সংবাদদাতা, আসানসোল:- পানীয়জলের জন্য কুয়ো খুঁড়তে গিয়ে মিললো কয়লার ভান্ডার। আসানসোল শহরের অদূরে ১৯ নং জাতীয় সড়কের একেবারে লাগোয়া বেসরকারি আসানসোল ইঞ্জিনিয়ার কলেজে মিলেছে এই কালো হিরের সন্ধান। স্বাভাবিক ভাবেই কুয়ো খুঁড়তে গিয়ে কয়লা মেলায় প্রশাসনিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। গোটা বিষয়টি কলেজের তরফে সরকারি কয়লা উত্তোলনকারী সংস্থা ইসিএল বা ইষ্টার্ণ কোলফিন্ড লিমিটেডকে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ, পশ্চিমবঙ্গের এই আসানসোল এলাকায় একটা সময় অনেক কারখানা ছিলো। যার মধ্যে কয়েকটি চলছে। কিছু কারখানা বহু বছর ধরে কোনো না কোনো কারণে বন্ধ হয়ে আছে। রাজধানী শহর কলকাতার পর আসানসোল দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। আসানসোল রানিগঞ্জ এলাকা শিল্প ছাড়াও, কয়লা উৎপাদনের জন্যও পরিচিত। সারা দেশে প্রথম কয়লা আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৭৭৪ সালের ১১ আগস্ট। ৪০ ফুট গভীর এবং ৯ ফুট ব্যাসের কয়লা খনি সালানপুর, আসানসোল ছাড়াও রানিগঞ্জে আরও পাঁচটি কয়লা খনি খোলা হয়েছিল। সেই সময়ে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর আধিকারিক সামনার এবং হিটলি ছাড়াও তার বন্ধু র্যাডফোর্ড সবই বিনিয়োগ করেছিলেন। গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের কাছ থেকে ১৮ বছরের লিজে এই খনি থেকে কয়লা খনির অনুমতি নেন। শর্ত ছিল, উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশ রাজস্ব হিসেবে দেওয়া হবে। সেই খনির কাজ শুরু হওয়ার পর, ১৭৭৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর উৎপাদিত কয়লার একটি নমুনা পরীক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে পাওয়া রিপোর্টে সেই কয়লার মান ” নিম্নমানের ” বলা হয়। এরপর ব্রিটিশ সরকার সেই কয়লা নিতে অস্বীকার করে। এই রিপোর্টের ফলে হিটলির ব্যাপক ক্ষতি হয়। কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তারা দেউলিয়া হয়ে যায়। এর পরে, ১৮১৪ সালে আবার কয়লা অনুসন্ধান শুরু হয়। ইঞ্জিনিয়ার উইলিয়াম জেমস নামে একজন অফিসার হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। তিনি ১৮১৫ সালে হিটলির সংস্থার পরিত্যক্ত কয়লা খনি আবিষ্কার করেছিলেন।
জেমসের রিপোর্ট অনুসারে, রানিগঞ্জের দামালিয়াতেও একটি পরিত্যক্ত খনি ছিল। যেখান থেকে কয়লা উৎপাদন শুরু হয়েছিল। তার পরে আসানসোলে একের পর এক বহু ভূগর্ভস্থ এবং ওপেন কাস্ট কয়লা খনি খোলা হয়েছিল। যার মধ্যে কিছু এখনও চলছে। বেশ কয়েকটি বর্তমানে কোনও না কোনও কারণে বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, পানীয়জলের অভাব মেটাতে আসানসোল মুল শহর থেকে ৪/৫ কিলোমিটার দূরে আসানসোলের ১৯ নং জাতীয় সড়কের জুবিলি মোডে আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে প্রশাসন একটি কুয়ো খোঁড়ার কাজ শুরু হয়। কলেজে সেই কুয়ো ২০ থেকে ২৫ ফুট খোঁড়ার পরে কয়লার ভান্ডার মেলায় কলেজ কতৃপক্ষ বিস্মিত ও চিন্তিত। কলেজ ক্যাম্পাসে এত বিশাল কয়লা মজুদ থাকার পর কলেজের ভবিষ্যৎ কি হবে? কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে এই কয়লার মজুদ বার করার পরিকল্পনায় ইসিএল কি কোন পদক্ষেপ নেবে? কয়লার এই ভান্ডার বার করতে কলেজটি কি অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হবে? এমন নানা প্রশ্ন মাথায় নিয়ে কলেজ কতৃপক্ষের মাথায় এসেছে।
কলেজ ক্যাম্পাসে একটি কুয়ো খোঁড়ার সময় কয়লা পাওয়ার খবর শুনে আসানসোল পুরনিগমের একটি দল আসে। তারা কুয়োটি খতিয়ে দেখেন। তারা কলেজ কতৃপক্ষের কাছে জানতে চান, কুয়ো খোঁড়ার সময় কয়লা পাওয়া গেছে, এই বিষয়টি কি তারা ইসিএলকে জানিয়েছে? এদিকে, ইসিএলের এক আধিকারিক বলেন, ঠিক কি পাওয়া গেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।