সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়াঃ এভাবেও ভাবা যায়। নিজের হাত খরচের পয়সা বাঁচিয়ে অকালপ্রয়াতা জন্মদাত্রী মায়ের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকীতে সমাজের প্রান্তিক মানুষদের জন্য ভেবেছেন বাঁকুড়া শহরের কাটজুড়িডাঙ্গা শহরের মিলন পল্লীর বাসিন্দা, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র শুভজিৎ সার। রবিবার সকালেই প্রায় ৪০ কিলোমিটার বাইক চালিয়ে তিনি তালডাংরার হাড়মাসড়া গ্রামে বসবাসকারী যাযাবর পরিবার গুলির কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এখানকার ৫ টি পরিবারের ১৫ টি শিশু সহ ৫০ জন মানুষকে পাত পেড়ে খাওয়ালেন। পাশাপাশি ঐ সব শিশুদের শিক্ষাসামগ্রী ও চলতি বর্ষার মরশুমে ছাতা, ব্লিচিং সহ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় ওষুধ তুলে দিলেন। এখানেই শেষ নয়। ঐ পরিবার গুলির প্রতিটি পরিবারের ক্ষুদেদের হাতে তুলে দিলেন একটি চারা গাছ। যা আগামী দিনে মহীরুহে পরিনত হবে। পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন সমাজের পিছিয়ে পড়া এই সব মানুষেরা। ২০১৭ সালের আজকের দিনে দীর্ঘ অসুস্থতার পর আজকের দিনে শুভজিৎ সারের মা ঝুমা সার মারা যান। পরিবারের সর্বকনিষ্ট সন্তান শুভজিৎ তখন বিষ্ণুপুরের একটি বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। মা এর দেখানো পথেই ছোটো থেকেই আর্ত-পীড়িত মানুষের পাশে থেকেছে, তাই সারা বছর হাত খরচের পয়সা বাঁচিয়ে মায়ের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকীতে তাই এই সব অসহায় মানুষদের কথাই ভেবেছে সে। সুদূর বাঁকুড়া শহর থেকে তাদের শুভজিৎ ‘স্যার’ প্রত্যন্ত এই গ্রামে ছুটে এসে তাদের পাশে দাঁড়ানোয় খুশি এখানকার শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই। শুভজিৎ ও তার বন্ধুদের উদ্যোগে এখানকার অনেক শিশুই এখন স্কুলমূখী। খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি খাতা, কলম, ছাতা আর চারা গাছ পেয়ে বেজায় খুশি সকলেই। তাদের মধ্যে কদম ব্যাদ বলে, খুব ভালো লাগলো। এখন আর স্কুলে গেলে রোদে পুড়ে বা জলে ভিজে জেতে হবেনা। অভিভাবিকা সূর্পনখা ব্যাদও খুশি এই উদ্যোগে। তিনি বলেন, ওনার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের সবার খাওয়া দাওয়া তো হলোই সাথে ছেলে মেয়েরা পড়াশুনার জন্য বই খাতা উপহার পেলো। আজকের দিনটা তাদের সকলের কাছেই অন্যতম সেরা প্রাপ্তি বলেই তিনি মনে করেন। এবিষয়ে শুভজিৎ এর স্পষ্ট বক্তব্য, মায়ের মৃত্যু বার্ষিকীতে বাড়িতে আত্মীয় পরিজন, পাড়া প্রতিবেশীদের খাওয়ানো যেতেই পারে। কিন্তু তার চেয়েও বেশী আনন্দ রয়েছে এই সব অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীকে উপলক্ষ্য করে বছরের একটা দিনও যদি এদের মুখে হাসি ফোটাতে পারে সেটাই জীবনের অন্যতম বড় প্রাপ্তি বলে মনে করে বলে তিনি জানান।