এই বাংলায় ওয়েব ডেস্কঃ- আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে কয়লা লুঠ করার অভিযোগে দুই দুষ্কৃতিকে গ্রেফতার করল পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশ। গত ২৪ মার্চ রাত্রে পাণ্ডবেশ্বরের খোট্টাডিহি খোলামুখ খনির এসএস সাইডিং এলাকায় স্থানীয় জীতেন্দ্র সাউ, বিকি পাসোয়ান ও লক্ষ্ণণ ধারি নামে তিনজনের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢোকে বলে অভিযোগ । সে সময় ওই সাইডিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন লালজিৎ ধোবী সহ অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীরা। খোট্টাডিহি খনির ম্যানেজার সঞ্জয় রাই পাণ্ডবেশ্বর থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, “ওই সশস্ত্র দুষ্কৃতিদল কর্তব্যরত ইসিএল কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের ভয় দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ কয়লা লুঠ করে নিয়ে যায়।” ওই অভিযোগ পত্র পাওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশ। দুষ্কৃতিরা সকলেই পাণ্ডবেশ্বর থানার এবি পিট যোগশালা অঞ্চলের বাসিন্দা বলে গোপন সূত্রে জানতে পারে পুলিশ। গত কয়েকদিন ধরে তল্লাশী চালানোর পর জীতেন্দ্র সাউ ও বিকি পাসোয়ানকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয় পুলিশ। ধৃত দুই দুষ্কতিকে শুক্রবার দুর্গাপুর আদালতে পেশ করা হলে তাদের পুলিশী হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
প্রশ্ন উঠেছে, খনি এলাকায় এত আগ্নেয়াস্ত্র আসছে কোথা থেকে? কাদের আশীর্বাদী হাত রয়েছে ওইসব দুষ্কৃতিদের মাথায় ? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশের একটি মহলের প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া এতখানি দুঃসাহস কখনোই দেখাতে পারত না দুষ্কৃতিরা। এতদিন চোরাগোপ্তা ভাবে কয়লার চোরা চালান ও পাচার চালানো হতো। তবে এই ভাবে সরাসরি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে খোলা মুখ খনিতে ঢুকে কয়লা লুঠের ঘটনা নজির বিহীন বলেই মনে করছেন এলাকাবাসী। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন এত আগ্নেয়াস্ত্রের সরবরাহ করছে কারা ? তবে কি কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে এই বেআইনী কয়লা কারবারের পিছনে ? কোথায় কোন কারখানায় যাচ্ছে এত বিপুল পরিমাণ চোরাই কয়লা ?
একটি বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গেছে, প্রাক্তন কয়লা মাফিয়া মৃত রাজু ঝায়ের অবৈধ কয়লা চোরা চালান সিন্ডিকেটের সাগরেদদের মধ্যে বেশ কয়েকজন যেমন, পাপ্পু, লোকেশ, রণবীর, মইজরুল, রঞ্জিত, সাজিদ,পার্থ, লাটুয়া,ছোট্টু, সহ আরো বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতি মিলে একটি অবৈধ সিন্ডিকেট তৈরি করে কয়লার চোরা চালান চালিয়ে যাচ্ছে শিল্পাঞ্চলে এই নির্বাচনের সময়ও। পাণ্ডবেশ্বর থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া জীতেন্দ্র সাউ ও বিকি পাসোয়ান নামের ধৃত দুষ্কৃতিরা এদেরই সিণ্ডিকেটের অংশ কিনা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ বলে জানা গেছে।
এই ব্যাপারে বিজেপি নেতা ও পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক জীতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, “বেআইনী কয়লা বন্ধ হলে, বন্ধ হয়ে যাবে শিল্পাঞ্চলের তৃণমূলের সমস্ত পার্টি অফিস। কারণ বেআইনী কয়লাই হল শাসকদলের একমাত্র লাইফ লাইন।”
এই বিষয়ে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতারা লোকসভা নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও, স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা জানান, “ইসিএল কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ একটি সংস্থা। এই সংস্থার সম্পত্তির রক্ষা করার জন্য দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ সিআইএসএফ বাহিনী। তারপরেও তৃণমূল কংগ্রেস দলের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদেরকে ‘ধোয়া তুলসী পাতা’ মনে করছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। এক কথায় বলতে গেলে ‘চোরের মায়ের বড় গলা’।” ওই নাম প্রকাশে অনচ্ছুক নেতা আরো অভিযোগ করেন, “যেসব দুষ্কৃতীরা কয়লার চোরা-চালানের সঙ্গে যুক্ত, খোঁজ নিয়ে দেখুন তারা ওয়াশিং মেশিন নিয়ে থাকা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের মদত পুষ্ট। প্রকাশ্য সভায় এই দুষ্কৃতিদের বেশ কয়েকজনকে ওয়াশিং মেশিন নিয়ে থাকা ওই রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতাদের সাথে ওঠা বসা করতে দেখা গিয়েছে বিগত দিনে। তৃণমূল কংগ্রেস দল কখনো এই দুষ্কৃতিদের আশ্রয় বা সংরক্ষণ দেয় না। বিগত দিনে রাজ্য সরকারের কড়া পদক্ষেপ এর ফলে কয়লার চোরা-কারবার এর সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা এলাকার ছাড়া হয়েছে ও বেশ কয়েকজন জেলও গেছে। যদি আবারো এমন কোন কয়লার চোরা চালানের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।”