নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- দুর্গাপুরের স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড অধীনস্ত দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। গত এক মাসের মধ্যে পরপর বেশ কয়েকজন ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যুর পরই আজ ভোররাত্রে উদ্ধার হল টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া এক স্থায়ী কর্মীর দেহ।
সূত্র মারফত জানা গেছে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার ‘র মেটেরিয়াল হ্যান্ডলিং প্ল্যান্ট’ ওল্ড সাইডে অপারেশন বিভাগের কর্মরত স্থায়ী শ্রমিক আশুতোষ ঘোষাল গতকাল নাইট শিফট ডিউটি করার সময় হঠাৎই চলন্ত কনভায়ার বেল্টের ওপর পড়ে জান। মুহূর্তের মধ্যে চার টুকরো হয়ে যায় তার দেহ। সূত্র মারফত জানা গেছে প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টা পর তার খন্ডিত দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে । দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর বি-জোনের বঙ্কিমচন্দ্র এভিনিউ এর বাসিন্দা ছিলেন আশুতোষ ঘোষাল বাবু। পরিবারে তার স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছে। আশুতোষ বাবুর ছেলের বিয়ে আর কদিন পরেই হওয়ার কথা ছিল কিন্তু এই মর্মান্তিক ঘটনার ফলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবার ও ইস্পাত নগরীর বাসিন্দাদের মধ্যে।
এদিকে এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ফলে খোভে ফেটে পড়েছেন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক মহল। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক সংগঠনের একাধিক নেতা কর্মীরা এদিন ইস্পাত কর্তৃপক্ষের গাফিলাতির জন্য এ ধরনের মৃত্যু বলে অভিযোগ করেছেন। উল্লেখ্য গতকালকেই এক ঠিকা শ্রমিক ইলেকট্রিক্যাল শর্ট সার্কিটের ফলে গুরুতর রূপে পুড়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার কদিন আগেই ওই কারখানারই ব্লাস্ট ফার্নেস লেডেল থেকে গলিত লোহা ছিটকে মৃত্যু হয়েছে তিন ঠিকা শ্রমিকের। তারপর আবারো এই দুর্ঘটনা। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মীদের অভিযোগ, “কারখানার সেফটি বিভাগের অপদার্থতার ফলে কারখানায় প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে আর সংস্থার আধিকারিকরা সান্তনা দিচ্ছেন এই বলে যে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছেন শ্রমিকেরা। অবিলম্বে কারখানা কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি না দেন তাহলে আগামী দিনে আরো শ্রমিক মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।”
গত রাত্রে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিক আশুতোষ ঘোষাল কী কারণে দুর্ঘটনায় মারা গেলেন, তার বিস্তারিত রিপোর্ট কারখানার সিআইটিউ নেতৃত্বের কাছে চাইলেন সিআইটিউ’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তপন সেন। তিনি বলেছেন, “খুবই মর্মান্তিক বেদনাদায়ক ঘটনা। শোকাহত শ্রদ্ধাঞ্জলি।”