বাঁকুড়া: কবি লিখেছেন , ” আলু তিল গুড় খীর নারিকেল আর /গড়িতেছে পিঠেপুলি অশেষ প্রবার ” । কিন্ত পিঠে গড়ার প্রধান উপকরন চালের গুড়োর কথা কবি বলেননি , কারন বলা বাহুল্য মাত্র । বর্তমানে যন্ত্র চালিত যুগে কালের ক্রমে হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময়ের প্রাচীন ঐতিহ্য ঢেঁকি । ধান কোটা থকে চাল গুড়ো করা সবই হত ঢেঁকি দিয়ে । পরাবারে আসা নব বধুকেও ঢেঁকি দিয়েই চাল গুড়ো করতে হত । কিন্তু বর্তমানে নব বধূরা সেভাবে কেউই ঢেঁকি স্বাদ কি তা জানে না । বাঙালীর সেরা উৎসব গুলোর মধ্যে পৌষপার্বণ বা মকর সংক্রান্তি অন্যতম । পৌষ পার্বণে পিঠের স্বাদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কারোর দ্বিমত নেই । চালের গুড়ো কি ভাবে আসে আজকের বৈদ্যুতিক কলে ভাঙানো চালের যুগে সবাই ভূলে গেছে । শতাব্দী পেরিয়ে সহস্রাব্দীর প্রাচীন ধান কোটা , চাল গুড়ো করার অতি সরল ঢেঁকির কথা । কৃষি নির্ভর ভারতীয় জীবনে ঘড়ে ঘড়ে থাকত ঢেঁকি । আর পৌষ পার্বণের সপ্তহ খানেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত চাল গুড়ো করার কাজ । ঢেঁকি পার দিতেন , চালের গুড়ো চালতে মুলত মহিলারা । মস্ত এক কাঠের গুড়ির ওজনকে কাজে লাগিয়ে ধান ভাঙা ও চাল গুড়ো করার কাজ হত । গ্রামীন অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এই অতি সরল হাস্কিং ” মেসিনটি ” আজ আর দেখা যায় না । গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে অনেক খুজলে কোথাও কোথাও আচমকা দেখা মিলে যায় ঢেঁকি । সোনামুখী শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নিত্যানন্দপুর গ্রাম , সেখানেই দেখা মিলল প্রচীনঐতিহ্য ঢেঁকির । দুচোখের তৃষার্ত তৃষ্ণা মিটিয়ে নিতে সকলের সামনে সেই ছবি তুলে ধরলাম আমারা । শোনা য়ায় অষ্টাদশ শতাব্দীর এক বাঙালী পথিক কোন এক গৃহস্থের বাড়ির ঢেঁকি শালে রাত্রি যাপন করার সময় ঐ গৃহস্থের বাড়িতে ডাকাত পড়ে । আশানন্দ বন্ধ্যোপাধ্যায় নামে ঐ ব্যাক্তি ঢেঁকিটা দুই হাতে তুলে নিয়ে ডাকাত দলকে মেরে তারিয়েছিলেন । বীরত্বের চিহ্ন হিসাবে সেই বাঙালনীর পদবী হয়ে যায় ” ঢেকি ” । তবে এখনও প্রত্যন্ত গ্রামের মা বোনেরা সেই প্রাচীন ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছেন । এখনও তারা ঢেঁকি দিয়েই ধান কোটা থেকে চাল গুড়ো করা সবই করেন ।