জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,আউসগ্রামঃ- মঞ্চে তখন পাশাপাশি বসে আছেন পুরোহিত-ইমাম, ব্রহ্মচারী-মৌলনা, ওদিকে পরস্পরের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে দুই ধর্মের দুই পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গীতা ও কোরান- সব মিলিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির হয়ে উঠল রক্তদান শিবির। হবেই বা না কেন যাঁর স্মৃতিতে রক্তদান শিবির তিনি হলেন ভারতমাতার বীর সন্তান হাওড়ার অশোকনগরের সেনাকর্মী তথা সমাজসেবী শহীদ জীবন চন্দ্র ঘোষ। যার পেছনে আছে ভারতমাতার অসংখ্য সন্তান যারা হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ নন তাদের একমাত্র পরিচয় তারা ভারতবাসী। সামনে দাঁড়িয়ে আছে শত্রুপক্ষ। যাদের হাত থেকে ওদের রক্ষা করার দায়িত্ব অমর শহীদ জীবন চন্দ্রদের যারা প্রাণ হারালেও মানুষের হৃদয়ে থেকে যান চিরদিন।
১৯৮৪ সালের ২৩ শে মার্চ না ফেরার দেশে চলে যান তিনি । তাঁর ফেলে যাওয়া অস্ত্রকে সেবার অস্ত্রে পরিণত করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলেছেন তারই সুযোগ্যা কন্যা রিয়ারুবি ওরফে রুবি ঘোষ। বাবার সমাজসেবার ব্যাটন এখন কন্যার হাতে যেটা নিয়ে তিনি ছুটে এলেন এড়াল অঞ্চলে।
সেনাকর্মী-সমাজসেবী জীবন চন্দ্র ঘোষের স্মরণে ১৮ ই মার্চ বিশিষ্ট সমাজসেবী আজিজুর রহমানের উদ্যোগে এবং এড়াল মাদ্রাসার মওলানা ফারুক মল্লিকের সহযোগিতায় আউসগ্রাম-২ নং ব্লকের এড়াল মাদ্রাসা সংলগ্ন ময়দানে আয়োজিত হয় স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক শাখার সহযোগিতায় শিবির থেকে পঞ্চাশ ইউনিট রক্ত সংগৃহীত হয়। রক্তদাতাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলা ছিলেন। সংগৃহীত রক্ত সংশ্লিষ্ট ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রতিটি রক্তদাতার হাতে তুলে দেওয়া হয় গিফট ও গাছের চারা।
রক্তদাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য রক্তদান শিবিরে উপস্থিত ছিলেন আউসগ্রাম থানার আইসি আব্দুর রব খান, রাণাঘাটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্রহ্মচারী যোগ্যেশ্বরানন্দ মহারাজ, বিভিন্ন মসজিদ থেকে আগত সম্মানীয় একাধিক মওলানা, বিশিষ্ট সমাজসেবী তথা একাধিক রক্তদান শিবিরের আয়োজক আসরাফউদ্দীন ওরফে বাবুদা, শ্যামলকৃষ্ণ সরকার, গুল মহম্মদ মোল্লা, রিয়া জানা, ঝিমলী চক্রবর্তী সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সমাজের বিভিন্ন স্তরের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি, আয়োজক আজিজুর রহমান, সাংবাদিক সফিকুল ইসলাম ও শহীদ কন্যা রিয়ারুবি ওরফে রুবি ঘোষ।
এর আগে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে আগত অতিথিদের গলায় উত্তরীয় ও হাতে উপহার তুলে দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। একইসঙ্গে বরণ করে নেওয়া হয় আমন্ত্রিত সাংবাদিকদেরও।
রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার জন্য প্রতিটি বক্তা উদ্যোক্তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রথম জীবনে ডাক্তার এবং বর্তমানে
আউসগ্রাম থানার আইসি আব্দুর রব খান তার বক্তব্যে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। রক্ত দিতে গেলে চারবার লাগে – এইটি সরস ভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করে ব্রহ্মচারী যোগ্যেশ্বরানন্দ মহারাজ উপস্থিত দর্শকদের মন জয় করে নেন। এছাড়াও অন্যান্য বক্তারা তাদের মূল্যবান বক্তব্যে রক্ত দানের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন এবং নির্ভয়ে রক্তদান করার জন্য আহ্বান জানান।
প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রুবি দেবী বললেন – বাবার স্বপ্নের সমাজসেবার ব্যাটন নিয়ে ছুটে চলার পথে বহু মানুষের সহযোগিতা পাচ্ছি বলেই আমার কাজ খুব সহজ হচ্ছে। আশাকরি আগামীদিনেও আপনাদের স্নেহের রিয়া আপনাদের সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হবেনা।