কয়লা পাচারে অভিযুক্ত আসামিকে বাঁচাতে বাঁকুড়ার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতারা যখন সক্রিয় ঠিক তখন সেই কয়লা পাচারের বিরুদ্ধে ডিপিএলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে দুর্গাপুরে একশ্রেণী তৃণমূল নেতারা
অমল মাজি, বড়জোড়া-দুর্গাপুরঃ– আসামিদেরকে বাঁচাতে বাঁকুড়ার দুই নেতা যখন শলাপরামর্শ চালাচ্ছে ঠিক তখন দুর্গাপুরে ডিপিএলে অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে তৃণমূল নেতারা । ঘটনায় প্রকাশ, কোলিয়ারির কর্তৃপক্ষের হুঁশ ফেরে দুই ডাম্পার মোট ৩৪ টন কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনার পর । একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, মে মাসে ৯ তারিখে দুই ডাম্পার কয়লা কোলিয়ারি থেকে বের হয়ে ডিপিএলে না গিয়ে উল্টো রাস্তা ধরে চলে যায় আশুরিয়ার মোড়ে সৃষ্টি একটি বেসরকারি কারখানায় বলে অভিযোগ। সেখানে ওই ৩৪ টন কয়লা আনলোড করা হয় । কিন্তু ওই কয়লায় পাথর মেশানো ছিল । তাই ওই কয়লা বেসরকারি কারখানার কর্তৃপক্ষ রিজেক্ট করে দেয়। এখনো হয়তো সেই কয়লা ওই কারখানার ভেতর পড়ে আছে । এই ঘটনা জানাজানি হতেই কোলিয়ারির কর্তৃপক্ষ ওই দুই ডাম্পার কয়লার ব্যাপারে বড়জোড়া থানায় অভিযোগ জানান । সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বড়জোড়া থানার পুলিশ ডাম্পারের ড্রাইভার এবং ডাম্পারটি যিনি দেখভাল করতেন, তারাসিং এলাকার ‘জামাদার’ গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গল ঘোষ (মংলা ), সহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে । এরপর ১২ জুন ওই দুইজনকে বড়জোড়া থানা পুলিশি হেপাজতে নেয়।
এদিকে পঞ্চায়েত নির্বাচনে নমিনেশন পর্ব চলাকালীন প্রচন্ড গরমে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে ১২ জুন দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালে ভর্তি হন বড়জোড়া থানার আইসি অর্ণব গুহ। হিমোগ্লোবিন কম থাকায় দীর্ঘ ১০ দিন ভর্তি ছিলেন অর্ণববাবু । এরফলে তদন্ত কিছুটা থমকে যায় । অবশ্য বর্তমানে আইসি অর্ণববাবু কাজে যোগ দিয়েছেন। তিনি জানিয়ে দেন, তদন্ত চলছে,কেউ ছাড় পাবে না।
বড়জোড়া থানা সূত্রে জানা গেছে, ওই দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে প্রধান দুইজন হলো জনৈক বুদ্ধ এবং জনৈক দয়াময় । এই দয়াময় হলো বড়জোড়া এলাকায় একজন পরিচিত কয়লা কারবারি। আর জনৈক বুদ্ধ বিভিন্ন কারবারের পাশাপাশি ব্যারেজের কাছে একটি হোটেল ভাড়া নিয়ে চালায়। এখন এরা সবাই বেপাত্তা। শোনা যাচ্ছে, বর্তমানে ওই হোটেলটি চালাচ্ছে এক বিজেপি বিধায়ক-এর আত্মীয়। আরও জানা গেছে, দুর্গাপুর ব্যারেজের সামনে ওই হোটেলে প্রত্যেকদিন রাত ১০ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আসর বসতো। ওই হোটেল থেকেই নিয়ন্ত্রণ হতো কয়লা পাচার চক্র। খুব সহজ উপায়ে চলতো এই কয়লা পাচার।
জানা গেছে, বড়জোড়া ট্রান্স দামোদর কোলিয়ারি থেকে সমস্ত কয়লা যায় দুর্গাপুরে ডিপিএল কারখানায় । সেই কয়লা পরিবহনের জন্য লাগানো হয় স্থানীয় মালিকদের ডাম্পার । স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, বড়জোড়া ট্রান্স দামোদর কোলিয়ারি থেকে যে কয়লা ডিপিএল কারখানায় যায়, সেই কয়লা বেশ কিছুদিন ধরেই পাচার হয়ে চলে যাচ্ছিলো অন্যত্র । মে মাসে প্রথম সপ্তাহে এইভাবে ১০ ডাম্পার কয়লা পাচার হয়ে চলে যায় বড়জোড়ার একটি বেসরকারি কারখানায় । অবশ্য, প্রত্যেকটি কয়লা বোঝাই ডাম্পারে লাগানো থাকে জিপিএস । তাসত্বেও চুরি হচ্ছে কয়লা । আসলে জিপিএস অন-অফ করে রাখা যায়। সেই সুযোগটি কাজে লাগায় গাড়ির ড্রাইভাররা।
ডিপিএলে যেসমস্ত কর্মী- অফিসাররা কয়লা রিসিভ করার দায়িত্বে আছেন একমাত্র তাদের সঙ্গেই কারবারিদের যোগসাজসে কয়লা পাচার চলে বলে অভিযোগ। ডিপিএলের তিনজন কর্মী যারা বড়জোড়ার বাসিন্দা, তারাই ওই কয়লা কারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে বলে সূত্র মারফত অভিযোগ পাওয়া গেছে । ডাম্পার বোঝাই কয়লা ডিপিএলে না পৌঁছালেও কারখানার মেন গেটে তার এন্ট্রি হয়ে যায়। পাশাপাশি ডিপিএল কারখানাতেই কয়লার আনলোড দেখানো হয়। সেইসমস্ত কাগজপত্র কারবারিদের হাতে দিয়ে দেওয়া হয় । এরপর সেই কাগজপত্র চলে যায় গাড়ির ড্রাইভারের হাতে। তারপর ড্রাইভার সেই কাগজপত্র নিয়ে কোলিয়ারিতে জমা করে । এই সিস্টেমে চলে কয়লা পাচার। আর টন প্রতি ৩-৪ হাজার টাকা, আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা এক একটি ডাম্পার পিছু নেয় ডিপিএল কর্মী-অফিসাররা বলে অভিযোগ। সেই টাকা তারা সবাই ভাগ করে খায়। অপরদিকে ওই ডাম্পার বোঝায় কয়লা বেসরকারি কারখানায় বিক্রি হয় ১০ হাজার টাকা টন হিসাবে । সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি ডাম্পার পিছু কয়লা কারবারিদের লাভ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
এমন ঘটনায় আসানসোল জেলা বিজেপির সহসভাপতি চন্দ্রশেখর ব্যানার্জি বলেন, “তৃণমূলের কয়লাকাণ্ড নিয়ে যখন সিবিআই-ইডি তদন্ত চলছে তখন তারাই আবার দোষীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে । এটা হাস্যকর বিষয় । আসলে ডিপিএলে এই কয়লার মাখন ভাগাভাগি নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলছে। ” তৃণমূল নেতা কল্লোল ব্যানার্জি বলেন, “আমরা চাই দোষীদের শাস্তি হোক। আমরা এই বিষয়টি নবান্ন পর্যন্ত নিয়ে যাবো । ইতিমধ্যে কলকাতার নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। ডিপিএলের যারা যুক্ত তাদের কাউকে ছাড়া হবে না।