eaibanglai
Homeএই বাংলায়জবরদখল…৫…'চিকেন বাপি'র জমি ৫৮ সালেই অধিগৃহীত, তাও কি কবি সেই বাপির পাশেই...

জবরদখল…৫…’চিকেন বাপি’র জমি ৫৮ সালেই অধিগৃহীত, তাও কি কবি সেই বাপির পাশেই ?

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- ‘চিকেন বাপি’র দখলে থাকা জমির মালিক কে? বাপি সরকারের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া, নাকি রাজ্য নগরোন্নয়ন দপ্তরের ?

এসব ভালো করে না বুঝেই, নাকি আসলে পুরোটাই জেনেবুঝে কবি দত্ত ‘চিকেন বাপি’র হয়ে সওয়াল করতে দুর্গাপুরের মহকুমা শাসকের ঘরে সদলবলে পৌঁছে গেলেন? এই রহস্যের জট কিন্তু এখনো কাটছেনা এডিডিএ তে। রাজ্যের নগরোন্নয়ন দপ্তরের অধীন আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এডিডিএ) গত এক সপ্তাহে দু’বার আলাদা আলাদা ভাবে মামড়া এলাকায় ‘চিকেন বাপি’র কব্জায় থাকা জমি সরেজমিনে দেখতে এবং মাপজোক নিতে সার্ভেয়ারদের পাঠায়। তারা পৃথকভাবে রিপোর্টও জমা দেয়, বলে সংস্থারই একটি সূত্র জানিয়েছে।

  • “এই ৫৭ শতক আমার বাবার কেনা। আমার পারিবারিক জমিতেই আমি কারখানা-ব্য়বসা বসিয়েছি। কেন ছাড়বো ?” – বক্তব্য মামড়ার বাপি সরকারের।
  • “যে বা যারাই ওখানকার জবরদখলে ওই লোকটার সাথ দিক, তা সে যেই হোকনা কেন, আমরা সরকারি জমি পুনরুদ্ধার করবোই। ওখানকার জবরদখল সরাবোই। এডিডিএ তে প্রভাব খাটিয়ে নির্ধারিত কাজ কিছুতেই থামানো যায়না।” – বক্তব্য এডিডিএ’র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আরো স্পষ্ট কথা, “এডিডিএর কাজে ব্যক্তিগত স্তরে কে চেয়ারম্যান, কে ভাইস চেয়ারম্যান – সেটা কখনো বড় ব্যাপার নয়। জবরদখল হঠানোর ক্ষেত্রে সংস্থার নীতিটাই মুখ্য বিষয়।”

মৌজাঃ মামড়া
জুরিসডিকশন লিস্ট(জে.এল) নং-৮৬, যা আবার ৪০ এবং ৪১ দাগ নম্বরে রিভিশন্যাল সেট্লমেন্ট (আর.এস) মোতাবেক বিভাজিত এবং ল্যান্ড রেকর্ডস্ (এল.আর) এ ২৫৪ নং বলে বর্ণিত। সরকারি হিসেবে, মামড়া মৌজার নির্ধারিত ওই জমির মোট পরিমান ৫৩ শতক বা ৩৩.২ কাঠা। যার বর্তমান বাজার মূল্য নূন্যতম ৩.৫০ কোটি টাকা, বলে জানা যায়। এই সেই বিতর্কিত জমির আসল সরকারি পরিচিতি।

সরকারি হিসেবে জমির পরিমান ৫৩ শতক বলে উল্লেখ করা হলেও, বাপি সরকারের দাবি – ওই জমির মোট পরিমান ৫৭ শতক। এডিডিএ’র এক পদস্থ আধিকারিক অবশ্য বলেন, “৫৭ বা ৫৩ শতক সেই বিতর্ক পরে। যাই মাপ আসবে, সেটার পুরোটাই তো আমাদেরই জমি, সরকারের অধিগৃহীত জমি। সেখানে বছরের পর বছর বাপি সরকার জবরদখল করে বাণিজ্য করছেন। এটা তো পুরোপুরি বেআইনি ব্যাপার। ওই জমির পুরোটাই আমরা এখন উদ্ধার করব।” ওই পদস্থ আধিকারিকের ক্ষোভ, “জমি আমাদের। তা দখল করে মুরগী- মাংসের ব্যবসা করছে আরেকজন, যে নাকি আবার আমাদের ভাইস চেয়ারম্যানের হোটেল গুলোতে মাংস সরবরাহ করে। আমাদের অনেকরই প্রশ্ন – সেই জন্যই কি এডিডিএ’র স্বার্থ না দেখে ভাইস চেয়ারম্যান মহকুমা শাসকের দপ্তরে চলে গেলেন জবকদখলকারীর স্বার্থ রক্ষা করতে ? ওনার এই কাজে আমরা বিভ্রান্ত।”

এবার তাহলে জানা দরকার, এডিডিএ’র দাবিটাই বা কতটা সঠিক? বাপি সরকারের ‘ পৈত্রিক সূত্রে’ পাওয়া মামড়ার ওই বিতর্কিত জমি কি আদৌ কখনো অধিগ্রহন করা হয়েছিল? এডিডিএ কি আদৌ বিতর্কিত ওই জমিটির মালিকানা দাবি করতে পারে ?

দুর্গাপুরে শিল্পায়নের লক্ষ্যে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় বিদ্যুৎ,জল আর কয়লার কোক্ সরবরাহের জন্য প্রথমেই দুর্গাপুর প্রজেক্টস্ লিমিটেড (ডি.পি.এল) স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে, ধাপে ধাপে এই ডি.পি.এলের মাধ্যমেই দুর্গাপুরে পুরোদমে শিল্প কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহন করা শুরু হয়। সেই মোতাবেত, ১৯৫৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দুর্গাপুর প্রজেক্টসের নিয়োজিত সার্ভেয়ার দুর্গাপুরের ফুলঝোড়, গোপিনাথপুর এবং মামড়া মৌজার বিভিন্ন দাগ নম্বরে বিস্তর জমি অধিগ্রহন করেন। সেই অধিগ্রহনেই ঢুকে যায় বাপি সরকারের চর্চিত ওই ‘পৈত্রিক জমি।’ শুধুমাত্র ওই তিনটি মৌজাতেই অধিগৃহীত জমির মোট পরিমান ছিল ১৪৯.৮১ একর। ওই অধিগ্রহনে (নং-১০১৩৬ এল.এ)র সমস্ত বিবরন সরকারিভাবে ১৯৫৭’র ২৯ মে প্রথমে চিহ্নিত করণের পর সরকারি গেজেটের ২৩১২৯ পাতায় প্রকাশও করা হয় এবং জমির মালিকদের কোনোরকম ‘ওজর আপত্তি’ আছে কিনা -তাও জানতে চাওয়া হয়।

পরবর্তীকালে, অধিগৃহীত জমির পুরোটাই নগরোন্নয়ন দপ্তরের অধীন এডিডিএ’র হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এডিডিএ’র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,” আমাদের কাছে যে সব সরকারি নথি আছে, আমাদের আধিকারিক, কর্মীরা সেই মোতাবেক পুনরুদ্ধারের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন। আমরা গোটা বিষয়টিতে নজর রাখছি।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments