সন্তোষ মণ্ডল,আসানসোলঃ– অবশেষে কম্বলকাণ্ডে জেরার মুখোমুখি হলেন আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির স্ত্রী তথা ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চৈতালি তিওয়ারি। গতকালই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তৃতীয়বার নোটিশ দিয়েছিল আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ। প্রসঙ্গত এর আগে দু’বার জিজ্ঞাসাবাদের নোটিশ পাঠিয়েও তাঁকে জেরা করতে পারেনি পুলিশ।
এদিন সকালে নির্দিষ্ট সময়ে আসানসোলের গোধূলি মোড় লাগোয়া ঘনশ্যাম অ্যাপারটমেন্টে জিতেন্দ্র তিওয়ারির ফ্ল্যাটে পৌঁছায় পুলিশ আধিকারিকদের সাত সদস্যের এক বিশেষ দল। পুলিশের এই বিশেষ দলে দুজন এসিপি সহ সাত জন পুলিশ আধিকারিক ছিলেন। প্রায় দু’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর ফিরে যায় পুলিশ আধিকারিকের দলটি।
প্রসঙ্গত গত ১৪ ডিসেম্বর আসানসোলের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণ ডাঙালে স্থানীয় বিজেপি কাউন্সিলর চৈতালি তিওয়ারি, তাঁর স্বামী বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও আরও কয়েকজন বিজেপি নেতার উদ্যেগে শিবচর্চা ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে পাঁচ হাজার কম্বল বিতরণের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ওই অনুষ্ঠানে কম্বল নিতে গিয়ে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। আরও কয়েক জন আহত হন। ঘটনার পর থেকেই শুরু হয় রাজনৈতিক চাপান উতোর। এদিকে পুলিশ দাবি করে ওই অনুষ্ঠানের জন্য লিখিত কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এরপরই ওই দুর্ঘটনায় মৃত এক মহিলার ছেলের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে ৬ জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ ও অন্যতম উদ্যোক্তা চৈতালি তিওয়ারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নোটিশ পাঠায়। কিন্তু দু’দুবার নোটিশ পাঠিয়েও বাড়িতে কেউ না থাকায় তাঁকে জেরা করতে পারেনি পুলিশ। এরই মধ্যে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন চৈতালি দেবী। গত বৃহস্পতিবার চৈতালি দেবীকে তিন সপ্তাহেপর জন্য অন্তবর্তীকালীন রক্ষাকবচ দেয় হাইকোর্ট। পাশাপাশি তদন্তে সাহায্য় করার নির্দেশও দেয় হাইকোর্ট। এরপর পুলিশ ফের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠালে অবশেষে শনিবার পুলিশি জেরার মুখোমুখি হন আসানসোল পুরসভার বিরোধী নেত্রী।
এদিকে এদিন পুলিশি জেরার পর পুলিশ প্রশাসন ও শাসক দলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দেন চৈতালি দেবীর স্বামী জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তিনি দাবি করেন ঘটনার তদন্ত নয়, স্থানীয় শাসক দলকে খুশি করতেই তৎপরতা দেখাচ্ছে পুলিশ। এই তৎপরতা আগে দেখালে কম্বলকাণ্ডে তিন জনকে প্রাণ হারাতে হতো না।
অন্যদিকে জিতেন্দ্র তিওয়ারির ওই দাবিকে নস্যাৎ করে তৃণমূল রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন দাশু বলেন, “মৃতের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই তদন্ত করছে পুলিশ। তৃণমূলকে শুধু শুধু দোষারোপ করে লাভ নেই। আইনের মুখোমুখি হওয়া উচিত।”