নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুরঃ- সেই ‘ছেলেধরা’। সেই সগড়ভাঙ্গাঁ। যেখানে গত ৪৮ ঘন্টায় ভবঘুরে, সাধু থেকে সাংবাদিক আর এবার খোদ সেনা জওয়ান- কারওর রেহাই নেই। সগড়ভাঙ্গাঁয় গেলেই নাকি বাইরের লোকেরা ‘ছেলেধরা’ হয়ে যাচ্ছে! বাইরের লোক তো দুরঅস্ত! পাড়ার ছেলে, সাংবাদিক সৌমেন দত্ত তো প্রায় ‘ছেলেধরা’ তকমা পেয়েই গেছিলেন। পাড়ার ছেলেরা তাকে এসে কার্যতঃ বাঁচায়। কিন্তু, তার কয়েক ঘন্টা কাটতে না কাটতেই ফের উত্তপ্ত সগড়ভাঙ্গাঁ। এবার সেখানকার ভৈরব তলায় পথ হারিয়ে এসে পড়েছিলেন সেনা কর্মী নিখিল দাস। তিনি গুজরাটের বাসিন্দা। বর্তমানে, আসামের শিলচরের একটি সেনা ছাউনীতে কর্মরত। আত্মীয়দের বাড়ী এসেছিলেন দুর্গাপুরে। রাত্রে ড্রাইভার পথ ভুলে ঢুকে পড়েন ভৈরব তলায়। সেখানে তখন দলে দলে রাতপাহারায় ব্যস্ত কিছু যুবক। কারন- ‘বাইরে থেকে যখন তখন পাড়ায় ঢুকছে ছেলেধরা’। সেনা জওয়ান ছিলেন সাধারন পোষাকে। যুবকেরা তার পথ আটকে ভৈরব তলায় আসার কারন জানতে চাইলে, তিনি যখন রাজস্থানী মেশানো হিন্দিতে জবাব দেন এবং ভৈরব তলার কখোনো নামই শোনেননি বলেন, তখনি ‘পাড়া – রক্ষক’ যুবকেরা তাকে ‘ছেলেধরা’ চিনহিত করে গাড়ী থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে। শুরু হয় তাকে শারিরিক হেনস্থা।
রাজ্যে এ পর্যন্ত ২৫ জন গনপিটুনির শিকার হয়েছেন। মারা গেছেন অন্তত চারজন। গনপিটুনি রোধ করতে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই একটি শক্তপোক্ত আইন এনেছে। কিন্তু, তা সত্বেও আসানসোল, দুর্গাপুর, বর্ধমানে গত কয়েক সপ্তাহে পরপর গনধোলাই’র ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাত্রে পূর্ব বর্ধমানের মেমারীতে উদয় মণ্ডল নামে ৬০ বছর বয়স্ক এক পৌঢ় কে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারে একদল উত্তেজিত যুবক। পুলিশ ওই ঘটনায় দু জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আর সেই শ্রেনীতেই সাম্প্রতিকতম নাম সেনাকর্মী নিখিল দাস।
ঘটনার পর কোকওভেন থানার ওসি সন্দিপ দাস সহ একাধিক আধিকারিক ভৈরবতলায় পৌঁছান। উদ্ধার করেন ওই সেনাকর্মীকে।
আসানসোল- দুর্গাপুর পুলিশ কমিসনারেটের পক্ষ থেকে এদিনও নতুন করে বাসিন্দাদের কাছে গুজবে কান না দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। তবে, গোয়েন্দা কর্তারা আরো একটি বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তায়- বার বার সাগড়ভাঙ্গাঁতেই কেন এই ধরনের গুজবের উৎপত্তি? দুর্গাপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অভিষেক গুপ্তা জানান,”গোটা পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে। যে বা যারা এই অপকর্মে জড়িত তাদের কাউকেই রেয়াত করা হবেনা”।