সংবাদদাতা, বাঁকুড়াঃ– বাঁকুড়ার জেলার বনেদি বাড়ি বা জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম অযোধ্যা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদারবাড়ির দুর্গাপুজো। প্রায় দুশো বছরের পুরনো এই পুজোর জাঁক জমক আগের চেয়ে কমলেও এখন অমলিন পুজোর ঐতিহ্য।
এখানে দেবী সিংহবাহিনী নন, ব্যাঘ্রবাহিনী। প্রতিমাতেও রয়েছে বিশেষত্ব। শ্রী শ্রী চণ্ডীতে মায়ের যেমন মূর্তির কথা উল্লেখ আছে সেই অনুযায়ী এখানে মূর্তি তৈরি হয়। এখানে দেবীর মুখ ছাঁচে নয় বরং বংশপরম্পরার প্রতিমাশিল্পী নিজে হাতে তৈরি করেন।
বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের জমিদার হয়ে ওঠার কাহিনীও কম রোমাঞ্চকর নয়। পরিবার সূত্রে জানা যায় এই বংশের পূর্বপুরুষ রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে সখ্যতা হয় শ্রীরামপুরের এক নীলকর সাহেবের। ওই নীলকর সাহেব যখন মৃত্যু শয্যায় তিনি তার সম্পত্তির ৫০ শতাংশ রামমোহন বাবুকে দান করে যান। এরপর সেই নীলকর সাহেবের থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তির সাহায্যেই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার একের পর এক মৌজা কিনে বাঁকুড়ার অযোধ্যা গ্রামে জমিদারির সূচনা করেন। কথিত আছে, সে সময়ে বাঁকুড়া ছাড়াও হুগলি, অবিভক্ত বর্ধমান ও অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রায় পঁচাশিটি মৌজার জমিদার হয়ে উঠেছিল এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। এমনকী কাশী, বেনারস ও তৎকালীন বিহারের বিভিন্ন জায়গাতেও জমিদারি ছিল।
অন্যদিকে সেই সময়ে জমিদারির বিপুল আয়ে উপচে পড়া রাজকোষের প্রভাব পড়েছিল পুজোয়। বিশাল জমিদারবাড়ির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হয় দেবোত্তর এস্টেট। এস্টেটের মধ্যে দ্বাদশ শিব মন্দির, গিরি গোবর্ধন মন্দির, রাসমন্দির, ঝুলন মন্দির ও দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু হয় দুর্গা পুজোও। আজও প্রাচীন রীতি মেনে পুজো এলেই ভাঁড়ার থেকে বের করে আনা হয় নবপত্রিকা আনার রুপোর পালকি ও পুজোর যাবতীয় রুপোর বাসন।
বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের মতে এক সময় পুজোর কয়দিন পাইক, বরকন্দাজ, বিভিন্ন রাজকর্মচারী ও প্রজাদের আনাগোনায় দুর্গাপুজো কার্যত উৎসবের চেহারা নিত। বর্তমানে আর সেই জেল্লা বা জাঁক জমক নেই। কিন্তু আজও দেবীর পুজোয় নিষ্ঠার ঘাটতি নেই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে।