eaibanglai
Homeএই বাংলায়বীরভূমে 'আলীর' নেতৃত্বে বালি সিন্ডিকেট রাজের পর্দা ফাঁস

বীরভূমে ‘আলীর’ নেতৃত্বে বালি সিন্ডিকেট রাজের পর্দা ফাঁস

সংবাদদাতা, সিউড়িঃ- রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বহুদিন আগেই পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন সমস্ত জেলার জেলাশাসকদের যে কোনভাবেই রাজ্যের কোন নদ, নদী থেকে যেন অবৈধভাবে বালি পাচার না করা হয়। ঠিক সেই কারণে রাজ্য সরকার অবৈধ বালি খাদান বন্ধ করার উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ আইন আনেন। সেই আইন মোতাবেক রাজ্যের সব ব্লক, জেলা ও রাজ্যস্তরে ভিত্তি করে কমিটি তৈরি করে নজরদারি চালানো হবে। এরপরই তৈরি করা হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট এন্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের ২০২২ এ। এই আইন শুরু হওয়ার পরেই বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ কর্তারা নড়েচড়ে বসেন। শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড় অবৈধ বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূমে পড়ল না এই আইনের কোন ছিটেফোঁটা প্রভাবও। অভিযোগ, একশ্রেণীর দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক আধিকারিক ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ মদতে অবৈধভাবে বালি ও পাথর পাচার এখনো অব্যাহত রয়েছে বীরভূম জেলায়। অনুব্রতের পৃষ্ঠপোষকতায় না কি অবৈধ বালি কারবারে লিপ্ত একাধিক ব্যক্তিরা রাজ্য সরকারের কর ফাঁকি দিয়ে বেশ কয়েকশো কোটি টাকা রোজগার করেছেন বলে অভিযোগ। আর এই সবেরি মাথা নাকি হলেন অনুব্রত মণ্ডলই। গরু পাচার মামলায় সিবিআই তদন্তের মাঝেই এ প্রসঙ্গ নতুন করে উঠতে শুরু করেছে।

একটি সূত্র মারফত জানা গেছে অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ তিন জন ব্যবসায়ী ও প্রশাসনিক আধিকারিক সরাসরি এই সমস্ত অবৈধ ব্যবসা গুলি দেখাশুনা করতেন। আজ তারা সকলেই পলাতক হলেও প্রশাসনের এক আধিকারিক এখনো বহাল তবিয়তে সিউড়িতে কর্মরত। সিবিআইের হাতে অনুব্রত মণ্ডল গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই বালি কারবারিদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয় । রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে কূখ্যাত টুলু মন্ডল নামক এক অবৈধ বালি ও পাথর পাথর চালানকারী ব্যবসায়ী বলে একটি সূত্র জানায়। সূত্র মারফত জানা গেছে অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সেহগল হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার জবানবন্দি থেকে সিবিআই জানতে পারে বীরভূম জেলায় দীর্ঘ দিন কর্মরত জনৈক ‘আলী’ নামক এক পুলিশ আধিকারিক এখনও বহাল তবিয়তে এই অবৈধ বালি ও পাথর ব্যবসার ভাগবাটোয়ারা করেই চলেছেন । সিবিআই-এর একটি বিশেষ দল ইতিমধ্যেই বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তে ওই ‘আলী’ নামক পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ জোগাড় করার কাজে নেমে পড়েছে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে । একটি স্থানীয় সূত্র মারফত জানা গেছে ‘আলী’র ৫সাগরেদ এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা বীরভূম জেলা জুড়ে। গোপন সূত্র মারফত জানা গেছে বালি মাফিয়া সিন্ডিকেটের ‘অভিষেক’, ‘হুমায়ুন’, ‘পাঠক’, ‘রাজকুমার’ সহ আরো বেশ কয়েকজন এখনো বীরভূম জেলায় গভীর রাতে বালি পাচারের সাথে যুক্ত। সূত্র মারফত জানা গেছে অবৈধ বালি পাচারের কোটি কোটি টাকা দিয়ে বহুমূল্য জমিতে লগ্নি করছে এই ‘প্যাড পার্টির’ দল। ‘অভিষেক’ নামক অবৈধ বালি সিন্ডিকেটের এক সদস্য বীরভূম জেলা থেকে অবৈধ বালির কোটি কোটি টাকা তোলা আদায় করে সেই টাকা দিয়ে পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম বর্ধমানের একাধিক বহুমূল্য জমি কিনে বিনিয়োগ করছেন। অন্যদিকে অবৈধ বালি সিন্ডিকেটের সদস্য ‘রাজকুমার’ এই অবৈধ বালি টাকা দিয়ে কয়েক দিন আগে বীরভূমের দুবরাজপুর এর ওয়ার্ড নম্বর ২, রঞ্জন বাজার এলাকায় প্রাইম লোকেশনে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে একটি বহুমূল্য জমি কিনেছেন বলে অভিযোগ । অবৈধ বালি সিন্ডিকেটের আর এক সদস্য ‘হুমায়ুন’ অবৈধ বালি পাচারের তোলা আদায়ের কোটি কোটি টাকা তুলে দিচ্ছে এনে সিউড়িতে ‘আলী’র হাতে বলে অভিযোগ । এবং এই ‘আলী’ আবার সেই টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করছেন একাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতা থেকে প্রশাসনের ব্যক্তিদের মধ্যে বলে অভিযোগ।

