eaibanglai
Homeএই বাংলায়ভজন-দত্তের কিসের আঠা? এডিডিএ নিয়ে ডিগবাজি বাম নেতার

ভজন-দত্তের কিসের আঠা? এডিডিএ নিয়ে ডিগবাজি বাম নেতার

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর: ‘গাছেরও খাবো তলারো কুড়াবো’ – ঠিক যেন এইরকমই হাল এডিডিএ আর দত্ত টাওয়ারের নতুন মধুচন্দ্রিমার।

রাজ্য সরকারের একটি সংস্থা কোন দুঃসাহসে বা কোন লজ্জায় এসব মাথা পেতে নিল – এখন সেই নিয়েই বেজায় শোরগোল খোদ এডিডিএর অন্দরে বা জেলার নানান প্রোমোটারদের বিভিন্ন প্রকল্পের আনাচে কানাচে। সকলের একটাই দাবি – বেকায়দায় পড়া আবাসন প্রকল্প গুলি নিয়ে সত্যিই যদি এতটাই দরদ রাজ্য সরকারের তাহলে দুর্গাপুর আসানসোলে অন্তত কুড়িটা এমন প্রকল্প এখন সমস্যায় পড়ে ধুঁকছে, সেগুলোও এডিডিএ তাহলে দায়িত্ব নিয়ে অন্য প্রোমোটারদেরকেউ বাঁচাক! তাদের প্রশ্ন – শুধু ‘দত্ত দত্ত ভাই ভাই’ করে কি আর সরকারি সংস্থা এভাবে চলতে পারে নাকি?

দুর্গাপুর শহরের বিধান নগর ছাড়িয়ে একের পর এক গ্রাম কলোনির জমিতে কার্যত অপরিকল্পিত ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে অগুনতি আবাসন প্রকল্প। অধিকাংশ প্রকল্পে নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ তো বটেই, প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বর্জ্য ও ব্যবহৃত জল নিষ্কাশন নিয়েও। কোথাও আবার বেআইনি ভাবে বোরিং করে ভূগর্ভস্থ জল দেদার তুলে ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে। ওদিকে, বহু প্রোমোটার সংস্থার আক্ষেপ, “এত এত টাকা লগ্নি করে মাথার ঘাম ঝরিয়ে ইমারতী কারবার। কিন্তু ইদানিং সেই তুলনায় আর রিটার্ন নেই।” সমস্যায় পড়া বামুনাড়ার এমনই এক প্রোমোটার বললেন, “আমার পদবি দত্ত হলে না হয় দত্ত রাজার দরবারে নবরত্ন হতে পারতাম। তাছাড়া দুর্গাপুরের রাজা উজির মন্ত্রী-সন্ত্রীদের আমরা তো আর ইয়ার দোস্ত নই। আমাদের কথা ভাবার সময় কার আছে?” বেনাচিতি লাগোয়া ৫৪ ফুট এলাকায় একটি ঢাউস বিল্ডিং তোলা এক প্রোমোটার বললেন, “কবি দত্ত যতক্ষণ গদিতে ততক্ষণ এ ডি ডি এ দত্ত টাওয়ারের মতো প্রকল্পে সাহায্য করবে আগে, তারপর ভাববে আমাদের মতো আর কারো কথা।”

জি টি রোডের দক্ষিণে সিটি সেন্টারের বিপরীতে যানবাহন সংক্রান্ত ব্যবসা করার জন্য বেনাচিতির ওই দত্ত পরিবারকে পূর্বতন বাম বোর্ড ২০০৯ সালে প্রথম ৪৪.৫৩ কাঠা জমি দেয়, কিন্তু তাতেও বিশেষ পোসাইনি ওই দত্তদের। তারা মোটর গাড়ির নাকি আরো ফলাও কারবার করে শহরের যানবাহন ব্যবসার ডিজাইনটাই বদলে ফেলবে। তাই তারা ফের জমি চাই এডিডিএর কাছে। আবেদন করতে না করতেই এডিডি এর বাম বোর্ড দত্ত মোটরসের হাতে পাসের ১৫.০৩২ কাঠা জমিটিও অতি উৎসাহে ফের তুলে দেয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে বাম জামানায় বেনাচিতির ওই দত্ত পরিবারের সাথে স্থানীয় সিপিএম নেতা ভজন চক্রবর্তীর গভীর মধুর সম্পর্ক নিয়ে শহর জুড়ে নানারকম বেশ জোরদার চর্চা ছিল। দত্তদেরকে কারখানা, বাণিজ্য আর আবাসনের জন্য একের পর এক ঢালাও সরকার অধিকৃত জমি বিতরণের নেপথ্যে তাদের বাম ঘেঁষা নাম বেশ কাজের ছিল বলে অভিযোগ। কিন্তু বামেদের বিদায়ের পর ওই দত্তরা নতুন করে তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে আঁতাত জমায় যা ইদানিং কালে বেশ প্রবল ভাবেই চোখে পড়ছে।

বাম জামানায় যানবাহন ব্যবসার জন্য পলাশডিহায় জমি দেওয়া প্রসঙ্গে এ ডি ডি এর এক আধিকারিক বলেন, “জমি পেয়েও দত্তদের ওই প্রকল্পের কাজ কিন্তু বিশেষ এগোয়নি। পরে আমাদের ১৩৭ তম বোর্ড মিটিংয়ের ঠিক আগে, গত ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ তে ওনারা হঠাৎই ওই জমিতে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার একটি নতুন প্রস্তাব দেন। তার জন্য আরো ১০ মাস পর ২৫ অক্টোবর, ২০১৯ ওনাদের একটি আলাদা দলিল তৈরি করা হয়। সেই মোতাবেকি এরপর ওই প্রকল্পের কাজে অন্য গতি পায়।”

আর এবার আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের ১৫৬ তম বোর্ড মিটিংয়ে ঐ অন্য গতিকেই বেশ ঝড়ের গতিতে সমস্যায় পড়া দত্তদেরকে চরম দুর্গতি থেকে বাঁচাতে ময়দানে ফের নেমে পড়ল এডিডিএ। কবি দত্তর এ ডি ডি এ এখন ‘বিধান নগর মডেল’ কে সামনে রেখে সরাসরি সিদ্ধান্ত নিল দত্ত টাওয়ারের অন্যান্য সব দায় চাপলো এ ডি ডি এর ঘাড়ে। কিন্তু প্রকল্পের ৯৬ টি ফ্ল্যাট বিক্রি করে যা আয় হবে, তা সরাসরি যাবে দত্ত বিল্ডার্সদের পকেটেই। অর্থাৎ, সমস্যার সব দায় এ ডি ডি এর আর লাভের গুড় বেনাচিতির দত্তদের।

এটা কি এভাবে করা যায়?

দুর্গাপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা সিপিআইএম নেতা ভজন চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে গত সপ্তাহে একইদিনের সকালে এক রকম কথা বলে বিকেলে নিজেকে হঠাৎই সংশোধন করে বলেন, “এ ডি ডি এ একটি স্বশাসিত সংস্থা। ওরা ওদের প্রয়োজন মাফিক নিয়ম-নীতি বদলাতে পারে। প্রকল্পে কোনো বদল করা হলে দোষের কিচ্ছু নেই।” কেমন মাথা গুলিয়ে দেওয়ার মত যুক্তি নয় এটা? মানে যখন দরকার এডিডিএ বিড়ালকে রুমাল বলবে, আবার দরকার হলে রুমালকে বিড়াল বলবে। অথচ এই ভজনই সকালবেলায় প্রকল্পটির জন্য এডিডিএর হঠাৎ এমনভাবে নিজের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, “এ আবার কি কথা? এমন হয় নাকি? না না এমন কিছুতেই করা যায় না।” কিন্তু ঠিক আট ঘণ্টা কাটার আগেই ভজনের এই ভোল বদল কেন? বিশেষ করে এখনকার তৃণামূল কংগ্রেসের বোর্ডকে আগবাড়িয়ে সার্টিফিকেট দিতে ভজনের এত কিসের উৎসাহ? তাহলে কি বেনাচিতির দত্তদের সাথে তার গভীর সম্পর্কই এর আসল নেপথ্যে কারণ? দত্তরা বা সিপিএম এনিয়ে আর কোনো কথা বলতে চায়নি। এ প্রসঙ্গে দুর্গাপুরের এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ঠেস দিয়ে বলেন, “পিরিতির কাঁঠালের আঠা লাগলে কি আর সহজে ছাড়ে?” (চলবে)……….

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments