সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ– দুই বাড়ির আত্মীয় পরিজনদের উপস্থিতিতে হৈ হৈ করে চার হাত এক হয়ে গেল। বছর ২৯ এর স্বামীহারা রিম্পির ধুমধাম করে বিয়ে দিল তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
২০১৩ সালে আসানসোলের হরিপুরের কেন্দা এলাকায় রিম্পির বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের তিন বছরের মাথায় ২০১৬ সালে এক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর স্বামীর। তবে স্বামীহারা রিম্পি শ্বশুরের ভিটে ছাড়েননি। গত সাত বছর ধরে থেকে গিয়েছেন শ্বশুরবাড়িতেই। অন্যদিকে পুত্রশোকের পাশাপাশি তরুণী পুত্রবধূর ভবিষ্যৎএর কথা ভাবিয়ে তোলে রিম্পাদেবীর শ্বশুরকে। পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলে ও পুত্রবধূর অনুমতি নিয়ে আবার তাঁর বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরপরই শুরু হয় পাত্র খোঁজার পালা। পাশের কখোয়া গ্রামের বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী রঘুনাথ রায়কে পাত্র হিসেবে মনস্থ করেন তিনি। রাজি হয়ে যায় পাত্রের অভিভাবক ও আত্মীয় পরিজনেরা। এরপরই বৃহস্পতিবার আসানসোলের ঘাগরবুড়ি মন্দিরে সমস্ত রীতি নীতি মেনে দুজনের চার হাত এক করে দেন দুই পরিবারের লোকজন।
রিম্পাদেবীর ভাসুর পৃথ্বীরাজ চ্যাটার্জি এদিন জানান পুত্রবধূ হিসেবে নয় একেবারে বাড়ির মেয়ের মতো করেই রিম্পার কন্যাদান করেছেন তাঁরা। আর পাঁচটা মেয়ের পরিবারের মতোই গয়না গাটি, আসবাবপত্র সমস্ত কিছু দিয়েই মেয়েকে পাত্রস্থ করেছেন তাঁরা। এবার থেকে আর পুত্রবধূ নয় বরং বাড়ির মেয়ে হিসেবেই তাঁকে বাড়িতে স্বাগত জানাবেন তাঁরা।
অন্যদিকে পাত্রের কাকা কেশব রায় জানান, এত অল্প বয়সে মেয়েটি স্বামীহারা হয়েছে। বাকি জীবনটা যাতে হতাশায় না কাটে তাই ওই স্বামীহারা মেয়েকেই তাঁরা পুত্রবধূ করার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। অন্যদিকে ওঁদের আগামী জীবন যাতে সুন্দর কাটে তারই কামনা করেন এদিন বিয়েতে উপস্থিত দুই পক্ষের আত্মীয় পরিজন সকলে।
বর্তমান একবিংশ শতাব্দিতে নারীদের বহু বিবাহ ও বিধবা বিবাহ নতুন ঘটনা নয়। তবু আজও শহরতলি বা গ্রামে গঞ্জে বিধবা মহিলার বিয়ের কথা শুনলে নাক কুচকান অনেকেই। লোকে কি বলবে, সামাজিক সংস্কার ইত্যাদির কথা না ভেবে বিধবা পুত্রবধূর বিয়ে দিয়ে আসলে সবার উপরে যে মনুষ্যত্ব সেই বার্তা দিল আসানসোলের চ্যাটার্জি ও রায় পরিবার।