মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর:- ‘চতুরঙ্গ’ মাঠ ফের পুজোর দখলে। ভক্তির ঠেলায় মাঠের খেলাধূলা ফের দ্বীপান্তরে। এডিডিএ’র আইনি পরাজয়ের নতিজায় এমনটা হল, অপ্রত্যাশিত ভাবে, বলে এলাকাবাসীর মত। এই নিয়ে শহর দুর্গাপুরের সিটিসেন্টার জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি, একাংশ এডিডিএ’র এই ব্যর্থতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আরো অন্যান্য পুজোর আয়োজনের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন রবিবার থেকেই।
রবিবার সকালে সিটিসেন্টারের চতুরঙ্গ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে এধার-ওধার শুধুই বাঁশের কেল্লা। কোনোটা অর্ধ নির্মিত, কোনোটার নির্মাণ সবে শুরু হয়েছে। কোনোটি দুর্গাপুজোর তো কোনোটি আবার গণেশ পুজোর। গোটা মাঠ যেন বাঁশের খাঁচায় বন্দী। সেই কারণেই ওই মাঠে চলা সরকারি অর্থ সাহায্য পুষ্ট ফুটবল কোচিংকে দেবদেবীর জায়গা করে দিতে তফাতে সরে যেতে হয়েছে। সিটিসেন্টারেরই অন্য একটি সরকারি স্কুলের মাঠে। এ নিয়ে কোচিং ক্যাম্প চালিয়ে আসা নন কোম্পানি রিক্রিয়েশন ক্লাব দারুন ক্ষুব্ধ। ক্লাবের সম্পাদক বিপ্লব চৌধুরী এ দিন বলেন, “হ্যাঁ। আমরা খেলা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছি। এই মাঠে কি খেলা সম্ভব? গোটা মাঠেই তো প্যান্ডেল হচ্ছে।” মাস পাঁচেক আগে এই ক্লাবের সদস্যরাই ফুটবল কোচিংয়ের কচিকাঁচাদের নিয়ে পথ অবরোধ করেছিলেন। তাদের স্পষ্ট দাবি, ‘এই মাঠে এত ধম্ম- কম্ম হতে থাকলে শরীরচর্চার জন্য ফুটবল খেলাটাই তো উঠে যাবে।’ স্বামী বিবকানন্দের মত ছিল – উপাসনার চেয়ে শরীরচর্চা অনেক ভালো। কিন্তু, চতুরঙ্গ মাঠে উলটপুরান। খেলা সরানো নিয়ে এরকমই অভিমত স্থানীয় সিনিয়র সিটিজেন্স ফোরামের সভাপতি পীযূষ মজুমদারের। তিনি রবিবার বলেন, “সত্যিই তো ক্লাবের ফুটবল কোচিংটা এবার উঠেই যাবে। কিন্তু আমরাও নিরুপায়। গণেশ পুজোর প্যান্ডেল শুরু হতেই আমি সোজা এডিডিএ’র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে কথা বলি। উনি আমাকে বলেন, এডিডিএ নয় গণেশ পুজোটা হচ্ছে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে।” পীযূষ নিজেও ওই চতুরঙ্গ মাঠে একটি ক্যারাটে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালিয়ে থাকেন। নন- কোম্পানি ক্লাবের ফুটবল কোচিং টার মতো ক্যারাটের জন্য পীযূষের সংগঠনও রাজ্য সরকারের ৩ লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েছে। প্যান্ডেলের ধাক্কায় ক্যারাটেও বন্ধ। কিন্তু, পীযূষ সে প্রসঙ্গে না গিয়ে, উল্টে দাবি তোলেন, “গণেশ পুজোর অনুমোদন যখন হয়েই গেল, তখন সামনের বছর থেকে আমরা এই চতুরঙ্গ মাঠে আগের বারের মতো ফের ইস্কনের রথের আয়োজন করবো।” অর্থাৎ, চতুরঙ্গ মাঠ জুড়ে ফের খেলা বাদে মেলা, গান-বাজনা, পুজো-আর্চার পথ খুলেই গেল।
নন কোম্পানি ক্লাবটির বিক্ষোভ, পথ অবরোধের পর আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এডিডিএ) বিষয়টিতে কঠোর হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় – শুধুমাত্র দুর্গাপুজো আর সরকারি অনুষ্ঠান, মেলার জন্যই ওই মাঠে ছাড় মিলবে। তাই, এবছর ইস্কনের রথকেও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আদালতের আদেশে গণেশ পূজোটি ছাড় পাওয়ায় চতুরঙ্গ মাঠ ফের সরগরম। প্রায় কুড়ি দিন হল ওই মাঠে দুর্গাপুজোর প্যান্ডেল তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে, মাঠের প্রায় অর্ধেক এলাকা জুড়ে। আবার শনিবার সকাল থেকেই গণেশ পুজোর প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়েছে আরেকটা অংশে। এ প্রসঙ্গে বরাবর ওই মাঠে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজনকারী স্থানীয় বাসিন্দা জয় দত্ত বলেন, “ওরা তো আদালতের নির্দেশে গণেশ পূজো করছে। আমিও এবার আইন মেনে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করবো এখানেই।”
ফের খেলার মাঠ পূজা-আর্চার দখলে। ওই মাঠের দুর্গাপুজো কমিটির সভাপতি হলেন শহরের ব্যবসায়ী কবি দত্ত। তিনিই আবার এডিডিএ’র ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি খানিকটা দায় এড়ানোর মতো রবিবার বললেন, “বিষয়টা সঠিকভাবে আমার জানা নেই। আর তাছাড়া এডিডিএ’র প্রসঙ্গে এ ব্যাপারে আমি এখন কিছু বলছি না।”