সন্তোষ কুমার মণ্ডল,আসানসোলঃ– তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর এমনটাই দাবি করলেন প্রাক্তন বাম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। পাশাপাশি দলের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হলেন তিনি। প্রশ্ন তুললেন দলীয় শৃঙ্খলা নিয়েও। ক্ষোভ উগরে দিলেন দলেরই বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, দলেরই মুর্শিদাবাদের এক নেত্রীকে সমাজমাধ্যমে নানা কুরুচিকর বার্তা পাঠানোর অভিযোগ ওঠে প্রবীন বাম নেতার বিরুদ্ধে। তার ভিত্তিতেই দলীয় স্তরে তদন্ত করে প্রাক্তন বাম সাংসদকে বহিষ্কারের পথে হাঁটে সিপিএম। শনিবার প্রায় মধ্যরাতে দলের নেতা এবং কর্মীদের কাছে বহিষ্কারের বার্তা পাঠানো হয়।
বহিষ্কারের পর রবিবার রানীগঞ্জে নিজের বাড়িতে প্রথমবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন বংশগোপাল। এদিন তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, তাঁকে না জানিয়ে কীভাবে গভীর রাতে সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা প্রকাশ হয়ে গেল?দলের একাংশের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বলেও দাবি করেন বংশগোপাল।
তিনি বলেন, “পার্টির তদন্তে আস্থা রেখেছিলাম। আর আমাকে দল থেকে বহিষ্কারের খবর আমিই জানতে পারলাম না। মধ্যরাতে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে এটা জানতে হল। তাহলে দলের শৃঙ্খলা কোথায়? আমি যে দল দেখেছিলাম, এখন আর সে দল নেই।” প্রাক্তন বাম সাংসদের দাবি তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। দলের দলের লোকজন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। তিনি বলেন “ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর তৃণমূল আমাকে হয়তো গালিগালাজ করেছে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত করেনি। যতটা চক্রান্ত করছে আমার নিজের দল। যখন মন্ত্রী ছিলাম তখনও একটা অংশ চক্রান্ত করত। যখন সাংসদ ছিলাম তখনও আমার বিরুদ্ধে মহিলাঘটিত সাজানো ঘটনার চেষ্টা হয়েছিল। কলকাতা থেকে এসে এই জেলায় যারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তাদের বিজেপির সঙ্গে তলে তলে আঁতাঁত রয়েছে। তারা তোলাবাজ। সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত।” পাশাপাশি দলের একাংশের বিরুদ্ধে প্রাক্তন সাংসদ ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, “রাজ্য পরিবর্তনের পর আওয়াজ তোলা হয়েছিল, আমার ঘরে নাকি ৫০ কোটি টাকা আছে। কই এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল তবু কোনও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেল না। শৃঙ্খলা মেনে এতদিন চুপ ছিলাম। কিন্তু লাগাতার কুৎসা প্রচারকারীরাও দলের পদে আছেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?”
অন্যদিকে প্রাক্তন বাম সাংসদের বহিষ্কারের ঘটনায় তৃণমূল ও বিজেপিও তাঁদের মতামত জানিয়েছে। আসানসোল পুরনিগমের তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলর অশোক রুদ্র বলেন, “বামপন্থীদের আসল চেহারা ধীরে ধীরে সামনে আসছে। সঠিকভাবে অনুসন্ধান করলে কেবল বংশগোপাল চৌধুরীই নয়, এমন আরও অনেক ব্যক্তিকে ওই দলে পাওয়া যাবে, যারা বড় বড় কথা বলে। কিন্তু তাদের আসল চরিত্র ঠিক এইরকম। একজন নেতা যে দলেরই হোন না কেন, তার বোঝা উচিত যে তিনি সমাজে আছেন এবং তাকে দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হন। এমন পরিস্থিতিতে যদি তিনি এমন কাজ করেন, তাহলে তাকে দেখার পর যারা রাজনীতিতে আসবেন তাদের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, বিশেষ করে মহিলারা রাজনীতিতে আসার আগে নিরাপত্তাহীন বোধ করবেন, তাই নেতাদের তাদের প্রতিটি কাজের উপর অনেক নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।”
অন্যদিকে, এই প্রসঙ্গে, বিজেপির রাজ্য নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই দলটা ৩৪ বছর ধরে বাংলা শাসন করেছে। কিন্তু সেই সময়ে কোনও সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না বা ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া আজকের মতো প্রভাবশালী ছিল না। যে কারণে তারা তাদের অনেক অপকর্ম লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এখন এটা হতে পারে না। আজ সবকিছুই মুহুর্তের মধ্যে প্রকাশ্যে চলে আসে। আর এই কারণেই বংশগোপাল চৌধুরী যা করেছেন তা সকলের সামনে চলে এসেছে। ৩৪ বছরে বামপন্থীদের সমস্ত অপকর্ম যদি প্রকাশ্যে আসত, তাহলে বামপন্থী নেতারা কাউকে তাদের মুখ দেখাতে পারতেন না।” পাশাপাশি তাঁর দাবি “ভবিষ্যতে বংশ গোপাল চৌধুরীর মতো নেতারা তৃণমূলে যোগ দেবেন। কারণ সমস্ত চোর এবং এই ধরনের লোকেরা তৃণমূলে যোগ দেয়। তাদের একটাই জায়গা, আর তা হল তৃণমূল।”
যদিও অন্য দলে যোগ দেওয়া নিয়ে প্রান্তন বাম সাংসদ বলেন,” এই মুহুর্তে অন্য কোনও দলে যোগদানের প্রশ্নই উঠে না। পঙ্কজ রায় সরকার ( দুর্গাপুরের নেতা) যখন দল ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন, তখন থেকেই আমার সম্পর্কে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে আমি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চলেছি। কিন্তু এটা হয়নি। অন্য কোনও দলে যোগদানে মোটেও আগ্রহী নই ।”





