃহস্থের বাড়িতে। দিনের বেলায় পাঁচিলের ফাটলে, ইঁটের স্তুপে, গাছের কোটরে, বাড়ির আলমারির পিছনে, ক্যালেন্ডার বা ফটোফ্রেমের পিছনে লুকিয়ে থাকে। সন্ধ্যে হলেই বেড়িয়ে পরে খাবার খুঁজতে।

এমনিতে এরা খুব ভীতু সাপ। কিন্তু খুব সতর্ক। অল্প ‘থ্রেট’ অনুভব করলেই তিড়িংবিড়িং করে লাফিয়ে পালাতে চায়। পালানোর সুযোগ না পেলে রেগে গিয়ে কামড়ে দেয়। তবে কামড়ালেও ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, এদের কোনো বিষ নেই। নেকড়ে বাঘের মতো ৩ থেকে ৬ টা ধারালো দাঁত আছে বলে ইংরেজিতে একে wolf snake বলে।

এরা বড্ড রোগা লিকলিকে সাপ। দেখলে মনে হবে অপুষ্টিতে ভুগছে। মাথাটা কিছুটা চ্যাপ্টা। দুটি ছোট্ট ছোট্ট কালো পুঁতির মতো চোখ আছে। গায়ের রং খয়েরি, কালচে খয়েরি বা গ্রেইস ব্রাউন। গলার পিছনে অর্থাৎ ঘাড়ের কাছে হলদেটে বা হলদেটে সাদা রঙ আছে এবং ঘাড় থেকেই পর পর একটা একটা করে হলদেটে সাদা ব্যান্ড আছে কোমর পর্যন্ত।

একে অনেকেই ভুল করে ভয়ংকর বিষধর কালাচ বা কালাজ সাপ ভেবে মেরে ফেলে। পিঠ থেকে একদম লেজের প্রান্ত পর্যন্ত কালাচের সাদা ব্যান্ড জোড়ায় জোড়ায় থাকে। অন্যদিকে ঘরচিতির ঘাড় থেকে কোমর পর্যন্ত হলদেটে সাদা ব্যান্ড থাকে তাও সিঙ্গেল। এছাড়াও কালাচ কালো কুচকুচে বা নীলচে কালো হয়। কালাচের মাথাটা একটু লম্বাটে এবং লম্বায় অনেক বড়ো।

যাইহোক এই বাচ্চা ঘরচিতিটাকে উদ্ধার করি। প্রতিবেশীদের অনেকেই সেখানে ভিড় করে। প্রত্যেককে বোঝাই এটা বিষাক্ত চন্দ্রবোড়া নয় নিরীহ ঘরিচিতি সাপ। মানুষের উপকার ছাড়া কোনো ক্ষতি করে না। আতঙ্কিত হয়ে অযথা এদের হত্যা করবেন না। বাড়িতে সাপ বা কোনো বন্যপ্রাণী ঢুকে পড়লে দূর থেকে লক্ষ্য রেখে বন বিভাগ বা জেলার সর্প উদ্ধারকারীদের সাহায্য নেওয়ার জন্য তাদের অনুরোধ করি। অবশেষে প্রকৃতির সন্তান সাপটিকে ফিরিয়ে দিই প্রকৃতির কোলে।

এই পৃথিবীতে প্রাণের জন্য সৃষ্টি হয়েছে শুধু মানুষের জন্য নয় প্রত্যেকের জন্য। এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই সবার স্বার্থে Live & let live বাণী অনুসরণ করে চলতে হবে। অবলা প্রাণীদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments