সংবাদদাতা, বাঁকুড়া:– বসন্তের শুরুতেই ফের বাঁকুড়ার রানী শুশুনিয়া পাহাড়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। ২০২০,২২, ২৪-এর পর এবছরও ফের আগুনে ছাড়খার বাঁকুড়ার রানী। আগুনে লেলিহান শিখা গ্রাস করেছে শুশুনিয়া পাহাড়কে। আর তাতেই বসন্তের লাল পলাশ পুড়ে হয়েছে কালো। বসন্তের শুরুতে শুশুনিয়া পাহাড়ে লাল পলাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমান দূর দূরান্তের পর্যটকরা। আর এই সময়ই ঘটে গেল বিপর্যয়।
বৃহস্পতিবার সকালে শুশুনিয়া পাহাড়ের পূর্ব অংশে প্রথম আগুন নজরে আসে স্থানীয়দের। তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পাহাড়ের উপরের দিকে। ঝরা পাতার পাশাপাশি দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ছোট, বড় গাছও। পাহাড়ে আগুন ও ধোঁয়া দেখে বন দপ্তরে খবর দেন স্থানীয়রা। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন বনকর্মীরা। ব্লোয়ার দিয়ে ঝরা পাতার স্তূপ সরিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ইঞ্জিনও। কিন্তু তাও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। রাত যত গড়াতে থাকে আগুনে লেলিহান শিখার দাপট বাড়তে থাকে পাহাড় জুড়ে। ঝোড়ো বাতাসের ঝাপটা আগুনকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে। রাতে আবার নতুন করে ৪০ জন বনকর্মীকে ব্লোয়ার নিয়ে আগুন নেভানোর কাজে নামানো হয়। অবশেষে শুক্রবার ভোর নাগাদ আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
পাহাড়ের যে অংশে ছড়ানো হয়েছিল বীজ বোমা, জানা গেছে আগুন লেগেছে সেই অংশটিতে। হেক্টর খানেকের মত অংশ পুড়ে ছাই। আগুনে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে পাহাড়ের বহু গাছ, বনজ সম্পদ, সঙ্গে অসংখ্য ভেষজ উদ্ভিদ। এমনকি এই অগ্নিকাণ্ডের জেরে বহু বন্য়প্রাণীর মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও বন দপ্তরের তরফে দাবি করা হয়েছে, সে ভাবে ক্ষতি হয়নি কোনও বন্যপ্রাণীর। এ সমস্ত ক্ষেত্রে বন্যপ্রাণীরা আগুন দেখে আগে থেকেই সেই জায়গা ছাড়ে বলে জানান বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের ডি.এফ.ও প্রদীপ বাউরী। প্রসঙ্গত হরিণ, শিয়াল, খরগোশ সহ একাধিক বন্যপ্রাণীর বসবাস এই শুশুনিয়া পাহাড়ে।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার আগুন লেগে চলেছে শুশুনিয়া পাহাড়ে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে আগুন লেগেছিল । ২০২২ সালের মার্চ মাসেও ঘটেছিল সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। ২০২৪ সালে শুশুনিয়া পাহাড়ে আগুন লাগার স্মৃতিও ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। তিন থেকে চারদিন লেগেছিল আগুন আয়ত্তে আনতে। ২০২৫ সালেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল।
সবুজ গাছ গাছালি বন্য প্রাণী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শুশুনিয়া পাহাড়কে সংশ্লিষ্ট এলাকার ফুসফুস বলা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এই অগ্নিকাণ্ড এলাকার ফুসফুসকে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত করবে যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।





