জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, আউসগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান-: উৎসব মরশুমে সবাই যখন উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে ওরা তখন পরিবারের সদস্যদের থেকে দূরে থেকে মনের কষ্ট চেপে রেখে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার মত গুরদায়িত্ব পালন করতে ব্যস্ত। লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষ যেন নির্বিঘ্নে উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। সারাবছর এই দায়িত্ব পালন করতে হলেও উৎসবের সময় চাপটা বেশি থাকে। আবার সামাজিক জীব হিসাবে সামাজিক দায়িত্বও পালন করে চলে ওরা। ওরা এইরাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের সদস্য। সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পেছিয়ে থাকলনা আউসগ্রাম থানার অধীনস্থ ছোড়া পুলিশ ফাঁড়ির গ্রামরক্ষী বাহিনীর সদস্য তথা পুলিশ বাহিনী।
৪ ঠা নভেম্বর গ্রামরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের উদ্যোগে ও ছোড়া পুলিশ ফাঁড়ির আধিকারিকদে সহযোগিতায় ফাঁড়ি চত্বরে আয়োজন করা হয় এক স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক শাখার সহযোগিতায় শিবির থেকে মোট ৮৪ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়। রক্তদাতাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বেশি ছিল মহিলা। এটি যথেষ্ট উৎসাহ ব্যঞ্জক। সংগৃহীত রক্ত সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বনরক্ষার বার্তা দিয়ে ছোড়া ফাঁড়ির ওসি ত্রিদিব রাজের পক্ষ থেকে প্রত্যেক রক্তদাতার হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে গাছের চারা। প্রসঙ্গত এর আগেও স্থানীয় বাসিন্দারা কাজের মাধ্যমে ওসির বৃক্ষপ্রেম তথা পশুপ্রেমের পরিচয় পেয়েছেন।
রক্তদান শিবিরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহ ছিল প্রচুর। পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকদের পাশাপাশি তারাও রক্তদান করেন।
একইসঙ্গে এইদিন একটি বৃক্ষরোপণ উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। থানা চত্বরে ৩০ টির মত বৃক্ষরোপণ করা হয়। স্থানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার সহ উপস্থিত পুলিশ আধিকারিক ও অন্যান্য পুলিশ কর্মীদের বৃক্ষরোপণে হাত লাগাতে দ্যাখা যায়। এছাড়াও দেড় শতাধিক মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ৩১ জন আদিবাসী মোড়লকে সম্বর্ধিত করা হয়।
আসন্ন শীত মরশুমে জঙ্গল এলাকায় ঝরে পড়া শুকনো পাতায় কেউ যাতে আগুন না লাগিয়ে দেয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য এলাকাবাসীদের সচেতন করা হয়।
রক্তদাতাদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য শিবিরে উপস্থিত ছিলেন আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার, জেলা পুলিশের ডিএসপি (ডি এন্ড টি) সুব্রত মণ্ডল, আউশগ্রাম থানার আইসি আব্দুর রব খান, ছোড়া ফাঁড়ির ওসি ত্রিদিব রাজ, পদ্মশ্রী শিক্ষক সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় সহ আরও অনেকে।
গ্রামরক্ষী বাহিনীর উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে স্থানীয় বিধায়ক বলেন, যতই পুলিশের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলা হোক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জ্জীর অনুপ্রেরণায় তারা যে প্রকৃত অর্থে সমাজবন্ধু হয়ে উঠেছে এটাই তার প্রমাণ। দু’দিন আগে আউসগ্রাম থানা চত্বরে একটি রক্তদান শিবির হয়।
অন্যদিকে বিশিষ্ট লেখক তথা গবেষক রাধামাধব মণ্ডল বলেন, জঙ্গল অধ্যুষিত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে এই ধরণের একটি শিবিরের আয়োজন করার জন্য গ্রামরক্ষী বাহিনী তথা পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকদের জন্য কোনো প্রশংসায় যথেষ্ট নয়। তিনি পুলিশ বাহিনীর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এলাকাবাসীদের আহ্বান জানান।