eaibanglai
Homeএই বাংলায়বালি লুঠের স্বর্গরাজ্য পশ্চিম বর্ধমানের লাউদোহা, কাঁকসাঃ অভিযোগ

বালি লুঠের স্বর্গরাজ্য পশ্চিম বর্ধমানের লাউদোহা, কাঁকসাঃ অভিযোগ

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- সারা রাজ্য জুড়ে নদী থেকে বালি তোলা ও তা নিয়ে ব্যবসা করার ওপর জাতীয় পরিবেশ দপ্তরের বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে বর্ষাকালে। কিন্তু, সরকারি নির্দেশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলার লাউদোহা ও কাঁকসা থানা এলাকায় দেদার বালি লুঠের কারবার চলছে প্রতিদিনই, সারামাস, বিনা বাধায়। বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গেছে, অজয় নদের উপর বৈধভাবে ঘাট চালানো মালিকেরা তাদের জমা করা বালি বিক্রি করতে পারছেন না এই লুঠের বালির রমরমা কারবারের জন্যই।

অজয় নদের দু-পাড় বরাবর বালি তোলার যন্ত্র দিয়ে বেশ কয়েকটি বলি মাফিয়া, দুষ্কৃতীদের সিন্ডিকেট দেদার বালি লুঠ করছে আর এই লুঠের ভাগ পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে। চোরাই সেই বালির দাম বৈধ বালির ঘাট মালিকদের নির্ধারিত দামের থেকে অনেকটাই কম, ফলে, কয়েকশো ট্র্যাক্টর, লরি ও ডাম্পারের আনাগোনা লাগাতার লেগেই রয়েছে ওইসব এলাকায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ গৌরবাজার থেকে শিবপুর যাওয়ার রাস্তার ওপরে কাঞ্চনপুর এর কাছে নির্মিত বেশ কয়েকটি বালির ওজনের কাঁটা রয়েছে। সেখান থেকেই প্রতিদিন কয়েকশো ট্র্যাক্টর, ট্রলি অবৈধভাবে নদীগর্ভ থেকে বালি উত্তোলন করে জমা রাখছে এবং সেখান থেকেই পাচার হচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে, তাও আবার বৈধ চালান দিয়ে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে কোথা থেকে অবৈধ বালির জন্য আসছে এই বৈধ চালান? সূত্র মারফত জানা গেছে সিউড়ি, বোলপুর সহ বীরভূমের জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বৈধ বালিঘাটের চালান দিয়েই চলছে এই অবৈধ বালি পাচারের চক্র।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গৌরবাজার থেকে শিবপুর যাওয়ার রাস্তার ওপরে কাঞ্চনপুরে ‘তুফান’, ‘বিদ্যুৎ’, ‘অমল’ নামক ব্যক্তি সহ আরো বেশ কয়েক ব্যক্তি তাদের বালির ওজন করার কাঁটায় অবৈধ বালি প্রতিদিন প্রায় কয়েকশো ট্রাক্টার ট্রলি ও ডাম্পার দিয়ে বালি পাচার করছে এলাকার কিছু দুষ্কৃতীদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে, বলে অভিযোগ । স্থানীয় বাসিন্দাদের আরো অভিযোগ, এইসব বালি পাচারের কন্ট্রোল টাওয়ার চালাচ্ছেন কাঁকসা থানার অধীনে বসুধার এক হোটেল মালিক কুখ্যাত বালি মাফিয়া ‘গৌতম’ বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের আরো অভিযোগ, অবৈধভাবে বালি চলাচল করার ফলে গ্রামের সমস্ত রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে । শীত ঘুমে রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন সহ পুলিশ কর্তারা।

একটি সূত্র মারফত জানা গেছে অবৈধ এই বালি কারবারের ভাগ না কি স্থানীয় লাউদোহা থানার বেশ কিছু পুলিশ কর্মী ও শাসক এবং বিরোধী দলের নেতারা পেয়ে থাকেন। যার হিসেব দাড়ায় গাড়ি পিছু ১৫০০ টাকা। শুধু লাউদোহা থানাই নয়, এই বালি পাচারের ভাগ বসায় নাকি কাঁকসার মলানদিঘি পুলিশ ফাঁড়ি সহ কাঁকসা থানা এলাকার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। সূত্র মারফত জানা গেছে প্রতি রাতে প্রায় শতাধিক ট্রাক্টর,ডাম্পার অবৈধ বালি থেকে লক্ষাধিক টাকা ‘তোলা’ হিসেবে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ আদায় করছেন, বেপরোয়া ভাবে।

এদিকে, অবৈধভাবে বালি কারবারের জেরে আতিষ্ট হয়ে কাঁকসা এলাকার বনকাঠি অঞ্চলের মহিলারা রাস্তায় বাঁশ বেঁধে দিয়ে অজয় নদের ওপর থেকে বালি তুলে নিয়ে আসার রাস্তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয় রবিবার সকালে। ফলে, অজয় নদ থেকে সরাসরি অবৈধভাবে বালি তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রচুর বালি বোঝাই ট্রাক্টর সারি দিয়ে আটকে পড়ে রাস্তায়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ তারা প্রতিবাদ করতেই প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় তাদেরকে বালি মাফিয়াদের পক্ষ থেকে। ‘প্রশাসনের পূর্ণ সহযোগিতা’য় না কি এই বালি কারবার অবৈধ রূপে চলছে বলে সাধারণ গ্রামবাসীরা এদিন অভিযোগ করেন। শুধু তাই নয় এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন লাউদোহা, মলানদিঘি ও কাঁকসা থানার পুলিশের এক শ্রেণীর কর্মীরা সরাসরি এই বালি পাচারের সাথে যুক্ত এবং প্রতি রাত্রে মোটা টাকা নিয়ে এই অবৈধ কারবার চালাতে তারা সহযোগিতা করে বলে অভিযোগ।

এ বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতাকর্মীরা, মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকায়, গ্রামবাসীদের অভিযোগ তারাও তাহলে নিশ্চয়ই এই বালি লুঠের ভাগ পেয়ে থাকেন। তাছাড়া, যেখানে রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রশাসনের সমস্ত কর্তা ব্যক্তিদের ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অবৈধভাবে নদীগর্ভ থেকে বালি চুরি আটকানোর কথা বলেছিলেন, সেই কথায় কান না দিয়ে, কিভাবে রাজনৈতিক দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা চুপ করে বসে এভাবে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে বালি লুঠের সাক্ষী থাকছেন এবং কয়েক লক্ষ টাকা অবৈধ রূপে রোজগার করছে বালি মাফিয়ারা। রাজ্য সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করছে বালি মাফিয়ারা। কিন্তু, ঠুটো জগন্নাথ হয়ে কি বসে রয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা? নামমাত্র কয়েকটি বালি গাড়ী ধরে নিজেদের দায় সারছেন বলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করছেন। অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের কিছু কর্তা ব্যক্তিদের ও কিছু পুলিশ কর্মীদের সাথে এই বালি মাফিয়াদের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে লেনদেনের তাই সবকিছু প্রকাশ্য দিবালোকে হলেও তাদের চোখে কিছুই পড়ে না । চোখের সামনে বালি লুঠের এই কাণ্ড দেখে শুধু একটা কথাই মনে আসে “সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments