eaibanglai
Homeএই বাংলায়কেমন আছে অনুব্রতের এলাকা?

কেমন আছে অনুব্রতের এলাকা?

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, বীরভূম ও বর্ধমানঃ- ‘কেমন আছো’ – অবশ্যই কলকাতা নয়, কেষ্টহীন বীরভূম ও তার ভারপ্রাপ্ত এলাকা। সিবিআইয়ের চাপ বা অসুস্থতা – কারণ যাইহোক না কেন প্রায় ২০২২ সালের শুরু থেকেই কেষ্ট মণ্ডল ( অনুব্রতের ডাকনাম এবং এই নামেই বেশি পরিচিত) রাজনীতির ময়দানে নীরব। শোনা যায়নি তার বিখ্যাত (কুখ্যাত) ও জনপ্রিয় শব্দ বন্ধনী – চড়াম চড়াম, নকুলদানা, গুড় বাতাসা ইত্যাদি। শব্দগুলো দলীয় সমর্থকদের কাছে মজার খোরাক হলেও বিরোধীদের কাছে ছিল আতঙ্কের। ভুক্তভোগী মাত্রই জানে।

বিজেপি ও সিপিএমের কাছে আতঙ্কের দুই রাজনীতিবিদ হলেন – মমতা ব্যানার্জ্জী ও অনুব্রত মণ্ডল। মমতার জন্য সিপিএমের চৌত্রিশ বছরের সাধের রাজ্যপাট শেষ এবং ২০২১ শে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ দখলের স্বপ্ন ধূলিসাৎ। অন্যদিকে অনুব্রতের জন্য বীরভূম সহ পূর্ব বর্ধমানের তিন ব্লকে সিপিএমের অস্তিত্ব সংকটে।

অসুস্থতার জন্য প্রথমে পঁয়তাল্লিশ দিন এবং গ্রেপ্তারের পর প্রায় একুশ দিন কেষ্ট বিহীন বীরভূম। বাম আমলে স্হানীয়ভাবে মঙ্গলকোটের ডাবলু আনসারি, শাসনের মজিদ মাস্টার, অথবা অনুজ পাণ্ডে বা তপন-সুকুরদের দাপট ছিল প্রশ্নাতীত। সেটা এলাকার বাসিন্দারা জানত। কিন্তু কেষ্ট মণ্ডলের মত জেলাজুড়ে দাপট কেউ দেখাতে পারিনি। কখনো কখনো সেই দাপট জেলার সীমানা অতিক্রম করে গ্যাছে। তার দাপটে বিরোধীরা তো বটেই এমনকি নিজের দলের কর্মীরাও কুঁকড়ে থাকত। শোনা যায় বেয়াদবি করলেই নিজের দলের কর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীদের নাকি গাঁজা বা অন্য কোনো মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কেষ্টর ভয়ে আগে সবাই চুপচাপ থাকলেও এখন অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছে।

২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তন হলেও লালদুর্গ আউসগ্রাম, মঙ্গলকোট বা কেতুগ্রামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে তিন জায়গাতেই বামেরা ইতিহাস। সৌজন্যে কেষ্ট মণ্ডল। যতই রিগিং এর গল্প শোনাক মানুষ কিন্তু সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। একই অবস্থা বীরভূমে। ভোটের দিন তাকে গৃহবন্দী করেও ফলের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

ভাবা হয়েছিল কেষ্ট গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিরোধীরা বিশেষ করে সিপিএম মাথা তুলে দাঁড়াবে এবং তৃণমূলের সংগঠন ধীরে ধীরে ভেঙে পড়বে। কিন্তু আপাতত সিপিএম বা বিজেপি বীরভূমে সেই সুযোগটা নিতে পারেনি। অথচ ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল। দরকার যোগ্য নেতা। দিন যত যাবে বিরোধীদের পেছনে কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়ার তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশজুড়ে সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে দূর্নীতির অভিযোগ দূরে সরে যাবে।

কথা হচ্ছিল বিজেপির এক প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতির সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই প্রাক্তন নেতা বললেন – কার ভরসায় রাজনীতি করব? ২০২১ এর নির্বাচনের পর নেতাদের পাত্তা নাই। এদিকে ভোটের আগে উত্তেজনাকর বক্তৃতা দিয়ে বিপদে ফেলল আমাদের। অন্যদিকে বামেদের শত অত্যাচারেও রাজনীতির ময়দান ছাড়েননি মমতা। তাইতো আজও তার জনপ্রিয়তা অটুট। সিপিএমের নীচু তলার এক কর্মী বললেন – চৌত্রিশ বছরটা কি মানুষ সহজে ভুলতে পারবে?

বীরভূম জেলার তৃণমূলের জনৈক মলয় মণ্ডল বললেন- কেষ্টদার দাপটে এখানে সিপিএম বা বিজেপি কার্যত দিশেহারা। তার অনুপস্থিতিতে কিছুটা সমস্যা হলেও এবছরের শুরু থেকেই আমাদের একটা আশঙ্কা ছিল। তাই আমরা সেভাবেই সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা করে গেছি। সুতরাং কেউ যদি ভেবে থাকে কেষ্টদার অনুপস্থিতিতে তৃণমূলের সংগঠন ভেঙে পড়বে তারা ভুল ভাবছে। ইতিমধ্যেই আমাদের জেলা নেতারা সক্রিয় হয়েছেন। সর্বোপরি আমাদের দিদি আছেন।

দাবি ও পাল্টা দাবি চলতেই থাকবে। উত্তর পাওয়া যাবে পঞ্চায়েত ভোটে। বোঝা যাবে পশ্চিমবঙ্গে কি হতে চলেছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments