সংবাদদাতা, রানিগঞ্জঃ- সন্দেশখালির ঘটনাকে সামনে রেখে যখন বিরোধীরা, বিশেষ করে বিজেপি বাংলার লোকসভা নির্বাচনে তৃনমুল কংগ্রেসকে পর্যদুস্ত করার চেষ্টা করছে, তখন ঘাসফুল সেই অস্ত্রেই পদ্মফুলকে ঘায়েল করতে চাইছে। পাশাপাশি ” গ্যারান্টি “কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবারের লোকসভা নির্বাচনে বাজিমাত করতে চাইছেন ।
শুক্রবার বিকেলে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের রানিগঞ্জের সিয়ারশোল রাজবাড়ি ময়দানে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহার সমর্থনে হওয়া সভা থেকে এই দুই ইস্যুতে বিজেপিকে তোপ দাগলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।
এই সভায় আসানসোলের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের আইন ও শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক, আসানসোল পরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, জামুড়িয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং সহ অন্যান্যরা।
এদিন সকালেই দলের প্রার্থীর সমর্থনে পূর্ব বর্ধমানে জনসভা করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলায় ভোট প্রচারে প্রায় সভা থেকেই তিনি সন্দেশখালি ও গ্যারান্টির কথা বলছেন। পূর্ব বর্ধমানের সভাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
সেই সভার কয়েক ঘন্টার মধ্যে পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে শিল্পাঞ্চল রানিগঞ্জের সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে কড়া ভাষায় কটাক্ষ করে বলেন, আসানসোল থেকে ২০১৪ ও ২০১৯ সালে বিজেপির টিকিটে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তিনি ৮ বছরের বেশি মোদি গ্যারান্টির উপরে ভরসা রাখতে পারেননি। দিদি গ্যারান্টির উপরে আস্থা রেখে ২০২২ সালে বিজেপি ছেড়ে তৃনমুল কংগ্রেসে যোগ দেন। এখন তিনি বাংলার মন্ত্রী। আসানসোলে এবারের ভোটে বিজেপি এক বিজেপি এক ভোজপুরি গায়ককে প্রথম প্রার্থী করেছিলো। কিন্তু তার এমন সব কেলেঙ্কারি সোশাল মিডিয়ায় এলো যে, তিনি ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সরে দাঁড়ালেন। তারপর প্রার্থী করা হলো এসএস আলুওয়ালিয়াকে। তিনি এমন এক একজন সাংসদ যে আগের ১০ বছরে দুজায়গায় ( দার্জিলিং ও দূর্গাপুর – বর্ধমান) ৫ মিনিটও সময় দেননি। উন্নয়নের কথা তো ছেড়েই দিন। মনে রাখবেন আসানসোলের অদূরে দুই রাজ্যের সীমান্ত এলাকা। তাই এমনভাবে এবারে ভোট দিন যাতে, ঐ প্রার্থী সীমান্ত পার করে চলে যায়। সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপি তথা বিরোধীদেরকে জবাব দিতে গিয়ে অভিষেক বলেন, ওখানে যা হয়েছে তা জানতে পারার পরে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। আসল কথা হলো বাংলায় কোন কিছুতে আমাদের সঙ্গে পেরে উঠতে না পেরে ধর্মের নামে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরী করে বিজেপি ভোট পেতে চাইছে। যারা সন্দেশখালি নিয়ে বলছে, তাদের শাসনে অন্য রাজ্যে কি হয়েছে, তা তারা ভুলে গেছে। যোগীর উত্তরপ্রদেশ উন্নাও এবং হাথরাসে কি হয়েছিলো। ব্রীজভূষণ সিংয়ের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ? এনডিএ এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে কয়েক হাজার নারী নির্যাতনের অভিযোগ আসার পরে তিনি তো দেশ ছেড়ে বিদেশে পালালেন। তার হয়ে আবার নরেন্দ্র মোদি ভোট চেয়ে, পিঠ চাপড়ে ছিলেন। আমার বলছি না, কেন্দ্র সরকারের রিপোর্ট বলছে, নারী নির্যাতনে দেশের মধ্যে সবার প্রথমে যে ৫ টি রাজ্য, তার সবকটাই বিজেপি শাসিত। সবার আগে উত্তরপ্রদেশ। সবার শেষ ঘটনা বাংলার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এমন একটা অভিযোগ উঠলো। অভিষেক বলেন, এখনো পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে ব্যর্থতম প্রধানমন্ত্রী হলেন নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী হলেন যোগী আদিত্যনাথ। তাই মনে রাখবেন এই ভোট দেশে সরকার তৈরীর ভোট। প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের ভোট। তিনি বলেন, আগে লক্ষী ভান্ডার পাওয়া যেত ৫০০ টাকা। সেই টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে এক হাজার টাকা। তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতিদের ১ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করা হয়েছে।