এ বছর মার্চ মাসের শেষের দিকে ‘অল ইন্ডিয়া অ্যান্টি কোরাপশন অর্গানাইজেশন এর পক্ষ থেকে রাজ্যের উচ্চ প্রশাসনিক আধিকারিক সহ বালি পাচার কেন্দ্রিক রাজ্যের যে কমিটি রয়েছে তাদের সকলকে লিখিতভাবে এই ‘আলী’ ও তার সাগরেদদের কীর্তিকলাপ সম্পর্কে অবগত করেন। কিন্তু, সংস্থাটির অভিযোগ এখনো কোনরকম তদন্ত শুরু না হওয়ার ফলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি আবারও রাজ্যের অ্যান্টি কোরাপশন বিভাগ ও ভিজিলেন্স বিভাগকে ‘আলী’ ও তার সাগরেদদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গেছে ‘অল ইন্ডিয়া অ্যান্টি কোরাপশন অর্গানাইজেশন এর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই মহামান্য কলকাতা আদালতে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে এই অবৈধ বালি কারবারিদের বিরুদ্ধে।

একটি বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গেছে বীরভূমের ওই পুলিশ আধিকারিক যিনি এটি পরিচালনা করতেন সেই ‘আলী’র নির্দেশেই একটি মোবাইলে এসএমএস মারফত অবৈধ বালি কারবার চালানো হতো। আদায় হত কয়েক কোটি টাকার। অবৈধ বালিগাড়ি গুলির থেকে আদায় করতো প্রতি গাড়ি পিছু ২৫০০ টাকা ‘প্যাড পার্টির’ দল। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সহজেই ওই মোবাইল নাম্বার ঘেঁটে বার করা যাবে কোথা থেকে এবং কার নামে ওই মোবাইল নম্বরটি নথিভূক্ত এবং ওই মোবাইলের সমস্ত কল ডিটেলস ও এসএমএস এর তথ্য সহজেই তদন্তকারী আধিকারিকরা পেয়ে যাবেন। অন্য একটি সূত্র মারফত জানা গেছে যে বীরভূমের এই অবৈধ বালি পাচারের করার জন্য এইরকম ভুতুড়ে বহু মোবাইল মৃত ব্যক্তির নামে অ্যাক্টিভেট করে রাখা হয়েছে। তৎসহ বিভিন্ন প্রতিবাদী কন্ঠকে হুমকি জন্য ইতিমধ্যেই বীরভূম জেলা থেকে পাঁচটি স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গেছে। অবিলম্বে ভারত সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের আধিকারিকরা এই স্যাটেলাইট ফোনের তদন্তে নামলে ধরা পড়বে এদের গতিবিধি। বীরভূম জেলার ওই পুলিশ আধিকারিক ‘আলী’র বিরুদ্ধে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ যে তিনি বিগত ১০ বছর ধরে বীরভূম জেলার বাইরে কোন পোস্টিং পাননি। তিনি নাকি জেলার এসপি থেকে কনস্টেবলের কোথায় কার পোস্টিং হবে এবং জেলায় কোথায় কোথায় কি কি অবৈধ কারবার চলবে তা নির্ধারণ করতেন বলে অভিযোগ। এই ‘আলী’ এতটাই প্রভাবশালী যে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তাদেরকে অবৈধ ভাবে মিথ্যা গাঁজা, ড্রাগস, নারী পাচার, অস্ত্র কারবার ও ডাকাতি সহ মার্ডার কেসের নথিভুক্ত করে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় এবং জেল খাটানো হয় প্রতিবাদী মুখ গুলিকে। বীরভূম জেলার এমনই বেশ কয়েকশো মানুষজন এই ‘আলী’র অত্যাচারে অত্যাচারিত, এতটাই করুন অবস্থা যে সেই সব ব্যক্তিদের তাদের বেলবন্ড দেওয়ার জন্য ২০০০ টাকা জোটে না ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments