নীহারিকা মুখার্জ্জী, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণাঃ- মাছের রাজা ‘ইলিশ’। মূল্যটাও রাজসুলভ মানে বেশ দামি। বাড়ির পাশ দিয়ে ইলিশের আঁতুড়ঘর হুগলি নদী প্রবাহিত হলেও ওদের কাছে ইলিশের স্বাদ উপভোগ করা সম্পূর্ণ বিলাসিতা। ওরা যে গরীব ঘরের ছেলেমেয়ে- ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’। ইচ্ছে থাকলেও অভিভাবকরা নিজের সন্তানদের মুখে এক টুকরো ইলিশ মাছ তুলে দিতে পারেনা, হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কিন্তু যে বিদ্যালয়ে লিপিকা করণ, ধরিত্রী পুরকাইত, সবিতা মিস্ত্রী, মণিশ চক্রবর্তী, শুভাশিস হালদার, কুন্তল মণ্ডল, মৌসুমী প্রামাণিক, জয়দেব নস্করের মত ছাত্র দরদী শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং তিলক নস্করের মত প্রধান শিক্ষক আছেন সেখানে ছেলেমেয়েদের সুপ্ত ইচ্ছে পূরণ হবেই।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্যোগে গত ২৯ শে আগষ্ট জগদীশ চন্দ্র বসুর স্মৃতিধন্য দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ফলতা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত হয় ‘ইলিশ উৎসব’। চার শতাধিক ছাত্রছাত্রীর জন্য ইলিশ সহ অন্যান্য পদের ব্যবস্থা করা হয়।
পাতে ইলিশ মাছের পদ দেখে দিয়া, অরিত্র, সমাপ্তি, তিথি, মৌবনী, সুইটি, অঙ্কিতা, শামিম, দিশা, রিশিতা প্রমুখদের চোখে-মুখে দেখা যাচ্ছিল খুশির ঝিলিক। খুশি তাদের অভিভাবকরাও।
জনৈক অভিভাবক বলেই ফেললেন – আমাদের যা আর্থিক অবস্থা তাতে অত দাম দিয়ে ইলিশ মাছ কিনে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নাই। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সৌজন্যে আমাদের ছেলেমেয়েদের সেই স্বাদ পূরণ হলো। আমাদের পক্ষ থেকে প্রত্যেকেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কথা বলার সময় আবেগে তার গলা কেঁপে ওঠে।
খাদ্য বিতরণের সময় উপস্থিত ছিলেন ফলতা ব্লকের এসিও বিশ্বনাথ মাণ্ডি, স্থানীয় সাধনচন্দ্র মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড: সেখ ফজলুল হক, অধ্যাপক রোহন, অলোক মণ্ডল, বিশিষ্ট সাংবাদিক সৌম্যজিৎ সাহা, জনপ্রিয় নৃত্য শিক্ষিকা প্রীতি ম্যাডাম সহ ফলতা ব্লকের মিড ডে মিলের আধিকারিক এবং বিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মীরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিলক নস্কর বললেন – পাশ দিয়ে হুগলি নদী প্রবাহিত হলেও এইসব ছেলেমেয়েদের পাতে ইলিশ মাছ দেখা যায়না। ওদের অভিভাবকদের সেই আর্থিক ক্ষমতা নাই। ওরা আমাদের সন্তান। তাই আমরা ওদের জন্য ইলিশ উৎসব পালন করলাম। ওদের মুখের সরল হাসি আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্য।